শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
ঈদ আনন্দ ও ঈদ উৎসব
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১:০৩ এএম |

 ঈদ আনন্দ ও ঈদ উৎসব

রোজার পর ঈদ আসে আনন্দের উপঢৌকন নিয়ে। ঈদের আনন্দ তখনই তাৎপর্যবহ হয় যখন রমজানের সাধনাকে আমরা সাফল্যম-িত করতে পারি। রোজা হচ্ছে অন্যায় থেকে আত্মরক্ষা বিরোধ থেকে মুক্তি, মিথ্যা থেকে পরিত্রাণ এবং মানুষের কুৎসা রটনা থেকে বিরত থাকা। রাসূল খোদা বলেছেন- রোজা হচ্ছে নরকের আগুন থেকে রক্ষা। পাবার জন্য ঢালস্বরূপ। প্রতীকগত ব্যঞ্জনায় এ কথাটির অর্থ হচ্ছে সর্ব প্রকার অন্যায়, অকল্যাণ এবং বাসনার বিরুদ্ধে রমজান প্রতিরোধ নির্মাণ করে। তিনি আরও বলেছেন-রোজার একটি দাবি আছে মানুষের কাছে। সে দাবি হচ্ছে পাপ থেকে দূরে থাকা, জীবনেক পবিত্র রাখা, সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকা। তাহলেই মানুষ আল্লাহর কাছ থেকে যথার্থ পুরস্কার পাবে। এই রমজানের শেষে ঈদ যখন আসে তখন রমজানের সফলতা ও পবিত্রতার অধিকার নিয়েই আসে। আমরা তখন আল্লাহ্’র নাম উচ্চারণ করে বলি-হে বিশ্বপ্রভু। সকল প্রশংসা একমাত্র তোমারই, তুমি পবিত্র এবং প্রশংসনীয়, তুমি সর্বত্র বিরাজমান এবং সর্বজ্ঞ, তোমার উদ্দেশে আমরা রমজান পালন করেছিলাম। এবং তোমারই উপঢৌকনস্বরূপ ঈদের আনন্দকে পেয়েছি। হে প্রভু, আমাদের অন্তরের কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা ও অহংকার দমনের নির্দেশ নিয়ে রমজান এসেছিল, সেসব দমনের শেষে ঈদের আনন্দ এসেছে। এ আনন্দ হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের এবং মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ও সখ্যতা নির্মাণ করবার।
ঈদের উৎসব সুখের উৎসব এবং কল্যাণের উৎসব। মনে রাখতে হবে যে, কল্যাণের সঙ্গে সুখের একটা সম্পর্ক আছে। ঈদের আনন্দ ধনীর বিলাস কিংবা আরাম নয়। ধনী চিরদিন ঐশ্বর্যের আবরণের মধ্যে একটি কৃত্রিম জগতে বাস করে। কৃত্রিমতা কখনও পূর্ণতা নয়। রমজানের কৃচ্ছ সাধন আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে রিপুকে দমন করে জীবনে সুস্থতায় পরিণতি লাভ করতে হবে। একজন প-িত বলেছেন, পৃথিবীতে এসে যে ব্যক্তি চিত্তকে শাসন করল না এবং চিত্তকে শাসন করে দুঃখ পেল না, ঈশ্বরের কাছ থেকে সে কিছুই পেল না। জগতে প্রত্যেক মানুষের দুঃখের একটি পাওনা আছে। এই দুঃখটা দেহের, দুঃখটা আত্মশাসনের দুঃখ। সে কারণে দুঃখ থেকে যা আমাদের প্রাপ্য তা-ই ন্যায়সঙ্গত। এই প্রাপ্য আমাদের চিত্তে সৌন্দর্যবোধের জাগরণ ঘটায় এবং মঙ্গলপ্রবৃত্তির প্রকাশ ঘটায়। জীবনের শ্রেষ্ঠতার মূল ধর্ম হচ্ছে- কেবলমাত্র গ্রহণ করা নয়, ত্যাগ করাও। আমরা দিবসে খাদ্য ত্যাগ করি এবং রাত্রিবেলা প্রয়োজনের হিসাবমতো খাদ্য গ্রহণ করি। দিবসের ত্যাগ ও রাত্রির গ্রহণের মধ্যে একটি পবিত্রতা এবং একটি পরিচ্ছন্নতা আছে। ত্যাগ আরও অনেক ক্ষেত্রে আছে-রিপুর বাসনাকে ত্যাগ, হিংসাকে ত্যাগ, ক্রোধকে অস্বীকার এবং সংঘাতকে অনাচরণীয় করা। প্রতিদিন আমরা শুধু গ্রহণের মধ্যে সূচিতাকে বিসর্জন দিয়ে থাকি এবং আমাদের মন সে কারণে দুর্বল ও ব্যাধিগ্রস্ত হয়। রমজানের ত্যাগের সাধনায় আমরা পরিপূর্ণতাকে জন্ম দেই। আমরা এই পৃথিবীতে নানা আবরণের মধ্যে বাস করি এবং আবদ্ধ থাকি বলেই জগতকেস্পষ্ট দেখতে পাই না। কিন্তু যখন আমরা আবরণ থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসি তখনই আমরা জগতকে পাই, জগতকে জানি। প্রতিদিন পৃথিবীতে নানা আকর্ষণ এবং প্রলোভনের আবরণে আমরা আবদ্ধ থাকি। সুতরাং আমরা জানি না কল্যাণ কাকে বলে, পরিচ্ছন্নতা কাকে বলে এবং পবিত্রতা কাকে বলে। মােহের আবরণে আবদ্ধ থেকে আমরা আমাদের ইচ্ছার পরিপ্রেক্ষিতে সবকিছু পেতে চাই। সেজন্য তোপৃথিবীতে যত সংঘর্ষ, যত বিরোধ। রমজান আমাদের এই সমস্ত ইচ্ছাকে পরাস্ত করে এবং আমাদের চিত্তকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করে।
আল্লাহ পরম সত্য এবং তিনি প্রেমস্বরূপ। তার মধ্যেই সকল কিছুর সমাধান, সকল বিরোধের অবসান, সকল অকল্যাণের মৃত্যু রমজান শেষে, ঈদের দিনে আমরা পরিপূর্ণ রসরূপ আল্লাহকে জানবার চেষ্টা করি। আল্লাহ্’র প্রতি প্রেম আমাদেরকে বলে যে সকল মানুষের সঙ্গে মৈত্রী-বন্ধনে আবদ্ধ হও। বিরোধ তো কেবল আঘাত করে এবং মৃত্যু কেবলই হরণ করে নেয়। বিরোধ কখনও চিরন্তন নয়। মানুষে মানুষে বিরোধ দূর করে একটি প্রেমে চরিতার্থতা লাভ করতে হবে। বলা হয়ে থাকে যে, যে বিধাতা প্রেমস্বরূপ তাঁর সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগ হলে আমাদের আনন্দেরও চরিতার্থতা হবে। ঈদের দিনে আমরা এই চরিতার্থতারই সন্ধান করি। স্বার্থের মােহ ছাড়তে হবে, অহংকারের নাগপাশ মােচন করতে হবে, আত্মবোধের অহমিকা থেকে মুক্ত হতে হবে। তাহলেই ত্যাগের তাৎপর্য বুঝব। ত্যাগের তাৎপর্যের চরম লক্ষ্য হচ্ছে প্রেম। সেই প্রেমকে আমাদের পেতে হবে। রবীন্দ্রনাথ শান্তি নিকেতনে একটি উপাসনায় বলেছিলেন যে, আমাদের শান্তিতে চলবে না, আমাদের প্রেম দরকার । যতদিন প্রেমেটান না ধরবে ততদিন শান্তিতে কাজ নেই। তিনি যে উপলক্ষেই কথাটি বলে থাকুন, কথাটির একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে। প্রেম সকল কিছুকে মহীয়ান করে, আনন্দময় করে এবং উৎসবের অধিকার এনে দেয়।
রাসূলে খোদা উৎসবের অধিকারকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন-ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার উৎসব মানুষের হৃদয় জাগ্রত করে। ঈদের পূর্ব রাত্রিতে যে মানুষ সাধনায় জাগ্রত থাকে সে কখনও আতংকগ্রস্ত হয় না, উৎসবের অধিকার সে পূর্ণভাবে অর্জন করবে। একবার এক ঈদের দিনে মদীনায় রাসূলের বাসগৃহে এক আনসার বালিকাকে গান গাইতে দেখে হযরত আবুবকর সিদ্দিকী রুষ্ট হয়েছিলেন, কিন্তু রাসূলে খোদা তাঁকে শাসন করে বলেছিলেন, “প্রত্যেক জাতির উৎসবের দিন আছে, উৎসবের দিনে তারা আনন্দ করে, আমাদের উৎসব ঈদ। এই ঈদোৎসবে আনন্দ-গানে কোনো বাধা প্রদান কর না।”
ঈদের দিনে আত্মীয়তার একটি বন্ধন নির্মিত হয়। এ আত্মীয়তা শুধুমাত্র আত্মীয়জনের মধ্যে আত্মীয়তা নয়, এ আত্মীয়তা হচ্ছে সকলের মধ্যে আত্মীয়তা। আমরা ঈদের দিনে একে অন্যের খুব কাছে আসি। আমরা একে অন্যের সঙ্গে মিলিত হবার জন্য একটি তাড়না অনুভব করি। এই মিলনকে একটি শক্তি হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়। শক্তি মানুষকে ভরসা দেয়। আমরা একে অন্যের ওপর নির্ভর করে একটি আনন্দলোক নির্মাণ করি। ঈদের দিনে মানুষ সকল প্রকার ক্ষতি এবং দুঃখের উর্ধে উঠে একটি আনন্দের মধ্যে মিলিত হবার চেষ্টা করে। কর্মক্ষেত্রে আমাদের যে মিলন সে মিলনটি প্রথাসিদ্ধ। সেখানে অসহিষ্ণুতা আছে, ক্ষোভ আছে। হতাশাও আছে, শক্তি ও পৌরুষও আছে; কিন্তু ধর্মীয় মিলনে একটি অভাবনীয়ের অভিব্যক্তি আছে। এই মিলনে অহমিকা নেই, ঔদ্ধত্য নেই, একটি নিবেদনের উপলক্ষে সকলের মধ্যে সাজুয্য নির্মাণের চেষ্টা আছে।
ঈদ আসে দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর। সিয়ামের অর্থ হচ্ছে সংযম, চিত্তশুদ্ধি এবং পরিচ্ছন্নতা। আমরা এমাসে বিভিন্ন অ-কর্ম থেকে বিরত থাকি এবং নিজেকে সর্বতোভাবে আল্লাহর পথে নিবেদনের জন্য তৎপর হই। এটা এক প্রকার দেহ-শুদ্ধি, সঙ্গে সঙ্গে চিত্তশুদ্ধি। দেহ হচ্ছে চিত্তের আলম্বন, আবার চিত্ত হচ্ছে মানবসত্ত্বার একটি অন্তর্লীন অবস্থা। দেহ ও চিত্তের সম্মিলিত যোগ সাধনে জীবনের নতুন ব্যাখ্যা জাগে এবং বিশ্বাসের একটি সুস্পষ্টতা আমরা অনুভব করি।
দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর ঈদ যখন আসে তখন সে এক প্রকার উজ্জ্বলতা, মুক্ততা এবং আনন্দ নিয়ে আসে। ঈদকে একটি পুনরুজ্জীবন বলা যেতে পারে। আমরা কৃছুতার পর সজীবতার অধিকার এবং সজীবতার মধ্যে প্রবেশ করি। অনেক ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তাদের উৎসবগুলো অনেক সময়ই শৃংখলাহীন উন্মাদনার উৎসবে পরিণত হয়। এই বিশৃংখলার কারণে ধর্মের গুরুত্বটা কমে যায় এবং বিশ্বাসের পবিত্রতা নষ্ট হয়। হযরত ইব্রাহীম (আ.) যে সমাজে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে সমাজে উৎসব ছিল উচ্ছংখলতার নামান্তর। সে সময়কার মানুষ সকল প্রকার নৈতিকতাকে পরিহার করে উদ্দাম বিনোদনকে ধর্মের অংশ করেছিল। হযরত ইব্রাহীম (আ.) এই জীবনের মধ্যে শৃংখলা আনলেন। তিনি বললেন যে, অনন্ত শক্তির আধার যে স্রষ্টা তিনি সূর্য নন, চন্দ্র নন, কোনোপ্রকার শক্তি নন। তিনি হচ্ছেন সকল সৃষ্টির মূল আধার। সুতরাং মানুষকে বিক্ষিপ্ত চৈতন্য থেকে একাগ্র চৈতন্যে নিয়ে আসতে হবে। তিনি ধর্মের আচরণের মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা আনলেন, শৃংখলা আনলেন এবং আনন্দের মধ্যেও শাসন আনলেন। আমাদের ধর্মীয় জীবনে আমরা যে শাসন মেনে চলি তার উদ্ভব হয়েছিল হযরত ইব্রাহীমের (আঃ) সময়।
আপনাকে বিলিয়ে দেওয়ার আহ্বান ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহা আমরা উদযাপন করে থাকি ধর্মীয় উৎসব হিসেবে। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে এটি এখন সর্বজনীন উৎসব হিসেবেই পালিত হয়ে থাকে। কারণ এর সঙ্গে সর্বজনীন ছুটি, উৎসব ভাতা, বিপুল কেনাকাটা জড়িত। এর সঙ্গে জড়িত অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকা-ে তাই এ দেশে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়ে যায়। ঈদ হয়ে ওঠে সবার আনন্দ ও সামাজিক সম্প্রীতির উপলক্ষ।
ঈদের যে আর্থসামাজিক দিক আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়; বছরে এক-দুইবার হলেও শিকড়ের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ। দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আবাস গড়েছে। রাজধানীতে কর্মব্যস্ততার চাপে চিড়েচ্যাপটা হওয়া মানুষের কাছে ঈদে বাড়ি ফেরা যেন মুক্তির ছোঁয়া। তাই ঈদ শুধু উৎসব নয়; নগরবাসীর কাছে নাড়ির টানে গ্রামে ফেরার আয়োজন। এই স্রোতে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত কোনো ভেদাভেদ থাকছে না। বাংলাদেশের মানুষ ঈদে গ্রামের বাড়িতে যায় উৎসবের সময়টুকু স্বজনদের সঙ্গে কাটাতে। যাদের গ্রামের সঙ্গে যোগসূত্র আছে, তারাই গ্রামে যায়। আমার মনে হয়, এই যোগসূত্র থাকা মানুষের সংখ্যাই বেশি। অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের আগেকার দিন এখন আর নেই।
সময় অনেকটাই পাল্টে গেছে। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। মানুষের আয় আগের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে কেনাকাটার সামর্থ্যও। আর এই কেনার সামর্থ্যকে পুঁজি করে বেড়ে গেছে ঈদকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ। বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি। এর প্রভাব সারাবছরের অর্থনীতিতে পড়ে। অনেক শিল্প ও পেশা রয়েছে, যেখানে ঈদের বিক্রি বা আয়ের জন্য সারাবছর ধরে প্রস্তুতি চলে। দেশের মানুষের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ও চাহিদায়ও এসেছে বৈচিত্র্য। ঈদের অর্থনৈতিক কর্মকা- এত দিন পোশাক আর জুতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন মানুষ নানা ধরনের পণ্য কিনছে। ইলেকট্রনিক পণ্য যেমন কিনছে, তেমনি উপহারও দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে আবার অনলাইনে কেনাবেচা। যুক্ত হয়েছে মোবাইল ফোনভিত্তিক আর্থিক সেবা। আগে যেখানে আত্মীয়স্বজনকে অর্থ পাঠাতে মানি অর্ডার বা বাহকদের ব্যবহার করা হতো, এখন সেখানে ঘরে বসেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অর্থ পাঠানো যাচ্ছে। আর্থিক সেবা খাতে এটা এক ধরনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
ঈদের অর্থনীতি প্রসঙ্গে আমার একটি পর্যবেক্ষণ হলো, ভোগ্যপণ্যে দেশের ভেতরে কতখানি মূল্য সংযোজন হচ্ছে। কারণ অনেক পণ্যই আমদানি হয়ে আসে; ফলে দেশীয় অর্থনীতির খুব বেশি লাভ হয় না, বরং বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়। আমরা যদি সর্বক্ষেত্রে দেশে উৎপাদিত ভোগ্যপণ্য ব্যবহার করতে পারতাম, তাহলে ঈদের অর্থনৈতিক তাৎপর্য আরও বেড়ে যেত।
ঈদ উপলক্ষে দেশের পর্যটন খাতও প্রাণ পায়। আমাদের মতো অনেক পরিবার সময়টা রিসোর্টে কাটায়, সেটা আগেই বলেছি। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটা, পার্বত্যাঞ্চল, সুন্দরবন বা হাওরাঞ্চলেও অনেকে বেড়াতে যায় এই ছুটির সময়। আমার ধারণা, নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত হলে এই সময় পর্যটন আরও বাড়বে। ঈদুল ফিতরের র্অন্তনিহিত তাৎপর্যগুলোর একটি হচ্ছে বৈষম্য
কমানো। যেমন সামাজিক বৈষম্য, তেমনই অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো। উৎসবের মধ্য দিয়ে সবাই যেমন আনন্দ ভাগ করে, তেমনই জাকাতের মধ্য দিয়ে ধনসম্পদের বৈষম্য কমানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এই বিষয়টি যদি আরও আন্তরিকভাবে, সুচারুভাবে সম্পন্ন করা যেত, তাহলে ঈদুল ফিতর হয়ে উঠত আরও সার্থক।
ঈদুল ফিতরের মধ্যে সাম্যের বার্তাটিও আমাদের গ্রহণ করতে হবে। সেই বার্তার মূলকথা- সবার ‘হক' নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহজভাবে বলেছেন, দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ধর্মের কারণে, সম্প্রদায়ের কারণে, ভৌগোলিক কারণে কেউ পিছিয়ে থাকবে না। এটাকে আমরা এখন বলি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন বা টেকসই উন্নয়ন। ঈদুল ফিতরের বার্তাও একই। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও তাঁর বিখ্যাত সংগীতে আপনাকে বিলিয়ে দেওয়ার আসমানী তাগিদের কথা বলে গেছেন।
ঈদের তাৎপর্য অনুভব করতে হলে রমজানের তাৎপর্য অনুভব করতে হয়। কেননা রমজানের সিয়াম সাধনার পরিণতিতেই ঈদ উৎসবের আয়োজন। ঈদ উৎসবের প্রধান অংশই হচ্ছে ঈদের জামাত এবং খুতবা। ঈদের নামাজ কেউ একাকী গৃহে অবস্থান করে পড়তে পারে না। অন্য নামাজে সে সুযোগ থাকলেও ঈদের নামাজে তা নেই। এর অর্থ হচ্ছে ঈদের জামাতের অপরিহার্যতা। ঈদের জামাতে সকল শ্রেণীর লোক, সকল পেশার লোক, সকল অবস্থার লোক একত্রিত হয় এবং পৃথিবীর সকল দেশের মুসলমানের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। খুতবার মাধ্যমে আমরা ইসলামের আদিযুগের সঙ্গে সম্পর্কিত হই এবং রসূলের (সঃ) সময়কার জীবনবোধের দ্বারা উজ্জীবিত হই। ঈদের জামাতের সাহায্যে একটি পরিশুদ্ধতা এবং পবিত্রতা প্রকাশের চেষ্টা করা হয়। আমাদের অস্তিত্ব হয় সকলকে নিয়ে। সেই বিশ্বাসের কথা আমরা বিশ্বাস করি এবং সেই বিশ্বাসের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হই।
ঈদ হচ্ছে নব জীবনের উৎসব, জীবনের পরিতৃপ্তি এবং আনন্দের উৎসব। বিশ্বাসের প্রকাশের মধ্য দিয়ে এবং নিবেদনের নিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে আমরা এই উৎসব পালন করি।












সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি
অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
চিরচেনা রূপে অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় আট মামলায় গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক
আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
অফিসে হামলার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft