ডায়াবেটিসকে
মহামারি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্বে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন
ডায়াবেটিক রোগীর মৃত্যু হয় এবং দুজন নতুন ডায়াবেটিক রোগী শনাক্ত হয়। এর
অন্যতম কারণ জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন। মানুষ আগের মতো শারীরিক পরিশ্রম
করছে না।
নগরজীবনে বেশির ভাগ সময় শুয়ে-বসে কাটাচ্ছে। স্থূলতার সমস্যা
বাড়ছে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসছে। ধূমপান, মদ্যপানের মতো অভ্যাসগুলোও
ডায়াবেটিস বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক একটি
গবেষণা বলছে, ২০২১ সালে যেখানে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা
ছিল প্রায় ৫৩ কোটি, ২০৫০ সালে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ১৩০
কোটিতে পৌঁছাতে পারে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য
সাময়িকী দ্য ল্যানসেট এবং দ্য ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রাইনোলজি
জার্নালে। গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, ২০৪৫ সালের মধ্যে বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশ
প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিস রোগী থাকবে নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশে। বাংলাদেশেও
ডায়াবেটিস দ্রুত বাড়ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৮৫ লাখ। ধারণা করা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ
এই সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট
পর্যন্ত সময়ে ঢাকা ও ময়মনসিংহের আট উপজেলায় ডায়াবেটিস নিয়ে একটি সমীক্ষা
পরিচালনা করে সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব
বাংলাদেশ এবং স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি।
২৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ১১ হাজার মানুষের ওপর চালানো সমীক্ষায় দেখা গেছে,
ডায়াবেটিস সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সসীমার মধ্যে।
শনাক্তের হার ৩৩.২ শতাংশ।
৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৫.৬ শতাংশ, ৪৬
থকে ৫৫ বছরের মধ্যে ২১.৫ শতাংশ এবং ৫৬ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে ১৯.৭ শতাংশ
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, যে বয়সে মানুষ সবচেয়ে
বেশি সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম থাকার কথা, তারাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এমন
পরিস্থিতিতে গতকাল সারা দেশে পালিত হয়েছে ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস। এবার
দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘ডায়াবেটিস প্রতিরোধের এখনই সময়’।
ডায়াবেটিস
দীর্ঘমেয়াদি রোগ। একবার কেউ আক্রান্ত হলে তাঁকে বাকি জীবন চিকিৎসকের
পরামর্শ মেনে চলতে হয়। কারণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে নানা ধরনের
শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। পা কিংবা শরীরের অন্যান্য অংশে দীর্ঘস্থায়ী ঘা,
কিডনির বিভিন্ন সমস্যা কিংবা কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া, স্ট্রোক বা হৃদরোগের
সমস্যা, চোখের সমস্যা, এমনকি অন্ধ হয়ে যাওয়াসহ আরো অনেক জটিলতা তৈরি হতে
পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হচ্ছে সচেতনতার সঙ্গে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা এবং
ডায়াবেটিস হলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই লক্ষ্যে মানুষকে সচেতন করার ব্যাপক
উদ্যোগ নিতে হবে।