শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
জীবনবোধ ও জীবনদর্শন
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪, ১২:৩১ এএম |


 জীবনবোধ ও জীবনদর্শন
৯৪
দি মার্চেন্ট অব্ ভেনিস নাটকে কোনও নায়ক নেই, এটির প্রধান চরিত্র নায়িকা। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের অনেক কমেডিরই মুখ্য চরিত্র মেয়ে; ভায়োলা, রোজাল্ডি, বিয়েট্টিস প্রত্যেকেই পোর্শিয়ার মতো তীক্ষèধী, ব্যক্তিত্বময়ী, সুরসিকা, সাহসিনী। কিন্তু ভেনিসের সওদাগর নাটকের বৈশিষ্ট্য তার ভিলেন-এর চরিত্রে। শেষ পর্যন্ত নায়িকা তাকে নাস্তানাবুদ করে বটে, কিন্তু প্রায় পুরো নাটক জুড়ে নায়িকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সে আমাদের মনোযোগ কাড়ে। না, তার চরিত্রে প্রশংসনীয় কোনও গুণ নেই; সে সংকীর্ণহৃদয়, প্রতিহিংসাপরায়ণ, নিষ্ঠুর, অর্থগৃধু। কিন্তু তার ভিতরে এমন এক অগ্ন্যুদগারী সম্ভাবনা বিদ্যমান যা কোনও রোম্যান্টিক কমেডিতে অপ্রত্যাশিত, এবং যা থাকার ফলে প্রথম যুগের শেক্সপিয়রী অনেক অভিনেতা শাইলককে “কৃষ্ণ লিয়ার” রূপে প্রকটিত করতেন। পুরো নাটকে শাইলককে মাত্র পাঁচটি দৃশ্যে দেখা যায়। কিন্তু ১৮১৪ সালে এই চরিত্রে এডমন্ড কীনের হৃদয়গ্রাহী অভিনয়ের কাল থেকে এ পর্যন্ত বহু প্রথম শ্রেণীর অভিনেতাই শাইলককে ভেনিসের সওদাগর নাটকের প্রধান চরিত্র হিসেবে উপস্থাপিত করেছেন। এই তালিকায় পড়েন ম্যাক্রেডি, বুথ, আরভিং, ট্টি, ফোরব্স্ রবার্টসন থেকে শ্রোয়েডার, শিল্ড্ক্রাউট, গীলগুড, উলফিট, রেডগ্রেভ এবং পিটার ও টুল।
শাইলককে এই প্রাধান্যের কারণ কী? সচরাচর খ্রিস্টধর্মীরা ইহুদীদের যে রকম ঘৃণা এবং সন্দেহের চোখে দেখে এই নাটকের বিভিন্ন চরিত্র শাইলককে তা থেকে আলাদাভাবে দেখেনি। শাইলককে সুদখোর মহাজন; সে “খ্রিস্টান নাগরিকদে বিরুদ্ধে  চক্রান্তকারী বিধর্মী”; “মানুষের চেহারায় সে শয়তান”; সে “বেজন্মা কুকুর”; “উপোসী নেকড়ের মতো হিংস্র”; “মাগনা ফাঁসির দড়িই তার যোগ্য পুরষ্কার।” এমন কি তার মেয়ের চোখেও তাদের বাড়ি নরকের তুল্য। সেই মেয়ে যখন তার খ্রিস্টান প্রেমিকের সঙ্গে অলঙ্কার, টাকাকড়ি নিয়ে পালিয়ে গেল, তরুণ শাইলকের দুঃখ মেয়ের জন্য ততটা নয় যতটা অলঙ্কার ও টাকাকড়ির জন্য। শাইলকের দুঃখের খবর আমরা প্রথমে সালেরিও-সোলানিও ইয়ার-যুগলের কাছ থেকে পাই বটে (২:৮), কিন্তু তার পরে একটি অবিস্মরণীয় দৃশ্যে (৩:১) স্বয়ং নাট্যকার শাইলকের মুখ দিয়েই কথাটা বলিয়েছেন। পলাতকার কোনও খোঁজ না পেয়ে শাইলক আর্তনাদ করে উঠেছে: ও ড়িঁষফ সু ফধঁমযঃবৎ বিৎব ফবধফ ধঃ সু ভড়ড়ঃ, ধহফ ঃযব লববিষং রহ যবৎ বধৎ; ড়িঁষফ ংযব বিৎব যবধৎং'ফ ধঃ সু ভড়ড়ঃ, ধহফ ঃযব ফঁপধঃং রহ যবৎ পড়ভভরহ.
নাটকের অন্য সব দিক বাদ দিয়েও শুধু এই দৃশ্যটি থেকে সন্দেহ হয় যে তাঁর সমকালের খ্রিস্টান দর্শকদের মতো শাইলকের স্রষ্টাও ইহুদি-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত ছিলেন না। পরের মুখ থেকে নয় শাইলকের আচরণের মারফতই স্বয়ংসিদ্ধভাবে আমাদের জানানো হয় ইহুদিরে এমনই জাতিগত চরিত্র যে ইহুদি বাপের কাছে মেয়ের চাইতে টাকাকড়ির দাম ঢের বেশি। অতঃপর নাটকের খ্রিস্টান পাত্র-পাত্রীদের মতো আমরাও যে শাইলককে ঘৃণা করব এটা স্বাভাবিক।
কিন্তু ভেনিসের সওদাগর নাটকের সংগঠনে অন্তত এমন দুটি বৈশিষ্ট্য আছে যার ফলে শাইলক পুরোপুরিভাবে খ্রিস্টানকল্পিত ব্যঙ্গচিত্রে পর্যবসিত হয় না। প্রথমত, শেক্সপিয়র ভেনিসের মানসলোকের যে ছবি এঁকেছেন তার নৈতিক মান শাইলকের চাইতে বিশেষ উঁচু নয়; শাইলকের আচরণ দেখে ভেনিসের লোকেরা যখন আহত নীতিবোধের ভাণ করে তখন নাট্যকার তার দ্বারা প্রভাবিত হন না। নাটকের প্রথম দৃশ্যই আমরা দেখি বন্ধুপরিবৃত সওদাগর অ্যান্টনিওকে। এই বন্ধুরা প্রত্যেকেই পরগাছা; তারা সওদাগরের মোসাহেবি করে ফূর্তিতে দিন কাটায়; বেজার, বিমর্ষ হুজুরকে চাঙ্গা করে তোলবার জন্য তারা পরস্পরের প্রতিযোগী। এদের মধ্যে সোলানিও এবং সালেরিও রীতিমতো ধর্ষকামী; শাইলককে ক্রমাগত খুঁচিয়েই তাদের সুখ। তারা যে অ্যান্টনিওর শুভার্থী তাও নয়। অ্যান্টনিওর জাহাজডুবির খবর তাদের কাছে রসিকতার বিষয়; তারাই গায়ে পড়ে শাইলককে সে কথা শুধোয়; আবার তারাই শাইলককে উসকানি দিয়ে বলে, কী কাজে লাগবে অ্যান্টনিওর মাংস। গ্র্যাশিয়ানো বেকার, বকবক করায় ওস্তাদ; খিস্তিতে, চিল্লাচিল্লিতে সুনিপুণ; আবার অন্যের ঘাড় ভেঙে টাকা রোজগারের ব্যাপারে বেশ সেয়ানা। লরেঞ্জো শুধু যেসিকাকেই ফোসলায় না, তার বাবার টাকাকড়ি হাতানোর দিকেও নজর রাখে। এবং ব্যাসানিও-পোর্শিয়ার খাতিরে যাকে এই কাহিনীর নায়ক বলা চলে-কী তার গুণপনা! উড়নচ-ে এই যুবক আগেই সওদাগর বন্ধুর কাছ থেকে বিস্তর টাকা নিয়ে উড়িয়েছে; এখন সে আর এক ধরনের জুয়াখেলার জন্য তিন হাজার ‘টাকা’ ধার চায়। একটি প্রভূত বিত্তশালিনী মহিলাকে সে জয় করতে আগ্রহী; এই টাকাটা পেলে সেই চেষ্টা সে করতে পারে।
ওহ ইবষসড়হঃ রং ধ ষধফু ৎরপযষু ষবভঃ,...
অহফ সধহু ঔধংড়হং পড়সব রহ য়ঁবংঃ ড়ভ যবৎ,
ঙ সু অহঃড়হরড়, যধফ ও নঁঃ ঃযব সবধহং
ঞড় যড়ষফ ধ ৎরাধষ ঢ়ষধপব রিঃয ড়হব ড়ভ ঃযবস,
ও যধাব ধ সরহফ ঢ়ৎবংধমবং সব ংঁপয ঃযৎরভঃ
ঞযধঃ ও ংযড়ঁষফ য়ঁবংঃরড়হষবংং নব ভড়ৎঃঁহধঃব. (ও, র, ১৬১-১৭৬)
পোর্শিয়াকে সে যে আদৌ ভালবাসে নাটকে তার কোনও পরিচয় মেলে না; পোর্শিয়ার টাকার টানেই তার বেলমেন্ট যাওয়া বন্ধুর টাকায় বেলমন্টে গেলে সকন্যা সম্পত্তিলাভ যে নিশ্চিত তাও নয়। তা সত্ত্বেও শাইলকের ভয়ঙ্কর শর্তে অ্যান্টনিওকে টাকা ধার করতে দিতে তার বন্ধুত্বে বড় একটা বাধেনি। সওদাগরের অন্য ইয়ার মোসাহেবদের মতোই ব্যাসানিও নির্বিবেক, স্বার্থপর, হালকা প্রকৃতির। শেক্সপিয়র তাকে আদৌ অ্যান্টনিওর বন্ধুতার অথবা পোর্শিয়ার ভালবাসার উপযুক্ত পুরুষ করে আঁকেননি। সঠিক বাক্স বাছাই-এর ব্যাপারে তাকে কায়দা করে জিতিয়ে দিয়েছে পোর্শিয়া। ঝুঁকি নিয়েছে পোর্শিয়া, ঝুঁকি নিয়েছে অ্যান্টনিও-নিজের কোনও গুণে নয়, বরাতজোরে ব্যাসিনিওর এমন বউ, এমন বন্ধু জুটে গেছে। সোলানিও, সালেরিও, গ্র্যাশিয়ানো, ব্যাসানিওদের হৃদয়হীন, দায়িত্বহীন ফূর্তিবাজির জগতে শাইলককে ততটা হীন ঠেকে না।
অ্যান্টনিওর বন্ধুপ্রীতি অবশ্য নির্ভেজাল, কিন্তু ওই একটি ক্ষেত্রের বাইরে তার মানবিকতা অতি সঙ্কীর্ণ। ইহুদিদের প্রতি তার মনোভাব ও আচরণ প্রায় বিশ শতকের নাৎসীদের সামিল। শাইলকের জামাকাপড়ে থুতু ফেলতে কিংবা তার দাড়ির ওপরে গয়ের ওগরাতে, কিংবা তাকে কুকুর বলে গাল দিতে, এমনকি তাকে লাথি মারতে অ্যান্টনিওর খ্রিস্টান বিবেকে এতটুকু বাধে না। অ্যান্টনিও যখন শাইলকের কাছে তিন হাজার ‘টাকা’ ধার চায় তখন শাইলক তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়:
ণড়ঁ পধষষ সব সরংনবষরবাবৎ, পঁঃঃযৎড়ধঃ ফড়ম,
অহফ ংঢ়বঃ ঁঢ়ড়হ সু ঔবরিংয মধনবৎফরহব.
ণড় ঃযধঃ ফরফ াড়রফ ুড়ঁৎ ৎযবঁস ঁঢ়ড়হ সু নবধৎফ
অহফ ভড়ড়ঃ সব ধং ুড়ঁ ংঢ়ঁৎহ ধ ংঃৎধহমবৎ পঁৎ
ঙাবৎ ুড়ঁৎ ঃযৎবংযড়ষফ; গড়হবুং রং ুড়ঁৎ ংঁরঃ.
কিন্তু সে কথা শোনার পরও মহানুভব অ্যান্টনিও নির্বিকারভাবে জোর গলায় বলে
ও ধস ধং ষরুশব ঃড় পধষষ ঃযবব ংড় ধমধরহ
ঞড় ংঢ়রঃ ড়হ ঃযবব ধমধরহ, ঃড় ংঢ়ঁৎহ ঃযব ঃড়ড়. (ও, ররর)
বিচিত্র নয় যে পৃষ্ঠপোষক সওদাগর বন্ধুর ভাবভঙ্গী দেখে ইয়ারবকসীরা তার নকল করবে।
এই তো হল ভেনিসের সমাজ। এখানে ইহুদি শাইলকের স্থান জন্ম থেকে নিয়তিনির্দিষ্ট। সে যাই করুক-না-কেন সংখ্যাগুরু খ্রিস্টানদের কাছে সে অবাঞ্ছিত, বহিরাগত, ঘৃণ্য, সন্দেহভাজন, বিদেশি আদমী-তার প্রতি সব রকম দুর্ব্যবহারই সাধারণস্বীকৃত। আসলে নাটকের কল্পিত ভেনিস তো শেক্সপিয়রের সমকালীন ইংল্যান্ড। এখানে ইহুদিদের সামনে মাত্র দুটো বিকল্প-হয় ইচ্ছেয় অনিচ্ছেয় খ্রিস্টান হয়ে যাওয়া, আর নয় মুখ বুজে দুর্ব্যবহার আর অত্যাচার সয়ে যাওয়া। এলিজাবেথান মানসে ইহুদিরা নোংরা, কুৎসিত, শঠ, বদমাসিতে ওস্তাদ, খ্রিস্টানদের সর্বনাশ করবার ষড়যন্ত্রে নিয়ম নিমগ্ন। তাদের নিয়ে রঙ্গরসিকতা, তাদের উপরে গালিগালাজ, মারধোর যতক্ষণ তারা মেনে নিতে রাজি ততক্ষণ খ্রিস্টান সমাজ তাদের এক কোনে পড়ে থাকতে দিতে পারে। কিন্তু যদি তাদের মধ্যে কেউ নিজের চেষ্টায় কিছুটা সফল হয়, খ্রিস্টানদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার স্বপ্ন দেখে, তা হলেই তাকে খতম করা জরুরি।
এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার চোখ দিয়ে নয়, যারা অত্যাচারিত তাদের চোখ দিয়ে অত্যাচারকে দেখলে নাক-উঁচু নিরপেক্ষতার আশ্রয় ভেঙে পড়বার আশঙ্কা থাকে। ভেনিসের সওদাগরের যেটি দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য সেটি হল যে যদিও এই নাটক গড়পড়তা খ্রিস্টান দর্শকের উদ্দেশ্যেই লেখা তবু এটিতে ইহুদির চোখ দিয়ে ইহুদিদের অবস্থা দেখানোর কিছুটা আভাস আছে। খ্রিস্টান দর্শকদের হৃদয় পরিবর্তন ঘটানো নাট্যকারের উদ্দেশ্য ছিল এমন মনে হয় না। কিন্তু শাইলকের চরিত্রে সাময়িকভাবেও যে তীব্র আত্মসচেতনতার সঞ্চার তিনি করেছেন, যে আত্মসচেতনতার অভাবে ভেনিসের খ্রিস্টান চরিত্ররা এত লঘু এবং আত্মতৃপ্ত, যে আত্মসচেতনতার উপস্থিতি শাইলককে অত্যাচারিত ইহুদি জাতির প্রতিভূপ্রতিম করে, তার আর্তিতে ট্রাজেডির গভীরতা এনে দেয়, সেটিই এই নাটকে শাইলকের প্রাধান্যের মূল সূত্র। সালেরিওর খোঁচা খেয়ে শাইলক যখন চেঁচিয়ে ওঠে: ও ধস ধ ঔব.ি ঐধঃয হড়ঃ ধ ঔবি বুবং? ঐধঃয হড়ঃ ধ ঔবি যধহফং, ড়ৎমধহং, ফরসবহংরড়হং, ংবহংবং, ধভভবপঃরড়হং, ঢ়ধংংরড়হং, ভবফ রিঃয ঃযব ংধসব ভড়ড়ফ, যঁৎঃ রিঃয ঃযব ংধসব বিধঢ়ড়হং, ংঁনলবপঃ ঃড় ঃযব ংধসব ফরংবধংবং, যবধষবফ নু ঃযব ংধসব সবধহং, ধিৎসবফ ধহফ পড়ড়ষবফ নু ঃযব ংধসব রিহঃবৎ ধহফ ংঁসসবৎ ধং ধ ঈযৎরংঃরধহ রং? ওভ ুড়ঁ ঢ়ৎরপশ ঁং, ফড় বি হড়ঃ নষববফ? ওভ ুড়ঁ ঃৎরপশষব ঁং, ফড় বি হড়ঃ ষধঁময? ওভ ুড়ঁ ঢ়ড়রংড়হ ঁং, ফড় বি হড়ঃ ফরব? অহফ রভ ুড়ঁ ৎিড়হম ঁং, ংযধষষ বি হড়ঃ ৎবাবহমব? (ওওও, র, ৫২-৬০)
তখন খ্রিস্টান কল্পনা শঠ ইহুদির যে ব্যঙ্গচিত্র রচনা করেছিল তা অকস্মাৎ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আমরা অল্প সময়ের জন্য সচেতন হয়ে উঠি যে হয়তো-বা যে বিমর্ষ, বন্ধুবৎসল সওদাগরের সঙ্কটের কথা ভেবে আমরা উদ্বিগ্ন তার চাইতে এই নিষ্করণ ইহুদির ভাগ্য অনেক বেশি ভয়ঙ্কর, নিস্তারহীন, অনালম্ব, অনতিক্রম্য।
কিন্তু সে চেতনা সাময়িক। শাইলককে ট্র্যাজিক চরিত্র হতে দেওয়া এবং সেই সূত্রে সমকালীন দর্শকদের অভ্যস্ত ধ্যানধারণায় ওলটপালট ঘটানো মোটেই নাট্যকারের অভিপ্রেত ছিল না। শাইলকের আর্ত, তীক্ষè প্রশ্নাবলীর পরই তাই দেখি নাট্যকার তাকে চরম হীনতায় নামিয়েছেন-টুবালের সঙ্গে আলাপের (৩.১.৭২-১২০) শাইলকের অর্থগৃধ্রুতা, পৈশুন্য, অপ্রেম, বিকট হিংস্রতা পূর্ণ প্রকটিত। শিল্পীর নির্মম নৈপূণ্যে দর্শকের অস্বস্তিকর আত্মজিজ্ঞাসাকে শেক্সপিয়র একেবারে মুছে দিয়েছেন যাতে বিচারের দৃশ্যে পোর্শিয়ার বিজয়ে ব্যাসানিও, গ্র্যাশিয়ানো প্রমুখের সঙ্গে দর্শকরাও নিষ্পাপ উল্লাসে উচ্ছলিত হয়ে উঠতে পারে। তবে সামান্য চিন্তা করলেই ধরা পড়ে পোর্শিয়ার বিচার মোটেই নিষ্ঠুরতার উপরে করুণার, ঘৃণার উপরে ভালবাসার, ওল্ড টেস্টামেন্টের উপরে নিউ টেস্টামেন্টের বিজয় নয়। শেক্সপিয়রের খ্রিস্টান সমালোচকেরা পোর্শিয়ার করুণা বিষয়ক বক্তৃতাকে খুব গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এই বক্তৃতা যে নেহাতই ফাঁকা বুলি তা মোটেই অস্পষ্ট থাকে না যখন একটু পরে শুনি পোর্শিয়ার মুখে ভেনিসের আইন অনুসারে চরম দ-ের কথা। ভেনিসের সৃষ্টিছাড়া আইনের সুবিধে মতো ব্যাখ্যা করে পোর্শিয়া যে জেতে তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয় বিচারপতি ডিউক স্বয়ং আগাগোড়াই ইহুদির বিরুদ্ধে এবং অ্যান্টনিওর পক্ষে বলে। বড় কথা, শেষ পর্যন্ত শ্যালকের বিষয়সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। তবে অ্যান্টনিও অনুগ্রহ করে তাকে বলে যে যদি শাইলক অবিলম্বে খ্রিস্টান হতে রাজি থাকে তাহলে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি যে অর্ধাংশ অ্যান্টনিওকে ভোগ করার জন্য দেওয়া হচ্ছে শাইলকের মৃত্যুর পরে সেই অংশ তার খ্রিস্টান জামাই পাবে।
এমন ন্যায়বিচার এবং করুণার পরেও যদি দর্শকের মনে শাইলক সম্পর্কে কিছুটা অস্বস্তি থেকে যায় তাই শেষ অঙ্কে ইহুদির বেয়াড়া অস্তিত্বকে একেবারে বিলুপ্ত করা হয়েছে। বেলমেন্টের সেই রমণীয় রাতে-আকাশ যখন প্রোজ্জ্বল স্বর্ণকান্ত, দক্ষিণ সমীরে বিবশ তরুবীথি, জগৎ সঙ্গীতময়, প্রেমিক-প্রেমিকাদের মিলনোৎসবের সেই রাতে কেইবা শাইলককে স্মরণে রাখে! ষ্ট্র্যাটফোর্ডের ‘ভুঁইফোড় কাক’ (আপস্টারট্ ক্রো) লন্ডনে কয়েক বছর কাটাবার পর শুধু অপরের পালকে নিজেকে সাজাতে শেখেনি; কতটুকু ঝুঁকি নিলে সাহস দেখানো হয় অথচ বিপদ এড়ানো যায় সে জ্ঞানও তার আয়ত্তে এসেছে। এখন সে মোটামুটি সচ্ছল; বংশমর্যাদাসূচক কোট অব আর্ম্স-এর জন্য যথাস্থানে আবেদন করেছে; বছরখানেকের মধ্যেই ষ্ট্র্যাটফোর্ডের সব চাইতে বড় বাড়িটি সে কিনবে। তার শিল্পী মন শাইলকের অবস্থাকে ভিতর থেকে দেখে থাকলেও তার হিসেবী মন ইহুদির পক্ষ নিয়ে রক্ষণশীল পৃষ্ঠপোষকদের হারাতে রাজি নয়। প্রথম বিদেশির ট্র্যাজিক কাহিনীকে তাই মধুর সমাপ্তির বেদীতে বলি হতে হল।












সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি
অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
চিরচেনা রূপে অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় আট মামলায় গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
অফিসে হামলার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft