ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করলেন অন্তর্র্বতী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম। তাদের পদত্যাগপত্র জমা পড়ার বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় যমুনায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “বিকাল ৫টায় যমুনায় পদত্যাগপত্র জমা দেন দুই উপদেষ্টা। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে তাদের পদত্যাগ কার্যকর হবে।"
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখ সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এই দুই ছাত্রনেতার পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের মঙ্গল কামনা করেন।
“তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে তোমরা যেভাবে জাতিকে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তির পথে অবদান রেখেছ তা জাতি মনে রাখবে। আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতেও গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও বিকাশে তোমরা একইভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।’
“প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার সবসময় তোমাদের অবদান স্মরণ করবে। আমি তোমাদের সুন্দর ও শুভ ভবিষ্যৎ কামনা করি। এত অল্প সময়ে তোমরা জাতিকে যা দিয়েছ তা জাতি কখনো ভুলবে না। এটি একটি রূপান্তর মাত্র। আমি আশা করি, আগামীতে বৃহত্তর পরিমণ্ডলে তোমরা আরো বড় অবদান রাখবে।’”
প্রেস সচিব জানান, পদত্যাগী দুই তরুণ উপদেষ্টাকে ‘নিজেদের কর্মের মাধ্যমে দেশের মঙ্গলে নিয়োজিত থাকার’ আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
“প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকারে থেকে যে অভিজ্ঞতা তোমরা অর্জন করেছ, তা ভবিষ্যৎ জীবনে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।’”
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া, সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আসিফ মাহমুদ। আর মাহফুজ আলম ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।
তাদের পদত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যেই বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আসিফ মাহমুদ। সেখানে তিনি তার সময়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি আগেই বলেছি, আমার নির্বাচন করার ইচ্ছে আছে। তবে কোন আসন থেকে করব, সেটা এখনো ঠিক করিনি।”
পদত্যাগ করেছেন কিনা কিংবা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “এ বিষয়ে আমার কোনো কিছু বলার অনুমতি নেই। এটা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে আপনাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
নির্বাচন করতে কিছুদিন আগে কুমিল্লা থেকে ঢাকা-১০ এলাকার ভোটার হয়েছেন আসিফ মাহমুদ। ঢাকা-১০ আসনে নির্বাচন করার কথা রয়েছে তার।
অন্যদিকে মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর-১ আসনের ভোটার। তিনি বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা গেলেও সেখানে এখন অন্য প্রার্থী দিচ্ছে বিএনপি।
সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে বলা হচ্ছে, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল অন্তর্র্বতী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। কিন্তু তারা আরও সময় চান। এর মধ্যে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
উপদেষ্টা পরিষদের অনেকে এ ব্যাপারে একমত ছিলেন যে তফসিল ঘোষণার পর দুই ছাত্র উপদেষ্টার সরকারে থাকা উচিত হবে না। শেষ পর্যন্ত সরকারের অবস্থান মেনে নিয়ে তফসিল ঘোষণার আগে আগে পদত্যাগ করলেন তারা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হয়। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা পান।
নাহিদ ইসলামকে দেওয়া হয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আসিফ মাহমুদ প্রথমে শ্রম মন্ত্রণালয় পেলেও পরে তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়। মাহফুজ আলম প্রথমে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পান। পরে গত ফেব্রুয়ারিতে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মাহফুজ আলম।
সরকারে দায়িত্ব পালন করায় আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম এতদিন এনসিপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ না দিলেও অভ্যুত্থানের নেতাদের এ দলে তাদের প্রভাব রয়েছে।
এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে গত রোববার একটি নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এনসিপি বুধবার ১২৫ আসনে আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করেছে। তবে ঢাকা-১০ কিংবা লক্ষ্মীপুর আসনে এখনো কাউকে মনোনয়ন দেয়নি দলটি।
