সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে কর্মবিরতিতে ‘অনড়’
শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তা না হলে ‘চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারী
আইন’ অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুঁশিয়ারি
দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
বুধবার বিকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
সহকারী শিক্ষকদেরকে অবিলম্বে কাজে যোগদান করে শিক্ষার্থীদের তৃতীয়
প্রান্তিকের পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম
যথাযথভাবে সম্পন্নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে।
“অন্যথায় এ ধরনের
শৃঙ্খলা-বিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চাকুরি আইন, আচরণ
বিধিমালা ও ফৌজদারী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
একাদশ গ্রেডে বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে সরকারি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের দুটি মোর্চা আন্দোলন করছে।
ফলে সোমবার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হচ্ছে না।
শিক্ষকদের দুটি মোচাই বলছে, দাবি বাস্তাবয়ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে।
বুধবার
সকাল থেকে সহকারী শিক্ষকদের চারটি সংগঠনের মোর্চ ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি
বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ‘কমপ্লিট
শাটডাউন’ ঘোষণা করে কর্মবিরতি পালন করেছেন।
ফলে বেশকিছু বিদ্যালয়ে এদিনও বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি।
শিক্ষক নেতাদের শোকজের প্রতিবাদে মোর্চাভুক্ত শিক্ষকরা উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়গুলোর সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেছেন।
এদিন বেশ কিছু বিদ্যালয়ে পরীক্ষা না নিলেও কিছু কিছু বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকরা উদ্যোগী হয়ে পরীক্ষা পরিচালনা করেছেন বলে জানা গেছে।
কদিন
আগে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে
আন্দোলন শুরু করে। পরে একাদশ গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করে
দাবি বাস্তায়ন পরিষদ।
মোর্চার আহ্বায়ক ও নোয়াখালী সদর উপজেলার
ত্রিপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন
মাসুদ বলেন, “আমরা বৃহস্পতিবারও কর্মবিরতি ও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি
চালিয়ে যাবো। একাদশ গ্রেডে বেতনের আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত
কর্মসূচি চলবে।”
এদিকে বেতন বাড়ানো ও গ্রেড জটিলতা নিরসনের দাবিতে
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ যখন বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে
কর্মবিরতি পালন করছেন, তখন আরেকটি অংশ একই দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলে
‘তালা ঝোলানোর’ হুমকি দিয়েছেন।
‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য
পরিষদ’ নামের এই মোর্চাটি একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চ গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও
সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করছে।
বারোটি
সংগঠনের এই মোর্চার আহ্বায়ক আনিসুর রহমান বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, “আমরা একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণে সরকারকে বুধবার পর্যন্ত
সময় দিয়েছিলাম। দাবি পূরণ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলে স্কুলে তালা
ঝোলানোর কর্মসূচি শুরু হবে।”
এ অবস্থায় বুধবার বিকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরতে হুঁশিয়ারি দিল।
শিক্ষকদের
দাবি বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা
হয়েছে, সহকারী শিক্ষকদের একাদশ গ্রেডে বেতন দেওয়া, ১০ ও ১৬ বছর চাকরি শেষে
উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন, প্রধান শিক্ষকদের সহকারী শিক্ষক পদে পদোন্নতি
দেওয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি
পাঠানো হয়েছে।
দাবিগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে অর্থ উপদেষ্টা ও বেতন-কমিশনের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
গেল
৭ অগাস্ট সহকারী শিক্ষকদের বেতন ত্রয়োদশ গ্রেড থেকে একাদশ গ্রেডে উন্নীত
করার বিষয়টি বিবেচনা করতে জাতীয় বেতন কমিশনের সভাপতিকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি
পাঠানো হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণের বিষয়ে পে-কমিশনের
প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই অর্থ বিভাগ পদক্ষেপ নেবে বলে ১০ নভেম্বর অর্থবিভাগে
শিক্ষকদের সঙ্গে সভায় জানানো হয়েছে।
এসব উদ্যোগের পরও শিক্ষকদের
কর্মবিরতি ও পরীক্ষা গ্রহণে ‘বাধা’ দেওয়ার বিষয়টিকে ‘সরকারি চাকরি আইন ও
আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি’ এবং ফৌজদারী আইনেও ‘বিবেচ্য’ বলে তুলে ধরেছে
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
