
লিওনেল
মেসিকে এক নজর দেখতে সোমবার দুপুর থেকেই দিল্লির আরুন জেটলি স্টেডিয়ামে
অপেক্ষায় ছিল হাজার হাজার দর্শক। কুয়াশার কারণে ফ্লাইট বিলম্বিত হওয়ায়
মুম্বাই থেকে দিল্লিতে পৌঁছাতে ঘন্টাখানেক দেরি হয় আর্জেন্টাইন ফুটবল
জাদুকরের। তাই স্টেডিয়ামে যেতেও একটু বিলম্ব হয় তার। তবে ইন্টার মায়ামির
দুই সতীর্থ লুইস সুয়ারেস ও রদ্রিগো দে পলকে নিয়ে মেসি মাঠে ঢুকতেই উল্লাসে
ফেটে পড়ে গোটা স্টেডিয়াম।
কলকাতায় চরম বিশৃঙ্খলার পর, হায়দরাবাদ হয়ে
মুম্বাই ঘুরে, সোমবার দিল্লি সফর দিয়ে শেষ হয়েছে মেসির তিন দিনের ভারত সফর।
সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আবার দেশটিতে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন
রেকর্ড আটবারের ব্যালন দ’র জয়ী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী,
দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোমবার কুয়াশা ও
দৃশ্যমানতা কম থাকার কারণে মুম্বাই থেকে মেসির ফ্লাইট বিলম্বিত হয়।
স্থানীয়
সময় বিকাল সাড়া চারটার দিকে দুই সতীর্থকে নিয়ে আরুন জেটলি স্টেডিয়ামে
পৌঁছান মেসি। স্টেডিয়ামে পৌঁছেই প্রদর্শনী ম্যাচ খেলা দুই দলের
ফুটবলারদের সঙ্গে তারা করমর্দন করেন এবং ছবি তোলেন। বেশ কয়েকটি বল কিক মেরে
গ্যালারিতে পাঠান মেসি-সুয়ারেসরা। তিন তারকা কিছু সময় খেলেন খুদে
ফুটবলারদের সঙ্গে।
পরে তাদের মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান দিল্লির
মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা। তার সঙ্গে ছিলেন আইসিসি প্রেসিডেন্ট ও ভারতীয়
ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সচিব জয় শাহ। মেসির হাতে আগামী টি-টোয়েন্টি
বিশ্বকাপে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠেয় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচের টিকেট তুলে দেন
আইসিসি প্রধান। দেওয়া হয় ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যদের সই করা ব্যাট। তিন
ফুটবলারকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সিও উপহার দেন জয় শাহ।
আধা ঘন্টার মতো সময় মাঠে ছিলেন মেসি। শেষ দিকে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন, কৃতজ্ঞতা জানান সবার প্রতি।
“ভারতে এই দিনগুলোতে পাওয়া ভালোবাসা ও সম্মানের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমি। এটি আমাদের জন্য সত্যিই সুন্দর অভিজ্ঞতা ছিল।”
“আমরা
এই ভালোবাসা হৃদয়ে ধারণ করব এবং আমরা অবশ্যই ফিরে আসব, আশা করি একদিন
ম্যাচ খেলতে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে, তবে আমরা অবশ্যই আবার ভারতে আসব।
আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।”
এর আগে শোনা গিয়েছিল, দিল্লিতে ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন মেসি। তবে ভারতীয়
প্রধানমন্ত্রী জর্ডান, ইথিওপিয়া ও ওমানে নির্ধারিত সফরের জন্য সোমবার সকালে
দেশ ত্যাগ করেন। এদিন রাতেই মেসিদের ভারত ছাড়ার কথা।
‘গোট ইন্ডিয়া
ট্যুর’-এ গত শুক্রবার রাতে কলকাতায় পৌঁছান মেসি। শনিবার সকালে হোটেলে তার
সঙ্গে দেখা করেন বলিউড তারকা শাহরুখ খান। পরে মেসি যান সল্ট লেক
স্টেডিয়ামে। প্রিয় তারকাকে কাছ থেকে এক নজর দেখতে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে
স্টেডিয়ামে আসেন হাজার হাজার দর্শক। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তিরা মেসিকে ঘিরে
থাকায় তাকে ঠিকমতো দেখতে না পারাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়
স্টেডিয়াম।
অল্প কিছু সময় থেকে মেসি চলে যাওয়ার পরপরই শুরু হয় তাণ্ডব।
অনেকে সিট উপড়ে ফেলে মাঠের দিকে ছুড়ে মারেন, বোতল ছুড়ে মারেন, অনেকে আবার
মাঠে ঢুকে পড়েন এবং মঞ্চ ভেঙে ফেলেন। এমন ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুঃখ প্রকাশ করে তদন্তের ঘোষণা দেন। ঘটনার কিছুক্ষণ পর
মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তকে বিমানবন্দর থেকে আটক করে
পুলিশ। পরে কলকাতার একটি আদালত তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে পাঠায়।
শনিবার
সন্ধ্যায় হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গোছানো আয়োজনে
দর্শক মাতান মেসি। সেখানে তার সঙ্গে দেখা করেন ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল
গান্ধী।দ্বিতীয় দিন মুম্বাইয়ের আইকনিক ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যান
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক। সেখানে ছিলেন বলিউড অভিনেতা টাইগার
শ্রফ, অজয় দেবগনরা। মেসিকে ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী নিজের ১০ নম্বর জার্সি
উপহার দেন আরেক কিংবদন্তি সাচিন টেন্ডুলকার।
