শিক্ষার মানের ‘অবনতি’ অভিভাবক, শিক্ষক—সবাইকে ‘উদ্বিগ্ন করেছে’ বলে স্বীকার করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার।
এই
উদ্বেগ কাটাতে ‘বাস্তবসম্মত ও নির্মোহ মূল্যায়ন ছাড়া কোন পথ নেই’ বলেও
তিনি মন্তব্য করেছেন বলে বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে
বলা হয়েছে।
এদিন এক সেমিনারে উপদেষ্টা বলেছেন, “শিক্ষার মান নিয়ে যে
উদ্বেগ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান, তা কাটাতে বাস্তবসম্মত ও নির্মোহ মূল্যায়ন
ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।
“অভিভাবক, শিক্ষক-সকলেই মানের অবনতি নিয়ে
উদ্বিগ্ন। বহু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তৃণমূল পর্যায়ের বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলোকে
আরও গভীরভাবে বুঝতে হবে।”
বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার মান
আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে কোথায় অবস্থান করছে, তা জানতে সরকার ইতোমধ্যে
একটি আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন কাঠামোর সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে
তুলে ধরেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
সি আর আবরার নামে পরিচিত ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক বলেন, “আমরা হয়তো নিচের দিকেই
থাকব-তাতে সমস্যা নেই। অন্ততপক্ষে জানবো আমরা কোথায় আছি, কী ঠিক করতে হবে।”
পূর্ববর্তী
সময়ে ফলাফল প্রকাশের ভুল সিদ্ধান্তগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “পরীক্ষা
না নিয়ে নম্বর দেওয়া ছিল অগ্রহণযোগ্য। এটি শিক্ষাব্যবস্থাকে পেছনে ফেলে
দিয়েছিল। আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছি।”
মূল্যায়নে
শিক্ষার্থীদের ‘রিডিং ক্যাপাসিটি’, গণিতে সক্ষমতা-দুই ক্ষেত্রেই
উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা রয়েছে বলে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন উপদেষ্টা।
তার মতে, এগুলোকে আরও বড় পরিসরে মূল্যায়ন করার প্রয়োজন রয়েছে।
‘কোচিং,
প্রাইভেট টিউশন ও গাইড’ বইয়ের প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “শুধু
নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোচিং বা গাইড বই বন্ধ হবে না। কেন এগুলোর চাহিদা তৈরি
হচ্ছে—তা আগে বুঝতে হবে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কেন এগুলোর ওপর নির্ভরশীল,
সেটাই মূল প্রশ্ন।”
স্কুল-কলেজের প্রশাসনে ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ’
শিক্ষাব্যবস্থায় বিপর্যয় এনেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটি ঠিক করা এখন
আমাদের সবচেয়ে জরুরি কাজগুলোর একটি।”
রাজধানীর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর
মিলনায়তনে আয়োজিত এই সেমিনারের বিস্তারিত তুলে ধরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা
মন্ত্রণালয় আরেকটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর
মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
বিশেষ
অতিথিদের মধ্যে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার ছাড়াও ছিলেন শিক্ষা নিয়ে কাজ
করার বেসরকারি সংস্থা ‘গণস্বাক্ষরতা অভিযান’ এর নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে
চৌধুরী, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো: শামসুজ্জামান।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন।
সেমিনারে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহার উদ্ভাবিত ‘শান্তিগঞ্জ মডেল’ বিষয়ে আলোচনা হয়।
মন্ত্রণালয়
বলছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি করা এবং
শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করার বিষয়ে সৃজনশীল মডেলটি ‘শান্তিগঞ্জ মডেল’ নামে
স্বীকৃতি লাভ করেছে। এর মাধ্যমে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের
মূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষার্থীদের ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষকদেরও পরোক্ষভাবে
মূল্যায়ন করা হয়।
এই বিশেষ মানোন্নয়ন পরীক্ষা ও র্যাঙ্কিং ব্যবস্থা
সুনামগঞ্জে একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করেছে তুলে ধরে মন্ত্রণালয়
বলছে, এটি শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়মিত উপস্থিতি, পরীক্ষায় ৮০ শতাংশ
শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা ও ঝরে
পড়ার হার রোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
‘শান্তিগঞ্জ মডেল’ এর প্রশংসা
করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন,
“সুনামগঞ্জের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে গৃহীত এই পদক্ষেপ অত্যন্ত
প্রশংসনীয় উদ্যোগ। পরীক্ষার ভিত্তিতে স্কুল ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের
র্যাঙ্কিং ব্যবস্থা সত্যিই এক ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা।
“আমি মনে করি, সারা দেশে এই উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হলে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে।”
