মঙ্গলবার ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
১০-১৫ বছরের মধ্যে অকার্যকর হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক, বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি!
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:১১ এএম |


বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক সংকট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা রোগীর দেহের ৪৬ হাজার ২৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বহুল ব্যবহৃত ও জরুরি অনেক অ্যান্টিবায়োটিকই এখন ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ সংক্রমণও চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে, রোগীর আইসিইউতে ভর্তির সময় ও চিকিৎসা খরচ বাড়ছে, এবং মৃত্যুঝুঁকি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের বার্ষিক গবেষণা প্রতিবেদনে এই ভয়ংকর চিত্র উঠে এসেছে। সোমবার ‘বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স রিপোর্ট ২০২৪-২০২৫’ প্রকাশ করে বিএমইউ কর্তৃপক্ষ।
রিপোর্টে দেখা গেছে, হাসপাতালগুলো থেকে সংগ্রহ করা ৪৬ হাজার ২৭৯টি রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, সেপট্রিয়াক্সজন, জেন্টামাইসিন, এমনকি মেরোপেনেম ও টিগেসাইসিলিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ওষুধও অনেক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে আর কার্যকর নেই। এর ফলে সাধারণ সংক্রমণের চিকিৎসাও জটিল হয়ে পড়ছে। রোগীর ভর্তির সময় ও ব্যয় বাড়ছে এবং মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
ফলাফলে দেখা গেছে, মোট পরীক্ষিত নমুনার ২৪ শতাংশে অর্থাৎ ১১ হাজার ১০৮টি নমুনায় জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়ে। প্রস্রাবের নমুনায় সর্বাধিক পাওয়া ই.কোলি ব্যাকটেরিয়ায় সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও অ্যামোক্সিসিলিনের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্স উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে। রক্তে পাওয়া স্যালমোনেলা টাইফিতে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন রেজিস্ট্যান্স সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চিত্র অ্যাসিনেটোব্যাক্টর ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে, যা প্রায় সব প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে উচ্চমাত্রায় প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।
এছাড়া নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ক্লেবসিয়েলা ব্যাকটেরিয়া এবং আইসিইউতে ক্যান্ডিডা জাতীয় ছত্রাকের রক্তে সংক্রমণেও অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। তিনি বলেন, এই সমস্যার দায় ও সমাধানের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিতে হবে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের ক্ষেত্রে গবেষণা, গাইডলাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিএমইউকে নেতৃত্ব দিতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান একটি ভিডিও বার্তায় অতীতের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে মানবজাতি আবার সেই একই সংকটে পড়তে পারে, যখন ওষুধ থাকলেও সেগুলো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর হবে না। তাই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে এখন বিশ্বব্যাপী এক মহাবিপর্যয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিএমইউর মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার এই সংকটের মূল কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, নিজে নিজে ওষুধ সেবন, কোর্স সম্পূর্ণ না করা এবং প্রাণিসম্পদে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে জীবাণুগুলো ধীরে ধীরে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠছে।
এ সময় তিনি সাধারণ মানুষকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়া, সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন।
প্রতিবেদনে এই সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসকদের জন্য ল্যাব টেস্টভিত্তিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করার নীতিমালা কঠোরভাবে মেনে চলা, হাসপাতালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ প্রোটোকল জোরদার করা, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, ওষুধের দোকানে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং প্রাণিসম্পদে অ্যান্টিবায়োটিকের নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহার বন্ধ করা।












http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
বিজয় মেলার নামে কুমিল্লায় ‘বাণিজ্যমেলা’র আয়োজন
দেশে সাড়ে ১৪ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদের পাশাপাশি আমন ধান উৎপাদনেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন -কুমিল্লায় খাদ্য উপদেষ্টা
কুমিল্লা মুক্তদিবসে বর্ণাঢ্য র‌্যালি
বিজয় দিবসে ‘বিশ্ব রেকর্ডের’ প্রস্তুতি বাংলাদেশের
সৌদিআরবে বেকারিতে দগ্ধ হয়ে রেমিটেন্সযোদ্ধার মৃত্যু
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শওকত মাহমুদ গ্রেপ্তার
৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় কুমিল্লা রাস্তায় নামে জনতার ঢল
সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে কমিশন প্রস্তুত
ডাস্টবিনের ময়লা রাস্তায়, ডেঙ্গু আতঙ্ক
৮-১৫ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোন দিনতফসিল
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২