
শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান হল ছাত্র এবং প্রাক্তন ছাত্র, অনুষদ এবং প্রশাসকসহ অনেকের মধ্য
একটি অংশীদারিত্ব, যা একটি সম্প্রদায় এবং সংস্কৃতি গড়ে তোলে। ‘স্কুল
অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’ মূলত: বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংযোগ
স্থাপনের মাধ্যমে মেলবন্ধন তৈরি করার একটি সমন্বিত উদ্যোগ। অ্যালামনাই
অ্যাসোসিয়েশন যেকোনো প্রতিষ্ঠানের বিকাশের চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বর্তমান শিক্ষার্থীদের বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতা গ্রহণের
সুযোগ তৈরি করে দেয়। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন একে অপরকে সমর্থন এবং
পরামর্শদান, তহবিল সংগ্রহ এবং ধ্যান-ধারনা শেয়ারের মাধ্যমে মূল শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য কার্যক্রম চালানোর প্রয়াস গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে
অ্যালামনাই সদস্যদের শক্তিশালী ভূমিকার মধ্যে রয়েছে নিজেদের মধ্যে আত্মিক
অনুভূতি গড়ে তোলা, পরামর্শদানের মাধ্যমে বর্তমান ছাত্রদের সামনে এগিয়ে
যাবার সুযোগ তৈরী করে দেয়া, আর্থিক সহায়তা, দক্ষতা এবং ঐ প্রতিষ্ঠানের
ঐতিহ্য এবং খ্যাতি বজায় রেখে স্কুলের মানোন্নয়নে অবদান রাখা।
সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বহুবিধ কার্যক্রম যেমন,
একাডেমিক বিষয়, ছাত্র ব্যবস্থাপনা এবং অ্যালামনাইদের প্রদত্ত সহযোগিতাগুলো
একই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হচ্ছে এবং সকল অংশীজনগণ এ
থেকে প্রাপ্ত অসাধারণ সুবিধাগুলি সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন হয়ে উঠছে। যে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরণের সমন্বয়মূলক সহযোগিতা লালন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা
হয়েছে সেখানে ছাত্র এবং প্রাক্তন ছাত্র উভয়ের জন্যই আনন্দময় একটি পরিবেশ
গড়ে উঠছে। এই সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মধ্যে রযেছে ছাত্র জীবনের সামগ্রিক
মান উন্নত করার জন্য পরিকল্পিত কর্মসূচী গ্রহণ, নতুন শিক্ষার্থীদের আনন্দময়
শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও তাদের বর্তমান বিশ্বের
সমসাময়িক বিষয়ের সাথে পরিচিতকরণ। বর্তমান ছাত্র এবং প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্য
সামাজিক সংযোগ তৈরি করা খুবই জরুরী। সামাজিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা,
পুনর্মিলন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করার মতো বিষয়গুলো
প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্য সম্পর্ককে জোরদার করে।
বাংলাদেশের
অন্যতম সুপ্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা জিলা স্কুল এ জনপদের একটি
ঐতিহ্যবাহী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়। ১৮৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে
প্রভাতি ও দিবা এই দুই শিফটে প্রায় ২০০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। মাধ্যমিক
পরীক্ষার ফলাফলের বিবেচনায় এই স্কুলটি বেশ কয়েক বছর ধরে কুমিল্লা
শিক্ষাবোর্ডে প্রথম স্থান ও সমগ্র বাংলাদেশে সেরা দশের মধ্যে অবস্থান করছে।
কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে পাশ করে ছাত্ররা দেশ এবং দেশের বাইরে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ কাজের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন, নিজেদের প্রতিভার প্রমান
রেখে চলেছেন। এ জনপদে কুমিল্লা জিলা স্কুল আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত প্রজন্ম
তৈরিতে অসাধারণ ভূমিকা রাখছে। ১৮৩৭ সনে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা জিলা
স্কুল
অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ বছর ১৮৮ বছর অতিক্রম করেছে। দীর্ঘ ১৮৮ বছর পর ২৯
নভেম্বর ২০২৫ তারিখ শনিবার কুমিল্লা জিলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অত্যন্ত আনন্দময়
পরিবেশে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বিজয়ী এবং বিজিত
সবাইকে অভিনন্দন।
শিক্ষার সংস্কৃতি এবং সংস্কৃতির শিক্ষা এ দু’টোকে
কাজে লাগাতে অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের জন্য সে ধরণের নেতৃত্ব প্রয়োজন যারা
বিভিন্ন পরিপূরক এবং আন্তঃসম্পর্কিত দক্ষতায় দক্ষ। প্রশাসনিক কার্যক্রম
পরিচালনা ও পরামর্শ প্রদান, সাংগঠনিক উন্নয়ন, মান ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা,
মূল্যায়ন এবং গবেষণার মতো বিষয়গুলোতে দক্ষতা থাকা খুবই জরুরী। প্রতিষ্ঠানের
সার্বিক, কার্যকর ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বর্তমান এবং প্রাক্তন
শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সৃজনশীল মনোভাব নিয়ে একত্রে কাজ করার মানসিকতা বজায়
রাখতে হবে। এ ধরণের পারস্পারিক সহযোগিতা ক্রমাগত উন্নতির জন্য একটি
অপরিহার্য পূর্বশর্ত।
কুমিল্লা জিলা স্কুল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনে যারা
বিজয়ী হয়েছেন তাঁরা সবাই নিজ নিজ অবস্থানে বেশ যোগ্যতার পরিচয় রেখে চলেছেন।
আশা করা যায়, নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর তাদের করণীয় সম্পর্কে একটি
‘পথ নকশা’ এ স্কুলের সকল অংশীজনদের কাছে তুলে ধরবেন। নির্বাচিত এসোসিয়েশন
সকলের জন্য তাদের দরজা খোলা রাখবেন - অন্যদের সু-পরামর্শ দ্বিধাহীনভাবে
গ্রহণ করবেন বলে বিশ্বাস রাখি। যে সকল প্রাক্তন শিক্ষার্থী দেশের বাইরে
আছেন তাদের সাথে সংযোগ বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নিবেন। কাঠামোগত উন্নয়ন এর
পাশাপাশি শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
আমি
ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যাশা করি নুতন অ্যালামনাই এসোসিয়েশন নীচের কাজগুলো
করার বিষয়ে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন:
ঢাকা এবং
ঢাকার বাইরে অবস্থানরত উন্নত মানের স্কুলের সাথে সহযোগিতা বিনিয়ম বিষয়ক
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও কার্যক্রম গ্রহণ;বিদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে
শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচীর সুযোগ তৈরী করা; জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে
গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের পরামর্শ ও সহযোগিতা
প্রদান;অন্ত: ও আন্ত: স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ;বিদেশী ভাষা
(ইংরেজী ও ফরাসি) শিক্ষার সুযোগ তৈরী করা;উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে
উৎসাহিতকরণ;স্কুল ফুটবল, ক্রিকেট ও বাস্কেটবল টিম গঠন ও খেলা আয়োজন;ছোট
আকারে গবেষণা প্রকল্পের জন্য সহযোগিতা;অ্যালামনাই-শিক্ষক-অভিভাবক-ছাত্র
সমন্বয়ে পরামর্শ সভা আয়োজন;
দৈনন্দিন জীবনের চলার জন্য শিক্ষা যেমন,
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, শারিরিক সুস্থতা বিষয়ক শিক্ষা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের
শ্রদ্ধা করার শিক্ষা, মানবিক সমাজ গঠনের ধারনা দেয়া, ছোট ছোট দুর্ঘটনায়
করণীয় শিক্ষা, ইত্যাদি বিষয়ে সেমিনার বা পরামর্শ সভা আয়োজন।
প্রকৃতি ও
পরিবেশ সংরক্ষণ, সবুজায়ন কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন;জাতীয় যাদুঘর, বিজ্ঞান
যাদুঘর, প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ
গ্রহণ;একটি মানসম্মত ক্যান্টিন স্থাপন করা;একটি আধুনিক বিজ্ঞানাগার
স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা;
অ্যালামনাই সদস্যরা স্কুলের সুনাম এবং
উন্নয়ন কার্যক্রম নিশ্চিতকরণে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করার
সুযোগ নিবেন। শিক্ষাগত এবং পেশাদার উন্নয়ন কর্মসূচিতে অবদান রেখে
শিক্ষার্থী এবং স্কুল প্রশাসনকে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা প্রদান করবেন।
ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্কুলের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং চেতনা বজায় রাখতে
সহায়তা করবেন। বৈশ্বিক ধ্যান ধারণার দেশীয় প্রয়োগে স্কুল কর্তৃপক্ষকে
উৎসাহিত করবেন। যারা নির্বাচিত হতে পারেন নি এবং যারা নির্বাচিত হয়েছেন
সবাই মিলে মিশে সবার প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে একসাথে কাজ করার মাধ্যমে
এগিয়ে গেলে অনেক লক্ষ্য অর্জন সহজতর হবে।
সবাইকে প্রাণখোলা অভিনন্দন। আমাদের সবার জন্য সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা করি।
লেখকঃ প্রাক্তন ছাত্র, কুমিল্লা জিলা স্কুল (এসসসি ১৯৮৬ ব্যাচ)
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কর্মরত।
