শনিবার ১৭ মে ২০২৫
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
কিছু সংস্কারের পর নির্বাচন করা যেতে পারে
আবুল কাসেম ফজলুল হক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫, ১:৪৬ এএম |

 কিছু সংস্কারের পর নির্বাচন করা যেতে পারে
১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন বা পরিমার্জন করার বিধান আছে। অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে তা সংশোধন করবে বা কীভাবে করা হচ্ছে সেটাই দেখার বিষয়। বর্তমানে যে সংবিধান আছে তা আগে বাংলায় তৈরি করে তার পর ইংলিশ করা করেছে। কিন্তু আমরা বাস্তবে জানি যে, ইংরেজি থেকে বাংলায় করা হয়েছে। এতে বলা আছে, সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে তার জন্য কিছু নিয়মাবলি বা বিধিবিধান আছে। সেই বিধান অবশ্যই মেনে চলা উচিত। রাষ্ট্রের নাম করা হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
এ কথাটাও শুদ্ধ নয়। এখানে হওয়া উচিত ছিল গণপ্রজাতান্তিক বাংলাদেশ। সংবিধানে এরকম অনেক কিছুই ভুল রয়ে গেছে। সংবিধান যখন প্রণয়ন করা হয়েছে তখন থেকেই আমরা বলে আসছি যে, এগুলো পরিবর্তন করা দরকার। সংবিধানে প্রজাতন্ত্র শব্দটি আনার কী দরকার? এখন কি কোথাও প্রজা বা জমিদার আছে?  আমরা গণতন্ত্র চাই। কাজেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকার হলে আমাদের ভালো হয়। আর বেশি বুদ্ধি নিয়ে যদি রিপাবলিকে চলে যায় তা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে না। ডেমোক্র্যাটিক হলে কি রিপাবলিকের দরকার আছে?
সংবিধান একটু পরিবর্তন করে জাতীয় নির্বাচন করা যেতে পারে। নির্বাচনবিধি তৈরি করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা যেতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু পরিবর্তন করা দরকার ঠিক ততটুকু করলেই হবে। এর বেশি প্রয়োজন নেই। নির্বাচনের আগে সংবিধান কম পরিবর্তন করাই ভালো। যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন তাদের কাছে শর্ত থাকবে যে, তারা ছয় মাস বা এক বছরের মধ্যে আইন প্রণয়ন করে সংসদে তা পাস করে নেবেন। অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের ব্যাপক পরিবর্তন করতে পারে না। তাদের সেই এখতিয়ার নেই। এটি নির্বাচিত সরকার এসে পরিবর্তন করবে।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিত কী তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য কী তা ধীরে ধীরে হয়তো বোঝা যাবে। তারা কী করতে চায় তা আগে বুঝতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি খুবই অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কারণে বিষয়টা এমন হচ্ছে। এখন রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর হস্তক্ষেপ করছে। এটা মোটেও ঠিক নয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে রাজনৈতিক দল  ক্ষমতায় এলে এটার উন্নতি হবে। বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে যেমন- আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ বামপন্থি দলগুলোর আগে নিজেদের সংস্কার করা দরকার। রাষ্ট্রীয় সংবিধান পরিবর্তন করার আগে নিজেদের দলীয় সংস্কার প্রয়োজন। আগে নিজেদের রাজনৈতিক দলের  পরিপত্র তৈরি করতে হবে। যদি তা দেশবাসী সাদরে গ্রহণ করে তাহলে হয়তো রাজনৈতিক দলগুলো অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
এখন দেশে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোরও নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের রাজনীতিতে একটি রীতি আছে। কেউ একটু যোগ্যতাসম্পন্ন হলেই তিনি আর কাউকে মানতে চান না। সেই ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক হতে চান। একজন লোক দুটো পদ নিলেই রাজনৈতিক দলের বিপর্যস্ত অবস্থা হয়ে যায়। একদল ভেঙে ৪৪টি রাজনীতিক দল তৈরি হয়েছিল এমন নজির আছে বাংলাদেশে। একটি রাজনৈতিক দল ভিন্নতার কারণেই ভেঙে যায়। যে রাজনৈতিক দলের মধ্যে আদর্শ নেই, তারা কীভাবে আদর্শ তৈরি করবে। নিজেদের মধ্যে আদর্শ না থাকলে দেশে কীভাবে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করবে? এক কথায় বলা যায়, রাজনীতির মধ্যে রাজনীতিবিদরা আর নেই। সরকার উৎখাত ও ক্ষমতা দখল করাই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের মূল কার্যক্রম।
এখন যে ধারায় দেশ চলছে তাতে নির্বাচন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো কী করে তা দেখলে কিছুটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আমার মনে হয় দেশকে ভালোর দিকে নিয়ে যেতে হলে সংবিধান নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে। খুব উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি না করে খুব স্বাভাবিক অবস্থায় রাখলে এখন ভালো হবে।
দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন কবে হবে তার নিশ্চয়তা এখনো নেই। কারণ হলো- প্রচলিত অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে, তারা নিজেদের সংস্কার কি কেউ করেছে? একটি দল এখন অচল হয়ে গেছে। বিএনপি নিজেদের দলের মধ্যে কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। তারা নিজেদের দলের কি কোনো পরিবর্তন করেছে বা কোনো সংস্কার করেছে? সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দলের মাধ্যমেই দেশের সবকিছু হওয়া উচিত। দেশে দল আছে, রাজনীতিও আছে। ইসলামকে আদর্শ রেখে তারা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
আধুনিককালে দল ছাড়া কোনো সরকার গঠন হয় না। রাজনীতি যখন সুস্থ পথে যায় না তখন কোনো কোনো সময় মিলিটারি দ্বারা দেশ শাসন হয়।
এখন যেভাবে আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করা হয়েছে তার কতটুকু বৈধতা আছে, সেটা দেখার বিষয়। সব দলকে সুযোগ-সুবিধা দিয়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা উচিত। তাহলে সেটা হবে দেশের ও জনগণের কল্যাণের জন্য উত্তম। বাংলাদেশের রাজনীতি কি খুব আদর্শমান পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় না? স্বাধীনতা অর্জনের পর ৫৪ বছর হয়ে গেছে, দেশে শুধু অনাচার ও অত্যাচারই দেখলাম। মাঝে মাঝে বিদেশিরা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক মার্জিত কথা বলে যান। এখন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি সপ্তাহে অথবা ১৫ দিনে অন্তত একবার বাংলাদেশকে বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছে। এসবেও অনেক অসুবিধা রয়েছে। অন্য কোনো দেশ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলতে পারে না। এ বিষয়গুলো পত্রপত্রিকায় আসছে না কেন?
বাংলাদেশের রাজনীতিকে উন্নতির দিকে নিতে হলে প্রথমত দেশে একটি ভালো পত্রিকা থাকা দরকার। যে পত্রিকা দেশের কল্যাণে ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সংবাদ করবে। এখন তো প্রিন্ট মিডিয়া ও মাল্টিমিডিয়া সব একই নীতিতে চলে। গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সব সরকারই করে। আমরা যদি গত ১ হাজার বছরের ইতিহাস দেখি, যত ভালো শাসকই হোক না কেন, তাদের মধ্যেও অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে এবং তারা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। তার পরও অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশে রাজনীতি উন্নতির কোনো পথ উন্মোচন করে না, তাদের আছে শুধু ব্যর্থতার বিবরণ।
আধুনিক রাষ্ট্রে নির্দিষ্ট ভূভাগ ও জনগণ থাকবে। এ জনগণের মাধ্যমেই নির্বাচিত সরকার তাদের কল্যাণ সাধন করবে। তাই দেশের ভূভাগ বা জাতির কোনো বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে হলে জনগণের মাধ্যমেই নিতে হবে। এসব বিষয় রাজনৈতিক দল বুঝতে চেষ্টা করে না। তাহলে এ দেশের রাজনীতি ভালোর দিকে যাবে কীভাবে? গত ৫৪ বছরে কোনো রাজনৈতিক দলই উন্নতি করতে পারেনি। একদল আরেক দলের দোষারোপ করে যাচ্ছে। সব রাজনৈতিক দলেরই একই অবস্থা।
অন্তর্বর্তী সরকার অনেক চেষ্টা করছে দেশে বিভিন্ন বিষয় সংস্কার করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রফেসর ড. ইউনূস স্পষ্ট করে কোনো কিছু বলছেন না। দেশে যারা চক্ষুষ্মান ব্যক্তি তারা বুঝতে পারেন, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, আইএমএফ  অনেক বেশি হস্তক্ষেপ করছে। কেন বিদেশিরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আদেশ বা উপদেশ দেবে? তারা কি ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় গিয়ে উপদেশ দিতে পারবে? এখনকার যুগ তো আর আগের মতো নেই। এখন তারা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। বর্তমানে দেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি অনেকটা বদলে গেছে। দেশে ভালো রাজনীতিবিদ গড়ে উঠতে হবে এবং তাদের সচেতন থাকতে হবে। হঠাৎ করে বিরাট পরিবর্তন করা যাবে তেমন না। পরিবর্তন করতে হলে ধাপে ধাপেই পরিবর্তন করে এগিয়ে যেতে হবে। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের মধ্যেও সদিচ্ছা প্রয়োজন, তাহলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।
লেখক: বাংলা একাডেমির সভাপতি ও রাষ্ট্রচিন্তক














সর্বশেষ সংবাদ
বিএনপির রাজনীতি চলে আওয়ামী লীগের টাকায়
‘আসিফ নজরুল স্যার দায় এড়াতে পারেন না’
সড়কে পড়েছিল ‘৪৫ লাখ’ টাকা
‘নির্বাচনের পূর্বেই কুমিল্লা নামে বিভাগ হবে’
মুরাদনগরে গোমতী নদীর তীরথেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন
কুমিল্লায় মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
কুমিল্লায় ছাত্রদলের পদবঞ্চিদের বিক্ষোভ, সাংবাদিককে ছরিকাঘাত
এ সরকারের হাতে দেশের ভূখণ্ডনিরাপদ নয়
কুমিল্লায় ঘুষ ছাড়াই নিয়োগ পেলেন ৭৫ কনস্টেবল
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২