মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১
ঈদের নতুন টাকায়ও ক্ষমতার দাপট
মাসুক আলতাফ চৌধুরী
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২:৩৮ এএম |

 ঈদের নতুন টাকায়ও ক্ষমতার দাপট
ঈদি- নগদ উপহার, ঈদ উৎসবে বেশ জনপ্রিয়। আনন্দের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। পরিবার- নিকটাত্মীয় সবার জন্যে। বিশেষ করে বাচ্চা-স্কুল- বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের কাছে নতুন নোট- টাকার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আবার কেউ কেনাকাটাতেও ব্যবহার করেন নতুন টাকা। তাই ঈদ এলে নতুন টাকার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। সেই চাহিদায় ঈদের আগে নতুন টাকা বাজারে ছাড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
যদিও সেই নতুন টাকা সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাংকের মাধ্যমে অল্পই পৌঁছায়। যারা ব্যাংক থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে পারেন না তাদের ভরসা খোলা বাজার- ফুটপাত। বাড়তি টাকায় নতুন নোট কিনতে হয় সাধারণ মানুষকে। এটা এখন একটা ঈদ বিড়ম্বনা বা বিপত্তি।
নতুন টাকা কেনা-বেচার বেশ ধুম পড়ে ঈদের ৩ দিন আগ থেকে। এবার চাহিদার তুলনায় বাজারে নতুন নোট কম ছেড়েছে কেন্দ্রীয়- বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই দাম বেশি ছিল। খোলা বাজারে আগের মতো এবারও নতুন টাকার হাট বসেছে, রাজধানী ঢাকায়। তবে কুমিল্লায় নতুন টাকার খোলা বাজার নেই। সোনালী ব্যাংক- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ করে। কুমিল্লায় সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখা কান্দিরপাড় সংলগ্ন মনোহরপুরে।
গত কয়েক বছর ধরেই কুমিল্লায় আসা সব নতুন টাকার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ক্ষমতার রাজনীতির কাছে। সোনালী ব্যাংক অন্য ব্যাংকগুলোকে এবার চিঠি দিয়ে বলে দিয়েছে তারা নতুন টাকা দিতে পারবে না। বাধ্য হয়ে নিজেদের ক্লায়েন্টদের খুশি রাখতে ভিন্ন উপায়ে নতুন টাকা সংগ্রহ করে কুমিল্লার ব্যাংকগুলো। বিপত্তি বাঁধে অধিক চাহিদার ১০ ও ২০ টাকার নোট সংগ্রহে। দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠায় ব্যাংক ম্যানেজাররাও শরণাপন্ন হন ওই ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে। অনুরোধ শেষে সোনালী ব্যাংকে আসা নতুন টাকা সংগ্রহ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তারা, যা পেয়েছেন তা একেবারেই যৎসামান্য। তারপরও ম্যানেজ করতে পেরেছেন বলে কথা। কারণ শেষের দিকে বেশ হুড়োহুড়ি পড়ে। সবাইকে অল্প-স্বল্প দিয়ে চাহিদা মেটানো।
কুমিল্লার বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিজেদের চেষ্টায় নিজেদের হেড অফিস, ঢাকার শাখাগুলো বা অন্য ব্যাংক- এমন নানা উপায়ে  নতুন টাকা সংগ্রহ করেন। এতে বাড়তি টাকা গুনতে হয়েছে, আগের চেয়ে বেশি। নিজেদের ক্লায়েন্টদের খুশি রাখতে তারা নিজস্ব তহবিল ম্যানেজ করে বরাবরই এমন করে আসছেন। তবে এবার বাড়তি- দাম বেশি পড়ায় তারাও ছিল অসন্তুষ্ট। সব ব্যাংক ম্যানেজারের আলাপেই বিরক্তি উঠে এসেছে।
নতুন টাকা সবসময়ই ক্ষমতার রাজনীতির কাছাকাছি থাকতে চায়। টাকাওয়ালাদের কাছেই আগে যেতে চায়। প্রবাদ আছে- টাকায় টাকা আনে। এটা টাকার ধর্ম। তবে পুরোটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়ার চর্চা গেল কয়েক বছরে প্রকট হয়েছে। এখন একচেটিয়া বলা চলে। এটা কুমিল্লার চিত্র।
ক্ষমতাধররা এতো নতুন টাকা দিয়ে কি করেন। তারা নিজেরা ব্যবহার করেন, কর্মীদের বিলান, দান-সদকা করেন। এটা নতুন টাকায় করে তাঁরা একটা তৃপ্তি পান, ভালো লাগে। যদিও এই টাকাগুলো সাধারণ সবার জন্যে আসে। ঈদ উৎসব- আনন্দে। কম আসে বলে পুরোটাই তাঁদের লেগে যায়। এর মধ্যে বাড়তি আয়- ব্যবসারও অভিযোগ আছে। সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য না থাকায় অনৈতিক ওই  ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়।
তবে কুমিল্লার অন্যসব সাধারণ মানুষ কিভাবে তাদের প্রয়োজন মিটিয়েছেন। মূল উৎস সোনালী ব্যাংকে আসা নতুন টাকাতো উধাও হয়ে গেছে সাথে সাথেই। অন্য বিকল্প উৎস থেকে আসা অন্যান্য ব্যাংকগুলো সামান্য যে যোগানের ব্যবস্থা করেছে তা থেকেই প্রয়োজন মিটিয়েছে কুমিল্লাবাসী। তাছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলা থেকে আগত কুমিল্লার মানুষরাও নিজেদের সোর্সে প্রয়োজন মতো সাথে করে নিয়ে এসেছেন, যে যতটুকু পেয়েছেন তাই। এভাবে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছেন তারা।
এবার ৩১ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন টাকা ছেড়েছে। সেখানেও শুরুতেই সব সাবাড় হয়ে যায়। ৫,১০,২০,৫০ ও ১০০ টাকার ব্যান্ডেল ছাড়া হয়েছে। ৫ টাকার কয়েন। চাহিদা বেশি ছিল ১০ ও ২০ টাকার। তবে সাথে ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নতুন ব্যান্ডেলও মিলেছে। বলা ছিল, এক ব্যক্তি একাধিক নোট গ্রহণ করতে পারবে না। নিয়মতো সবসময়ই গণমুখী। কিন্তু প্রতিবার যা হয় ব্যাংকে টাকা নেই, ফুটপাতে বসেছে হাট- এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
নতুন টাকা কেনা-বেচায় এবার বাড়তি লেগেছে বেশি। ১০ টাকার ব্যান্ডেল এক হাজার কিনতে গুণতে হয়েছে বাড়তি ৪০০ টাকা। ২০ টাকার দুই হাজার কিনতে লেগেছে অতিরিক্ত ৩৫০ টাকা। ৫০ আর ১০০ টাকার -পাঁচ আর দশ হাজারের ব্যান্ডেল পেতে বেশি দিতে হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এটি ঢাকার ফুটপাতের এবারের বাজার দর। দর বেশি হওয়ার কারন কিনতেও বেশি গুণতে হয়েছে। টাকাতো বিনিময় মাধ্যম, এটার এমন কেনা-বেচা  কি বৈধ। আমাদের দেশে এর প্রচলন আছে। সারা বছরই নতুন টাকার বাজার বসে, ঈদে বসে হাট।
তাহলে মোবাইল কোর্ট বা আইনি পদক্ষেপ কেন কখনও নেওয়া হয় না। অথবা কেন শুধু ব্যাংকেই এমন নতুন টাকা পাওয়া- সংগ্রহের বিধান কঠোর ভাবে পালনে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কেন এমন বিশৃঙ্খলা। পাড়াপাড়ি, যুদ্ধ করে, বাড়তি দিয়ে সাধারণকে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে হয়।
কুমিল্লার কোন কোন ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের ক্যাশ সেকশন বাড়তির বিনিময়ে নতুন টাকা বেচেছে। ম্যানেজারদের সাফ জবাব এটা ক্যাশ অফিসাররা নিজেরা সংগ্রহ করেছে, বেশিতে এনে বেশিতে দিচ্ছে।  মোট কথা চাহিদার তুলনায় যোগান এতোই সীমিত যে, যেমন করেই হোক পাওয়াটাই যেন বড় কথা। সেখানে আইন, এ্যাকশন খাটে না। কারণ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে। বিশেষ করে ঈদে বাচ্চাদের কাছে নতুন টাকার চাহিদা- বায়না থাকে। না দিলে মন খারাপ হয়ে যায়। ঈদটাই মাটি হয়ে যায়। আনন্দ হারিয়ে পড়ে। তাই অভিভাবকরা মড়িয়া হয়ে ওঠেন।
এদিকে পরিস্থিতি এতোটাই বেসামাল থাকে যে টাকা গুণে- বুঝে আনাও যায় না। এখন স্ট্যাপলারে ব্যান্ডেল করা থাকে না। প্লাস্টিক কভারে একদিক মোড়ানো থাকে। এতে সহজেই ব্যান্ডেলে কম- বেশি করা যায়। বাসায় এসে গুণে কম পেয়েছেন এমন অভিযোগ ভূরি ভূরি।  কি ফুটপাত,  কি ব্যাংক। তবে ব্যাংকে এমনটা কমই ঘটে।
আমরা অনেক ক্ষেত্রেই উদাসীন। ভাবখানা এমন চলছেতো। নতুন টাকা এখন অপরিহার্য ঈদ উৎসবে। তাই এর বিতরণে শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন। সহজলভ্য করা দরকার সাধারণ মানুষের জন্যে। সবাই যাতে নির্বিঘেœ পেতে পারে, প্রয়োজন মতো। অথবা রাষ্ট্রীয় গণমুখী নিয়মে।
লেখকঃ সাংবাদিক












সর্বশেষ সংবাদ
সবার আগে বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের
জামালপুরের জালে তিন হ্যাটট্রিক, নাসরিন একাডেমির ১৯ গোল
জুনের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া ও লেবানন ম্যাচের প্রস্তুতির পরিকল্পনা কাবরেরার
বাঁচা-মরার লড়াই জিতে প্রিমিয়ারে টিকে গেল রূপগঞ্জ টাইগার্স
নারী ক্রিকেটের প্রচারণায় সিলেটের তিন স্কুলে জ্যোতিরা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
তীব্র গরমে কুমিল্লায় একই স্কুলের ৭ শিক্ষার্থী অসুস্থ
নিউ ইয়র্কে গুলিতে কুমিল্লার এক ব্যক্তি নিহত
প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা শিক্ষক সমিতির
চেয়ারম্যান পদে বাহাদুরুজ্জামানে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার
উপাচার্যের পদত্যাগ চায় কুবি শিক্ষক সমিতি
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft