ভোটের
দিনক্ষণ ঠিক না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা থেমে নেই।
গত কয়েকমাস ধরে চলা প্রচারণা এখন আরো জমে উঠেছে। বড় ছোট সব দলের
প্রার্থীরাই নেমেছে প্রচারণায়। ইতোমধ্যে অনেক দলই সংসদীয় আসন গুলোতে
যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। পোস্টার সাঁটানো নিষিদ্ধ
হওয়ায় বর্তমানে মিছিল মিটিং এর বাইরে প্রচারণায় ব্যানার ফেস্টুন লিফলেট
বিতরণ প্রাধান্য পাচ্ছে। কুমিল্লা-১১ চৌদ্দগ্রাম আসনেও জমে উঠেছে নির্বাচনী
প্রচারণা। ধানের শীষ, দাঁড়িপাল্লা, হাতপাখা ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীদের
প্রচারণা ইতোমধ্যে নজর কেড়েছে। তবে বেশি নজর কেড়েছে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৪২ কিলোমিটারে সড়ক বিভাজকের গাছে ঝুলানো ফেস্টুনগুলো।
সৌন্দর্য বর্ধণে লাগানো গাছ গুলো খুব কাজে লেগেছে প্রচারণায়। বিভাজকে
লাগানো এসব গাছের মধ্যে রয়েছে বকুল, কাঞ্চন, করবী, গন্ধরাজ, রাধাচূ
হৈমন্তী, টগর, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, পলাশসহ নানান ফুলের গাছ। তাছাড়াও
সড়কের পাশে এবং বিভিন্ন স্থানে বিভাজকের ওপর লাগানো হয়েছে জলপাই, অর্জুন,
কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমণি, নিম, একাশিয়া, হরীতকীসহ বিভিন্ন জাতের গাছ।
এসব গাছেই পেরেক মেরে লাগানো হয়েছে প্রার্থীদের নির্বাচনী ফেস্টুন। উপর
নীচ দুই পাশে বড় পেরেক মেরে মজবুত করে লাগানো হয়েছে সেসব যাতে বাতাসে ছুটে
না যায়। ভোটার ও দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে প্রচার কাজে নিয়োজিতরা ঢাকা ও
চট্টগ্রাম দুই দিক মুখী ফেস্টুন লাগিয়েছে। বাদ যায়নি ছোট ছোট ফুলগাছ গুলোও।
গাছের বহুবিধ উপকারিতা ও ব্যবহার রয়েছে। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, ছায়া
দেয়, ফল ফুল দেয়। গাছ থেকে জ্বালানী ও আসবাবপত্র হয়। তবে বাংলাদেশের দলগুলো
গাছের ব্যবহারে নতুনত্ব এনেছে। তারা সুবিধার্থে গাছ কাটে, ভোট ভাগাতে গাছ
লাগায়। আবার সেই ভোট প্রার্থনা করতে গাছে গাছে ব্যানার ফেস্টুন ঝুলায়। বড়
বড় লোহার পেরেকে মেরে গাছ গুলোকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেস্টুন লাগায়।
উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা
বলছেন, গাছে পেরেক মারলে সেখানে মরিচার সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে গাছের শত্রু
ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া ঢুকে গাছের নানা অসুখ-বিসুখের তৈরি করে। গাছের
বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়, ঝড়-বৃষ্টিতে সহজেই গাছ ভেঙে যায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ
আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, 'প্রথমত, এ ধরনের
ব্যানার ফেস্টুনের কারণে গাড়ি চালকদের সড়কের বাঁ পাশ ডান পাশ দেখায়
প্রতিবন্ধকতা তৈরী হবে যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হবে। দ্বিতীয়ত, গাছে পেরেক
মেরে ফেস্টুন ঝুলিয়ে তারা নির্বাচনী আইন লঙ্কন করছে। পরিবেশ নষ্ট করার
এখতিয়ার তাদেরকে কেউ দেয় নাই। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। এবং সড়ক ও জনপদ
বিভাগকে দ্রুত মহাসড়কের গাছ থেকে ব্যানার ফেস্টুন অপসারণের আহ্বান জানাই।'
এ
বিষয়ে সড়ক ও জনপথ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: গোলাম মোস্তফা খন্দকার
বলেন, ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
উল্লেখ্য,
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন,
'গাছ সুরক্ষায় নতুন আইন তৈরি করা হচ্ছে। এই আইনে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন দেয়ার
বিরুদ্ধে বিশেষ বিধান রাখা হবে। গাছে পেরেক ঠোকা বন্ধ করতে সবার সহযোগিতা
প্রয়োজন। আইন কার্যকর হবার পর কেউ এ কাজ করলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি করা
হবে।' উপদেষ্টার বলা গাছ সরক্ষায় নতুন আইন তৈরী হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।
তবে গাছে পেরেক বেড়েছে বহুগুন।
