দেশে রাজনীতি থাকবে, দাবিদাওয়া থাকবে, আন্দোলন-সংগ্রামও থাকবে। কিন্তু সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থকে। বিবেচনায় রাখতে হবে দেশের ধারাবাহিক উন্নয়নকে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) বলেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ফলে দেশের অর্থনীতিতে প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিদিনই বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণ। রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভবনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ফিকি সভাপতি জাভেদ আক্তার এই তথ্য তুলে ধরেন। এটি নিঃসন্দেহে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানার জন্য এক বড় ধরনের আঘাত হয়ে এসেছে। অবশ্যই দেশের অগ্রযাত্রাকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। জরুরি পণ্য পরিবহন পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সংঘাত-সহিংসতা ও নাশকতা শুরু হয়। নাশকতা ঠেকাতে কারফিউ জারি করা হয়।
ডাটা সেন্টার এবং বিভিন্ন স্থানে ফাইবার অপটিক কেবল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে রপ্তানিমুখী শিল্প, ব্যাংকিং, বীমা, লজিস্টিকস, অবকাঠামো, টেলিকম, ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং সোশ্যাল কমার্সের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা জানান, সীমিত অনলাইন এবং ফিজিক্যাল সংযোগের সঙ্গে ধীরে ধীরে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সম্পূর্ণ কার্যক্রম এখনো ফিরে আসেনি।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ কোনো রকমে কাজে লাগানো যাচ্ছে। শিল্পের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য সম্পূর্ণ ব্রডব্যান্ড সংযোগ এবং পরিবহন ও যাতায়াত সুবিধা প্রয়োজন। ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্দর থেকে পণ্য খালাস এবং শাটডাউনের সময় কাজ করতে না পারায় অতিরিক্ত বিলম্ব শুল্কসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান নানা বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, প্রতিদিনই কারফিউ শিথিল হচ্ছে। তিনি আশা করেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে হয়তো কারফিউ শেষ হয়ে যাবে। সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের আরো বলেন, ইন্টারনেটের সাধারণ ব্যবস্থা যদি নষ্ট বা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ব্যবসায়ীদের জন্য ‘স্ট্যান্ডবাই সিস্টেম’ করা যায় কি না এমন প্রস্তাব ব্যবসায়ীরা দিয়েছেন। এটা সত্য, ইন্টারনেট ছাড়া কোনো ব্যবসা বর্তমানে সম্ভব নয়। তিনি জানান, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। ফলে ক্রমেই বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। বেকারত্বের অবসানে দেশে ব্যবসা, শিল্প-কলকারখানার প্রসার ঘটাতে হবে। এ জন্য অনুকূল পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। এ ধরনের নাশকতা ও নৈরাজ্য দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহ করবে। তাতে বেকারত্ব আরো বাড়বে। দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে। নৈরাজ্য বাড়বে। আমরা আশা করি, সব কিছু খুব দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। দেশ আবার দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।