১৯৮৯ সাল থেকে নিয়মিতভাবে মালয়েশিয়ায়
বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো হচ্ছে। প্রায় আট লাখ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন
পেশায় কর্মরত। এ ছাড়া সেখানে লাখ দুয়েকের মতো বাংলাদেশি অবৈধভাবে অবস্থান
করছেন, যাঁরা সাধারণত পর্যটন ভিসায় বা অন্য উপলক্ষে কয়েক দিনের ভিসায়
মালয়েশিয়ায় এসে থেকে গেছেন বা বেশি পারিশ্রমিকের লোভে কর্মরত স্থান থেকে
পালিয়ে অন্যত্র কাজ করছেন। আবার এর ভিন্নচিত্রও আছে।
মালয়েশিয়ায় কাজ করতে যাওয়া অনেক শ্রমিক প্রতারণারও শিকার হয়েছেন। মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও কাজ মেলেনি।
গত
৩১ মে বাংলাদেশসহ কর্মী জোগানদাতা ১৪টি দেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া
বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে একটি সিন্ডিকেট বা চক্রের নির্মম দুর্নীতির
চিত্র ফুটে ওঠে।
সম্প্রতি ঢাকায় কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাব
সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকায় মালয়েশীয় হাইকমিশনার হাযনাহ মো. হাশিম এমন
আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঘিরে সক্রিয় সিন্ডিকেটগুলো
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সম্প্রতি পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী
পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হয় না।
বাংলাদেশি কর্মীদের পছন্দের জায়গা
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ বন্ধ হলেও মালয়েশিয়া
গমনেচ্ছু কর্মীদের শেষ সময়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। মে মাসের ৩০ ও ৩১
তারিখেও অনুমোদন দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০২২ সালের ৮ আগস্ট থেকে
চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৩ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া
যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে চার
লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জন। অর্থাৎ ৩৩ হাজার ৩১ জন কর্মীর অনুমোদন থাকলেও ছিল না
ছাড়পত্র। অন্যদিকে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো
(বিএমইটি) মহাপরিচালক বলেছেন, তাঁদের কাছে আর কোনো ছাড়পত্রের আবেদন জমা
নেই। অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় কর্মী না পাঠানোর দায়
মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপাচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন
বায়রা।
তবে বায়রার চাপানো এই দায় মেনে নেয়নি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
ওদিকে
ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মালয়েশিয়ায় জানিয়েছেন কর্মী পাঠানোর
সময় আর বাড়ছে না। তবে না যেতে পারা কর্মীরা যাতে যেতে পারেন, বিষয়টি
বিবেচনা করতে পুনরায় হাইকমিশনারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও
বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী। জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম
দিনেই সংসদে ওঠে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ
সম্পূরক প্রশ্নে জানতে চান, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর
ব্যর্থতা কার। এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান,
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে কী সমস্যা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ
ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমরা মনে করি, বিষয়টি তদন্ত
করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সিন্ডিকেট, দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে সরকারের উচ্চ
পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির
মধ্যে রাখতে হবে।