রোববার ২৩ নভেম্বর ২০২৫
৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ভূমিকম্পে সচেতন হউন
অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ: রোববার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৯ এএম আপডেট: ২৩.১১.২০২৫ ১:১০ এএম |

  ভূমিকম্পে সচেতন হউন
এবার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদীতে। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ছিল। নরসিংদীর মাটিতে ফাটল পরিলক্ষিত হয়। এ পর্যন্ত যতগুলো ভূমিকম্প সংঘটিত হয় তার মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। গত পাঁচ বছরে এত শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয় নাই। সারাদেশে দুই শতাধিক হতাহতের খবর জানা যায়। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৭ রিকটার স্কেল। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৫২ ব্যাচের ছাত্র রফিউল ইসলামসহ পুরানো ঢাকায় ৫ জন, নারায়ণগঞ্জের ১ জন ও নরসিংদীতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। বারিধারায় কিছু ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়। কলাবাগান আবেদখালী রোডে ৭ তলা ভবন হেলে পড়ে। গাবতলীর ছাদ ধসে ৩ জন আহত হন। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের থানায় ৫ টি ফাটল পরিলক্ষিত হয়। আরমানিটোলার স্বামীবাগে ৮ তলা হেলে পড়ার খবর পাওয়া যায়। সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হতাহতের জন্য ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। কসাইটুলিতে ৮ তলা ভবন ধসের খরব পাওয়া যায়। একই সময় কলকাতায় ৫.৫ রিকটার স্কেলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ী ভাঙ্গাসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়।
এ জোনে যে বিপুল শক্তি প্রায় হাজার বছর ধরে সঞ্চিত হয়ে আছে তাতে যে কোন সময়  ৮.২ থেকে ৮.৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য আমাদের করণীয় ও প্রস্তুতির কথাটিও বারবার উচ্চারিত হয়েছে। নানারকম পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরাতো গায়ে এসে না পড়া পর্যন্ত নজর দেই না। তাই দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের উদাসীনতার বিষয়টি স্পষ্ট। কিন্তু ভূমিকম্প এমন একটি দুর্যোগ, যার পূর্বাভাস জানার সুযোগ কম। তাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি রাখাই উত্তম। প্রকৃতি আমাদেরকে বারবার সতর্ক করছে কিন্তু আমরা সাবধান হচ্ছি না। ফলে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আমাদের ঘিরে রাখছে। আতঙ্কগ্রস্থ করে তুলছে।
সিকিম, আসাম ও এর আশপাশের এলাকা থেকে প্রায়ই ভূমিকম্প সৃষ্টি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার জন্য দেশের ভেতরে ও বাহিরে ভূ-অভ্যন্তরে এত পরিমাণ শক্তি জমা হয়েছে। যেকোন মুহূর্তে ভূমিকম্পের মাধ্যমে তা বের হয়ে আসবে। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস আগে থেকে জানা যায় না এবং একে আটকানোর কোন পথ নেই। এ অবস্থায় সচেতনতাবৃদ্ধি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর নাই। যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায় আর এ জন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা। ভূমিকম্পের সময় ও তারপর কি করণীয় সে সম্পর্কে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ভূমিকম্প সামলাতে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারাভিযান। সরকারি উদ্যোগে ফায়ার সার্ভিস, ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবসময় প্রস্তুত রাখতে হবে। ভূমিকম্পের সময় দালান ভেঙ্গে পড়ে মানুষের বেশি ক্ষতি হয়। তাই নির্মাণাধীন ভবনগুলো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি হচ্ছে কিনা, কর্তপক্ষকে সে ব্যাপারে তদারকি জোরদার করতে হবে। উপকূলীয় এলাকা, যেখানে সুনামি, ভূমিকম্প Ñসবধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের আশংকা বেশি থাকে, সেখানে তৈরি করতে হবে অনেক আশ্রয় কেন্দ্র। যাতে মানুষ বিপদের সংকেত পাওয়া মাত্রই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারে। মানুষকে বোঝাতে হবে ভূমিকম্পে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।
২ ডিসেম্বর’২৪ এর ভূমিকম্পটি ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় অনুভূত হয়েছে। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৬। ঐ দিন সকাল ৯ টা ৩৫ মিনিটে ৩৩ সেকেন্ডে ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন নগরবাসী। আতঙ্কে অনেকে ভবন ছেড়ে বাহিরেও বেড়িয়ে আসেন। উৎপত্তিস্থল যত কম গভীরে হবে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা ততই বেশী হবে। ডিসেম্বর’২৪ এর ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও কুমিল্লায় আতংকে একটি পোশাক কারখানা থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৮০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক ভবনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
দেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা লক্ষাধিক বলে এক পরিসংখ্যানে জানা যায়। পার্শ^বর্তী দেশগুলোতে সৃষ্ট ভূকম্পনে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। নতুন ভবন নির্মাণে সরকারি তদারকি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। রাজধানীতে ও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নগরীগুলোতে দিন দিন বাড়ছে আকাশচুম্বী অট্টালিকার সংখ্যা। স্বল্প জায়গায় এত বড় বড় স্থাপনা ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি করা হচ্ছে এসব অট্টালিকা। যা স্বল্পমাত্রার ভূকম্পনেই ভেঙ্গে পড়তে পারে। এছাড়া ভূমিকম্প পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায়ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। তৈরি করতে হবে বিপুল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। জনসচেতনার জন্য চালাতে হবে ব্যাপক প্রচারণা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানো সম্ভব নয়; কিন্তু আমরা নিজেরাই যেন ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি না বাড়াই, সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনে দেশবাসীর মনযোগ আকর্ষণের কোন বিকল্প নাই। ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মেনে না চলা, বন উজাড়, পাহাড় কেটে ধ্বংস করাসহ নানা উপায়ে আমরা ভূমিকম্প নামক মহাবিপদকে ডেকে আনছি।
কুমিল্লা নগরীতে মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৩৮০ টি জরাজীর্ণ ও নকশা বহির্ভূত ভবন। এসব আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন অধিক ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১৫ সালের শুরুতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) কর্তৃপক্ষ নগরীর ৩৮০টি ভবনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু গত ১০ বছরেও এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কুসিকের মালিকানাধীন হাজি তারু মিয়া পৌর বিপণি ও পৌর কর্মচারী কল্যাণ সমিতি ভবনসহ বাণিজ্যিক ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। নগরীর ঝাউতলা এলাকায় কুমিল্লার দুই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বাসভবন রাজলক্ষ্মী ও কামিনী কুটির, অশোকতলার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জাতীয় মহিলা সংস্থার কার্যালয়, কান্দিরপাড় লাকসাম সড়কের বিএমএ ভবন, এম ভট্টাচার্য অ্যান্ড কোম্পানীর ভবন, ধর্মসাগরপাড়ের কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয়, রাণীর দীঘির পাড় ফুলার হোস্টেল, ঠাকুরপাড়ার মৃণালিনী দত্ত ছাত্রীনিবাস, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরের তিনটি ভবন, বাগিচাগাঁওয়ের গণপূর্ত বিভাগের কোয়ার্টার, মনোহরপুরের জমি বন্ধকি ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনের তালিকায় রয়েছে। জেলা প্রশাসক ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ, নকশাবহির্ভূত ও নকশাবিহীন ভবনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ













http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
পরপর ভূমিকম্প সতর্ক অবস্থানে কুমিল্লার ফায়ার সার্ভিস
কুমিল্লায় আসামি ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ
দেশের সংকটে বিএনপিসর্বদা ঐক্যবদ্ধ- মনিরুল হক চৌধুরী
ভুয়া সনদে চাকরি করছেন কুবি শিক্ষক!
চান্দিনায় এলডিপির লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন ও গণসংযোগ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
১০৭ বছর আগে প্রতিদিনই ভূমিকম্প হয়েছে কুমিল্লায়
কুমিল্লাকে বিশ্বের অন্যতম মহানগরে পরিণত করব: মনিরুল হক চৌধুরী
সর্বোচ্চ ঝাঁকুনিতেকাঁপলো দেশ
কুমিল্লায় ভূমিকম্পে আতঙ্ক
কয়েক হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে কুমিল্লায় জামায়াতের বিশাল শোডাউন শহরজুড়ে ব্যাপক আলোচনা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২