আজ
৪ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক দেবিদ্বার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের রক্তঝরা এই দিনে
পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে শক্রমুক্ত হয়েছিল কুমিল্লার দেবিদ্বার।
দীর্ঘ ৯ মাসের লড়াকু সংগ্রাম আর ত্যাগের বিনিময়ে এই দিনে দেবিদ্বারের আকাশে
উড়েছিল স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা।
৭১ এ দেবিদ্বারবাসীর আছে
গৌরবোজ্জল ইতিহাস। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যানুযায়ী, স্বাধীনতা ঘোষণার
মাত্র ৫ দিনের মাথায় ৩১ মার্চ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত ১৫ জনের একটি হানাদার দল কুমিল্লা সেনানিবাসের
দিকে আসার পথে দেবিদ্বারের ভিংলাবাড়ি নামক স্থানে অবরুদ্ধ হয় এবং জাফরগঞ্জ
পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় জনতার সাথে যুদ্ধে পুরা দলটাই নিশ্চিহ্ন হয়।
এই অসম সাহসিক যুদ্ধে ৩৩ জন বাঙালি শহীদ হন। পরবর্তীতে ৬ সেপ্টেম্বর
দেবিদ্বারের বারুর গ্রামে পাকহানাদারদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে বীর
মুক্তিযোদ্ধা মো. জয়নাল আবেদীন, বাচ্চু মিয়া, শহীদুল ইসলাম, আলী মিয়া, আ.
ছালাম, সফিকুল ইসলাম ও মো. হোসেনসহ ৭ জন বীর সন্তান শহীদ হন। এ ছাড়াও ১৭
সেপ্টেম্বর মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০ জন বাঙালিকে
ধরে এনে দেবিদ্বার উপজেলা সদরের প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কার্যালয়ের সামনে
গর্ত খুঁড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। ভাগ্যক্রমে
একজন বেঁচে গেলেও বাকি ১৯ শহীদকে সেখানে মাটিচাপা দেয় পাকবাহিনী। সেই
বধ্যভূমিতে বর্তমানে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে।
একাত্তরের ৩
ডিসেম্বর যুদ্ধের মোড় ঘুরতে থাকে। এদিন মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে
হানাদারদের ওপর প্রবল আক্রমণ চালায় এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের
কোম্পানীগঞ্জ ব্রিজটি মাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়। মিত্র বাহিনীর ২৩ মাউন্টেড
ডিভিশনের মেজর জেনারেল আরডি বিহারের নেতৃত্বে একটি ট্যাংক বহর বুড়িচং ও
ব্রাহ্মণপাড়া হয়ে দেবিদ্বারে প্রবেশ করে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর
সাঁড়াশি আক্রমণে দিশেহারা হয়ে ৩ ডিসেম্বর রাতেই পাক হানাদাররা দেবিদ্বার
ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের দিকে পালিয়ে যায়। তবে মিত্র বাহিনীর ট্যাংক
বহরটি ঢাকা অভিমুখে যাওয়ার সময় মোহনপুর এলাকায় ভুল বুঝাবুঝির কারণে দুই
মিত্র গ্রুপের গোলাগুলিতে ৬ জন মিত্র সদস্য নিহত হওয়ার মতো মর্মান্তিক
ঘটনাও ঘটে।
অবশেষে ৪ ডিসেম্বর সকালে দেবিদ্বার সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়।
দেবিদ্বারের জনতা বিজয়ের উল্লাসে স্বাধীন বাংলার পতাকা হাতে রাজপথে নেমে
আসে। দেবিদ্বার মুক্ত দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য স্থানীয়
প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদদের স্মরণে
পুষ্পস্তবক অর্পণ, বিজয় র্যালি ও আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা
হয়েছে।
