ঢাকা-চট্টগ্রাম
মহাসড়কের কুমিল্লায় পরপর দুইরাতে পৃথক দুটি গরুবাহী ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনা
ঘটেছে। অরক্ষিত মহাসড়কে এমন ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।
শনিবার
(১৫ নভেম্বর) রাতে মহাসড়কের জেলার চৌদ্দগ্রামে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ১৫ গরুসহ
ট্রাক ছিনতাই এবং সোমবার (১৭ নভেম্বর) ভোরে দাউদকান্দি থেকে গরুবাহী
ট্রাক ছিনিয়ে এনে চান্দিনায় ট্রাক বদল করে ৬ গরু ছিনতাই করে ছিনতাইকারীরা।
উভয় ঘটনায় গরু ব্যবসায়ী, ট্রাক চালক ও হেলপারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে
হাত-পা বেঁধে আটকে রাখার ঘটনা ঘটে। চান্দিনায় গরু ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থল
সনাক্তে চান্দিনা ও দাউদকান্দি থানা পুলিশের ধাক্কা-ধাক্কাতে বিপাকে
ভূক্তভোগীরা।
জানা যায়- সোমবার (১৭ নভেম্বর) ভোরে উপজেলার কাঠেরপুল
এলাকার বন বিভাগের অফিসের সামনে এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। রবিবার (১৬
অক্টোবর) বিকেলে দিনাজপুর থেকে ৮টি গরু নিয়ে একটি ট্রাক চট্টগ্রামের
উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল তারা।
ট্রাকচালক মো. রুকনুজ্জামান জানান,
দিনাজপুর থেকে গরুবাহী ট্রাক নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার
দাউদকান্দি ব্রিজ অতিক্রমের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর ভোরে ফাঁকা জায়গায়
সামনে আরেকটি গাড়ি ব্যারিকেড দেয়। তিনি বলেন- “গাড়ি থামানো মাত্র আমাকে
নামিয়ে মারধর করে, হাত-পা বেঁধে তাদের গাড়িতে তুলে ফেলে। এরপর আমার
ট্রাকটিই ছিনতাইকারীরা চালিয়ে চান্দিনার কাঠেরপুল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে
ট্রাক থেকে ৮টি গরুর মধ্যে ৬টি গরু আনলোড করে তাদের গাড়িতে তুলে নেয় এবং
তাদের গাড়িতে জায়গা না থাকায় বাকি ২টি গরু ফেলে যায়।
তার দাবি-
ছিনতাইকারীরা গরুগুলো তাদের গাড়িতে তুলে চলে যাওয়ার পর মাত্র দুই মিনিট পর
একটি সিএনজি যোগে পোশাকধারী কয়েকজন পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। আমরা তাদেরকে সব
জানালেও তারা প্রথমে যেতে চায়নি। আমরা বারবার অনুরোধ করলে তারা আমাদের
ভ্যানে তুলে অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে নেয়। যে রাস্তায় ছিনতাইকারীরা
পালিয়েছে আমরা পুলিশকে তা দেখালেও তারা বলে- ওটা তাদের এলাকা নয়।” তিনি আরও
জানান- টহলরত পুলিশ চান্দিনা থানার না হাইওয়ে থানার তা আমরা শনাক্ত করতে
পারিনি।
গরুর মালিক মোখলেছুর রহমান জানান, দাউদকান্দি এলাকা থেকে
ট্রাকটি জিম্মি করে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চান্দিনা কাঠেরপুল এলাকায় আনা হয়।
“বনবিভাগ অফিসের সামনে অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার হাত দুটো পিছনে বেঁধে ফেলে।
ছিনতাইয়ের সময় চান্দিনা থেকে নিমসার কাঁচা বাজারে যাওয়ার সময় এক ব্যবসায়ী
ঘটনাটি দেখে ফেলায় তাকেও গাছের সাথে বেঁধে তার মোবাইল নিয়ে যায়
ছিনতাইকারীরা।
মোখলেছুর আরও বলেন- “ছিনতাইকারীরা মাত্র কয়েক হাত দূরে
যেতে না যেতেই একটি সিএনজিতে পুলিশের পোশাক দেখে আমরা পুলিশ-পুলিশ বলে
ডাকলাম। কিন্তু পুলিশ ডাকে কোনো সাড়া দেয়নি। পরে হাত বাঁধা অবস্থায় দৌড়ে
কাছে গিয়ে ঘটনাটি জানালে পাঁচ মিনিট ঘুরিয়ে এনে বলেন এটা তাদের এলাকা না।”
তিনি অভিযোগ করেন, ঘটনাস্থল চান্দিনা থানার এলাকা হলেও থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ওসি বলেন দাউদকান্দি থানায় অভিযোগ করতে।
ঘটনা
সম্পর্কে জানতে চাইলে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ ওসি মো. জাবেদ উল
ইসলাম বলেন, “জানতে পারি, গরুবাহী ট্রাকটি দাউদকান্দি এলাকায় ছিনতাই হয়।
ছিনতাইকারীরা ট্রাকটি তাদের হেফাজতে নিয়ে কাঠেরপুল এলাকায় এক গাড়ি থেকে
আরেক গাড়িতে গরু আনলোড করে।”
ঘটনার সময় পুলিশের উপস্থিতি নিয়ে তিনি
বলেন- “ওই সময় পুলিশ ভ্যানে আমিই ছিলাম। ভুক্তভোগীরা আমার সাথেই কথা
বলেছেন। আমি চারদিকে মোবাইল পার্টিকে জানিয়েছিলাম; কিন্তু তাদের খুঁজে
পাওয়া যায়নি।” কেন অভিযোগ নেওয়া হয়নি, এ প্রশ্নে ওসি বলেন- “যেহেতু
ব্যারিকেড দিয়ে ছিনতাইয়ের মূল ঘটনাটি দাউদকান্দি এলাকায় হয়েছে, তাই আইনগত
ব্যবস্থা ওইখানে নিতে হবে। যেকারণে আমাদের থানায় অভিযোগ নেওয়া হয়নি।”
অপর
দিকে দাউদকান্দি মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) জুনায়েদ চৌধুরী বলেন-
“এ ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে যদি সত্যিই ছিনতাই হয়ে থাকে এবং গরুগুলো
চান্দিনার কাঠেরপুল এলাকায় এক গাড়ি থেকে আরেক গাড়িতে স্থানান্তর করা হয়ে
থাকে, তাহলে এর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব চান্দিনা থানার। বিষয়টি
যেহেতু জানতে পেরেছি, এখন খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত দেখে ব্যবস্থা নেব।”
এদিকে,
একই শনিবার মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ১৫টি গরু
বোঝাই ট্রাক ছিনতাই করেছে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। এ ঘটনায় রবিবার রাতে
অজ্ঞাতনামা ৯-১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে গরু ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের
লোহাগড়ার মুহাম্মদ আবদুল্লাহ তাওসীফ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়-
তাদের গরু ব্যবসার প্রতিনিধি সেলিম মিয়া নামের এক ব্যক্তি। শনিবার সেলিম
মিয়ার মাধ্যমে কুষ্টিয়া জেলার বাইলপাড়া হাট থেকে ২৮ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা
মূল্যের ১৫টি গরু ক্রয় করেন। বিকেল সাড়ে তিনটায় রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা
থানার ঠাকুরমারা গ্রামের মোঃ সেলিমের চালিত ট্রাকে(ঢাকামেট্রো-ট-২০-৫১৯৮)
গরু বোঝাই করে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া বিজিবি ক্যাম্প এলাকার উদ্দেশ্যে
রওয়ানা করে। রাত দেড়টার দিকে ট্রাকটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম
পৌরসভার সোনাকাটিয়া এলাকায় পৌঁছে। ওই সময় মহাসড়কে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ৯-১০
জনের একটি টিম লেজার লাইট দিয়ে ট্রাকটি থামানোর সংকেত দেয়। সংকেত পেয়ে চালক
মোঃ সেলিম গরুবোঝাই ট্রাকটি থামায়। ট্রাকে মাদকদ্রব্য আছে বলে ট্রাক চালক,
হেলপার ও গরু ক্রয়-বিক্রয় প্রতিনিধিকে কিল-ঘুষি মেরে ডাকাত চক্র তাদেরকে
তাদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসে উঠায়। এরপর সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র তিনজনের মাথায়
অস্ত্র ঠেকিয়ে গামছা দিয়ে হাত-পা ও স্কসটেপ দিয়ে মুখ বেঁধে দেয়। চক্রটি
তিনজনের ব্যবহৃত মুঠোফোন ও নগদ টাকা নিয়ে ছিনিয়ে নেয়। এরমধ্যে সংঘবদ্ধ
ডাকাত চক্রের দুই সদস্য গরুবোঝাই ট্রাকটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ভোর
লালমাইয়ে সড়কের পাশে একটি ঝোপে গরু ব্যবসায়ী, রাত চালুক ও হেলপার কে ফেলে
যায় ডাকাত চক্র ।
চৌদ্দগ্রাম মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ
হিলাল উদ্দিন আহমেদ জানান- ‘গরু বোঝাই ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্যবসায়ী
আবদুল্লাহ তাওসীফ বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ডাকাতচক্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্রকে গ্রেফতার করতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে’।
