সমাজে খুনখারাবিসহ অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।
সমাজের কিছু মানুষ যেন দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা
পরিস্থিতি নিয়ে তাই নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। গুরুতর অপরাধের ঘটনা যে হারে
বাড়ছে, তাতে আশঙ্কা করা যেতে পারে যে, এটি চলতে থাকলে সামাজিক ভারসাম্য
নষ্ট হয়ে যাবে।
সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে মানুষের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক।
পত্রিকান্তরে
অপরাধসংক্রান্ত যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট
কারণ আছে। একটি খবরে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাস করলেও দ্রুত জামিনে
বেরিয়ে আসছে কিশোর অপরাধীরা। জামিনে মুক্তির পর দ্বিগুণ উৎসাহে জড়িয়ে পড়ছে
একই ধরনের অপরাধে।
ফলে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে চুরি, ছিনতাইসহ
কিশোর অপরাধ বেড়েই চলেছে। তাদের জামিনে ছাড়াতে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক
নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ প্রভাব খাটিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বলছেন, আইনের সুবিধা নিয়ে দ্রুত জামিন পেয়ে ফের একই
অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। যেমনটি ঘটেছে রাজধানীর
রায়েরবাজারে।
সেখানে বাসায় ঢুকে এক নারীকে কুপিয়ে মালপত্র লুটের অভিযোগ
পাওয়া গেছে। কিশোর দলের সদস্যদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ায় এই হামলা চালানো হয়
বলে খবরে প্রকাশ। রাজধানীর বাইরেও সক্রিয় কিশোর গ্যাং। প্রকাশিত খবরে বলা
হয়েছে, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস গ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায়
গত মঙ্গলবার এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এর বাইরে দেশের সাধারণ
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো নয়।
ফরিদপুরে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির
মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সন্তানের হাতে বাবাসহ দুই জেলায় তিন খুনের ঘটনা
ঘটেছে। প্রকাশিত আরেক খবরে বলা হয়েছে, নরসিংদী শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একদল
সন্ত্রাসী। কেউ নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা দোকান খুলতে গেলে হাজির হয়ে
নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা চেয়ে বসে। তাদের দাবি অনুযায়ী চাঁদা না দিলে কুপিয়ে
রক্তারক্তি কা- ঘটিয়ে দেয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। মাদক ব্যবসা,
চাঁদাবাজি, অপহরণ, সশস্ত্র হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার, এমনকি হত্যাকা-ের
মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ওদিকে গত বৃহস্পতিবার
ভোররাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী পাহাড়
থেকে পাঁচ যুবককে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসীরা। মোবাইলে অপরিচিত নম্বর থেকে কল
করে তাদের মুক্তির জন্য ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে।
এক শ্রেণির মানুষ
পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ-কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে
না। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকলে সাধারণ মানুষের মধ্যে
নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দেবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক
রাখা ও অপরাধপ্রবণতা প্রতিরোধের দায়িত্ব মূলত পুলিশ বাহিনীর। তাদের আরো
তৎপর হতে হবে। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে আইনের হাতে
সোপর্দ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অন্যায়কারীর শাস্তি হলে তা দেখে
অন্যরা অন্যায় কাজে নিরুৎসাহ হবে। আর সে কারণেই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা
বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে।