অপরিকল্পিত
নগরায়নের ফলে প্রতিনিয়ত নাগরিক ভোগান্তি বাড়ছে। এসব ভোগান্তির অন্যতম কারণ
বায়ুদূষণ। জীবনকে করে তুলছে অসহনীয়। ধূলাবালি মিশ্রিত বাতাসের কারণে
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে
শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন বেড়েই চলছে। বায়ুদূষণের
ফলে শুধুমাত্র ফুসফুস কেন্দ্রিক রোগবিস্তার লাভ করে এমনটি নয়। এর মাধ্যমে
হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং স্মৃতিভ্রংশের মতো মারাত্মক রোগও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পাশাপাশি ছোটখাট রোগবালাই যেমন- প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক অবসাদ এবং শিশুদের
মাঝে অ্যাজমার মত রোগ ছড়িয়ে দিতে পারে। বাড়তে পারে গর্ভপাতের আশঙ্কাও।
বায়ুদূষণের হাত থেকে মুক্ত নয় এমনকি গর্ভে থাকা শিশুও। গাছ স্বয়ংক্রিয়ভাবে
সব ধরনের দূষণ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। গাছ বড়জোর একটি নিরাপত্তা ঢাল
হিসাবে কাজ করতে পারে। কিন্তু এও মনে রাখতে হবে যে, নগরে গাছ বিপন্ন, ফলে
দূষণ মোকাবেলায় সচেতনতাই মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। নিরাপদ মাস্কের ব্যবহার
একটি আপাতত সমাধান হয়ে আসতে পারে। তবে মনে রাখা উচিত, বাজারে প্রচলিত
অধিকাংশ মাস্কই আসলে কাজের নয়। বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত রাখতে আরও নিরাপদ মাস্ক
ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি ঘরের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত
বরং ঘরের পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে মনযোগ দেয়াটাই জরুরী।
উন্নয়নের
সঙ্গে মুক্ত বিশুদ্ধ বাতাস ও ফুসফুসের সুস্থতা একান্ত প্রয়োজন। ফুসফুসের
শ^াস গ্রহণের ক্ষমতা সাধারণ জীবন ধারণে সবচেয়ে আরামের ব্যাপার যা প্রতিনিয়ত
দরকার। সিওপিডি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ হলো ফুসফুসের
তীব্র প্রদাহজনিত রোগ, যার ফলে ফুসফুসে ঠিকমত বায়ু পরিবাহিত হতে পারে না।
সিওপিডির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ধূমপান ও বায়ুদূষণ। এছাড়া
ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের ফলে সিওপিডি হতে পারে। যদিও সিওপিডির মূল
কারণ হিসাবে ধূমপানকে দায়ী করা হয় তবে গবেষণায় দেখা গেছে আক্রান্ত প্রতি
চারজনের একজন কখনো ধূমপান করেননি।
সমগ্র বিশে^ মৃত্যুহার বৃদ্ধি এবং রোগ
উপসর্গের একটি প্রধান কারণ হল সিওপিডি। ডাব্লিউ এইচও’র পরিসংখ্যান
অনুযায়ী, সারাবিশে^ সাড়ে ৬ কোটি মানুষ সিওপিডি রোগে মাঝারি থেকে গুরুতরভাবে
আক্রান্ত। সিওপিডির সাধারণ উপসর্গগুলো হচ্ছে শ^াসপ্রশ^াসে অসুবিধা, কফসহ
দীর্ঘস্থায়ী কাঁশি এবং অবসাদবোধ করা। এ লক্ষণগুলো সময়ের সঙ্গে দ্রুত খারাপ
হতে পারে। তাই এগুলোকে বলা হয় একিউট এক্সাসারবেশন। এগুলো সাধারণত কয়েকদিন
স্থায়ী হয় এবং প্রায়ই এন্টিবায়োটিক ও শ^াসনালী প্রসারণের ঔষধ খাইতে হয়।
সিওপিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে অনেক বেশি
ঝুঁকিতে থাকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুসফুসের সংক্রমণ যেমন- ফ্লু বা
নিউমোনিয়া, ফুসফুসের ক্যান্সার, হার্টের সমস্যা, দূর্বল পেশী ও ভঙ্গুর হাড়,
বিষণœতা ও উদ্বেগ।
সিওপিডি নির্ণয়ে স্পাইরোমেট্রি নামক একটি সাধারণ
শ^াস প্রশ^াসের পরীক্ষা করা হয়। সিওপিডি চিকিৎসার স্তরগুলো হচ্ছে Ñ(ক)
ধূমপান ত্যাগ করা। বাড়িতে ও কর্মক্ষেত্রে তামাকের ধোঁয়া এবং অন্যান্য
বায়ুদূষণের মাত্রা কম রাখা ও এড়িয়ে চলা (খ) পর্যাপ্ত ঔষধ কাঁশি বা
শ^াসকষ্টের মত লক্ষণগুলোর জন্য ব্রঙ্কডাইলেটর, স্টেরয়েড ও এন্টিবায়োটিকের
মত ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে (গ) পালমোনারি রিহ্যাবিলিটেশন এক ধরনের
চিকিৎসা প্রোগ্রাম, যাতে ফার্মাকোলজিক্যাল চিকিৎসা, শ^াস প্রশ^াসের
ব্যায়াম, পুষ্টি সহায়তা, টিকা এবং দৈনন্দিন জীবনমান উন্নত করতে কাউন্সেলিং
করা হয়ে থাকে (ঘ) ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ সিওপিডি পরীক্ষা,
প্রতিবছর একবার ফ্লু শট ও নিউমোনিয়া ভ্যাক্সিন, বিশেষ করে সিওপিডি
শ^াসযন্ত্রের সংক্রমনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সে অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক
দিয়ে চিকিৎসা করা উচিত (ঙ) সম্পূরক অক্সিজেন ঃ কোর পালমোনারি বা হার্ট
ফেইলিউর হাওয়ার আশংকা থাকলে অক্সিজেন দেয়ার জন্য একটি বহনযোগ্য অক্সিজেন
ট্যাংকের প্রয়োজন হতে পারে। এ রোগ কখনো সম্পূর্ণ সারে না বা মুক্ত হয় না।
কিন্তু সঠিকভাবে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা দিলে সিওপিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরাও
সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারে।