তানভীর দিপু:
কুমিল্লায়
মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেওয়ায় ক্ষোভে মা ও ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
উঠেছে বিল্লাল হোসেন নামে এক মাদক ব্যবসায়ী। সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে
জেলার আদর্শ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী বসন্তপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা
হলেন- বসন্তপুর গ্রামের মৃত আজগর আলীর স্ত্রী রাহেলা বেগম (৬৫) ও তার ছোট
ছেলে কামাল হোসেন (৩৫)। ঘটনার পর থেকে ঘাতক বিল্লাল হোসেন পলাতক রয়েছে। এ
ঘটনায় ঘাতকের স্ত্রী আকলিমা খাতুনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত বিল্লাল একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে মামলা রয়েছে।
জানা
যায়, বিল্লাল হোসেন বেশ কয়েক বছর ধরে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। সোমবার
সকালে বিল্লাল তার বাড়িতে মাদক নিয়ে প্রবেশ করে। এ সময় মাহফিল শেষ করে ছোট
ভাই কামাল হোসেনও বাড়িতে আসে। কামাল তার বড় ভাইকে মাদক নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ
না করতে নিষেধ করে। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। পরে বড়
ভাই বিল্লাল তার ঘরে প্রবেশ করে ছুরি এনে ছোট ভাই কামালকে এলোপাতাড়ি
ছুরিকাঘাত করতে থাকে। তা দেখে মা রাহেলা বেগম বাঁধা দিতে এলে তাকেও
এলোপাতাড়ি কোপায়। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে কামাল নিহত হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার
পথে মা রাহেলা বেগমও মারা যায়।
পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সাথে কথা বলে
জানা গেছে, সম্প্রতি প্রবাস থেকে ফেরত এসেছেন ছোট ভাই কামাল হোসেন। তারপর
থেকেই জমি জমার ভাগাভাগি নিয়ে কামাল ও বিল্লালের মধ্যে ঝগড়া ঝাটি শুরু হয়।
এর মধ্যে কামাল কে বাড়িতে না আসতে হুমকি-ধমকি ও দেয় বিল্লাল। সব শেষ সোমবার
সকালে কামাল বাড়িতে গেলে বিল্লালের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে
ছুরিকাঘাত করা হয়। ছোট ভাই কামালকে বাঁচাতে গিয়ে রাহেলা বেগমও চুরি আঘাতে
আহত হন, হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নিহত কামালের স্ত্রী আমেনা
বেগম জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আমার স্বামী কামালের সাথে
ভাসুর বিল্লাল এর দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে এই তাদের মধ্যে
ঝগড়াঝাঁটি প্রকট হয়। বিল্লাল ভাই বিভিন্ন সময় আমার স্বামীকে বাড়িতে আসতে
হুমকি-ধমকি দিত। কারন আমার স্বামীর সাথে তার জমি জমা নিয়ে সবসময়ই ঝগড়াঝাটি
ছিল।
আমেনা বেগম আরো জানান, বিল্লাল ভাই গত পাঁচ বছর যাবত মাদকের
পরিবহনের সাথে জড়িত। আমার স্বামী তার ভাইকে মাদক সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে
বাধা দিলে সেই সূত্র ধরে আমার স্বামীর উপর হামলা করে। আমার শাশুড়ি বাঁচাতে
আসলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়।
নিহত কামাল হোসেনের প্রতিবেশী ও মামা আবু
তাহের জানান, বিল্লাল ও কামাল এর মধ্যে মূলত জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে
দীর্ঘদিন যাবত ঝামেলা চলছিল। যতটুকু জানি বাড়িতে খড়ের মোড়ল স্থাপন নিয়ে
তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এছাড়া বিল্লালের কিছুটা মাদকসমৃদ্ধ তার কথাও
আমরা শুনেছি। এই নিয়েও তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি
মোঃ মহিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিল্লালের স্ত্রীকে
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। অভিযুক্ত বিল্লাল দীর্ঘদিন ধরে মাদক
ব্যবসা করছিলেন। জমি জমা নিয়ে তাদের পূর্ব বিরোধ রয়েছে এবং তার ছোট ভাই
মাদক ব্যবসা বাঁধা দেয়ায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে বলে পারে বলে
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত দুজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া জমি
সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের
পর থেকে বসন্তপুরের ওই বাড়িতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। সিআইডি
এবং পিবিআই এর পৃথক তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
