
ক্রীড়াঙ্গনে
যৌন হয়রানি এখন আলোচিত বিষয়। ক্রিকেটের পর শ্যুটিংয়েও এবার আলোচনায় নারী
ক্রীড়াবিদদের বিরুদ্ধে হয়রানি। শনিবার ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়াম চত্বরে
ক্রীড়াঙ্গনে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে সম্মিলিত ক্রীড়াঙ্গন
ব্যানারে। সাবেক-বর্তমান তারকা ক্রীড়াবিদ, সংগঠক, আম্পায়ার, কোচ, কর্মকর্তা
এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এই কর্মসূচির আগে গত
১০ নভেম্বর এ সময়ের দেশের সেরা নারী শ্যুটার, বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা
কামরুন নাহার কলি বাংলাদেশ শ্যুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক জিএম
হায়দার সাজ্জাদের বিপক্ষে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছে। আর প্রতিবাদ কর্মসূচিতে এসে সাজ্জাদের
বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন সাবেক তারকা শ্যুটার সাফ ও কমনওয়েলথ
শ্যুটিংয়ে স্বর্ণজয়ী শারমিন রত্নাও।
ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে অভিযোগপত্রে
কামরুন নাহার কলি বলেছেন, ‘শ্যুটিং ফেডারেশনের দায়িত্বশীল পদে থাকা জিএম
হায়দার সাজ্জাদ আমাকে একাধিকবার মানসিক নির্যাতন, দুর্বব্যবহার ও অবমাননাকর
আচরণ করেছেন। তিনি তার অফিসে আমাকে একাধিকবার তলব করে চার ঘণ্টারও বেশি
সময় ধরে মানসিকভাবে অত্যাচার করেছেন, অথবা চাপ সৃষ্টি করেছেন এবং আমাকে
অপমানজনক কথাবার্তা বলেছেন। একজন নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে এটি আমার জন্য
অত্যন্ত মানসিক কষ্টের কারণ হয়েছে এবং আমার প্রশিক্ষণ ও পারফরম্যান্সে
নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
কলি আরো লিখেছেন, ‘তিনি শারমিন আক্তার নামের
একজন কোচ নির্বাচিত করেছেন, যার কোচিং দক্ষতা ও যোগ্যতা জাতীয় দলের
মানদণ্ডে যথেষ্ট নয়। উক্ত কোচ আমার প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ, অপমানজনক
মন্তব্য ও অসদাচরণ করে চলেছেন। আমি একজন স্কলারশিপধারী জাতীয় শ্যুটার হওয়া
সত্ত্বেও তিনি আমার সাথে অসম্মানজনক আচরণ করেন এবং বারবার আমাকে মানসিকভাবে
আঘাত করেন।’
‘আমি এই দুই ব্যক্তির আচরণে গভীরভাবে আতঙ্কিত, মানসিকভাবে
বিপর্যন্ত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাদের এই ক্ষমতার অপব্যবহার ও
অবমাননাকর আচরণ শুধু একজন নারী ক্রীড়াবিদকেই নয়, পুরো খেলাধুলার পরিবেশকেই
কলুষিত করেছেন। জি. এম. হায়দার সাজ্জাদ ও কোচ শারমিন আক্তারের বিরুদ্ধে
প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমার নিরাপত্তা ও মানসিক সুস্থতা
নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি।’
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুন নাহার কলি
জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘হ্যাঁ। আমি চিঠি দিয়ে এর বিচার চেয়েছি। আমরা জাহানারা
আপুর (নারী ক্রিকেটার জাহানারা আলম) যে অভিযোগ দেখতে পাই, সেটা যৌন হয়রানি
ও মানসিক নির্যাতন। ক্রীড়াঙ্গনে আমরা যে নারীরা আছি তাদের অনেকেরই অভিযোগ
আছে। তবে জাহানারা আপু সাহস করে বলতে পেরেছেন। সে সাহসী মেয়ে। আজকে পুরো
নারী ক্রীড়াঙ্গন ফুঁসে উঠেছে। এরপর থেকে সবাই সাহসী হয়ে গেছেন। আমরা
একটু-একটু কথা বলতে শুরু করেছি। অনেক ঘটনা হয়েছে, অনেক ঘটনা হচ্ছে।’
‘আমরা
যখন অভিযোগ করতে যাই, তখন বলে আমাদের কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে? আমরা জাতীয়
ক্রীড়া পরিষেদে অভিযোগ করেছি। তখন আমাদেরকে বলা হয়েছিল, কোনো প্রমাণ আছে?
কিছু প্রমাণ তো মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েই গেছে। আসলে আমরা তো অনুশীলনে ব্যস্ত
থাকি। কখনো তো সে উদ্দেশ্য ছিল না যে, এই লোকটার প্রমাণ আমাদের সংগ্রহ করতে
হবে। আমরা তো স্পাইগিরি করিনি।’
‘তিনি অনেক মেয়েদেরই ক্যাম্পে ডেকেছেন।
বিশেষ করে মেয়েদেরই বেশি ডেকেছেন। মেয়েদের সাথে তার সখ্যতা বেশি। আমাদের
সিনিয়র ও সাবেক শ্যুটাররা নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন যে, অনেকবার তাদের
সাথে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ হয়েছে। কিছু প্রমাণও দেখিয়েছেন। এখন যে মেয়েরা
সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন তারা সমঝোতা করেই নিচ্ছেন। শুটিং ফেডারেশনে এখন দুই
পক্ষ। একপক্ষ যারা সমঝোতা করে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন এবং আরেক পক্ষ যারা
নিপিড়িত হচ্ছেন। আমার মতো যারা প্রতিবাদ করছেন তারা বিভিন্নভাবে হয়রানির
শিকার হচ্ছেন।’
কলি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার
পর থেকে ধারাবাহিকভাবে মানসিক হয়রানির মধ্যে আছি। তাদের নির্যাতনে এতটা
অসুস্থ হয়েছিলাম যে, রেঞ্জে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। অনুরোধ করেছিলাম ছুটির
জন্য, পাইনি। এই নির্যাতনের মূলে ছিল জিএম হায়দার সাজ্জাদ’- অভিযোগ করে
বলেন কলি।
দুই শ্যুটারের অভিযোগ প্রসঙ্গে জিএম হায়দার সাজ্জাদ জাগো
নিউজকে বলেছেন, ‘ওরা মিথ্যা বলে বেড়াচ্ছে। ওদের মতো করে আমি বলতে পারি না।
কারণ, ওরা রাস্তায় নামলে তো আমি রাস্তায় নামতে পারি না। ওদের চিন্তাধারাই
ওই রকম। আসলে ওদের এই বিষয়টি নিয়ে আমি কথাই বলতে চাই না। আমি এ বিষয়টির
তদন্ত দাবি করছি। সরকারী পর্যায়ে কিংবা আপনারা গণমাধ্যম- এটা তদন্ত করা
হোক। আর কলি আমার বিরুদ্ধে ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে নালিশ করেছে। আমি শুনেছি।
হয়তো আরো কারো কাছে করেছে। গণমাধ্যমের কাছে আমার অনুরোধ, কোনো কিছু প্রমাণ
হওয়ার আগে নিজেরাই মিডিয়া ট্রায়াল করবেন না। কোনো বিষয় প্রমাণিত হওয়ার আগে
যদি মিডিয়া কাউকে দোষী করে, তাহলে ভবিষ্যতে দেশে নারী অ্যাথলেটদের উঠে
আসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। একই সাথে, আমরা যারা ভুক্তভোগি তারাও সামাজিক এবং
পারিবারিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। এই বিষয়টি বিবেচনা করে সবাই
দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ না করলে ভবিষ্যত প্রজন্মের অ্যাথলেটরা নিরুৎসাহিত
হবে।’
