
স্পিন-বান্ধব
উইকেট বানিয়ে চার জন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে নেমেছিল ভারত। দক্ষিণ
আফ্রিকাকে মাত্র ১২৩ রানে (লক্ষ্য) বেধে ফেলে জয়ের পাল্লাটাও তাদের দিকেই
ঝুঁকে ছিল। কিন্তু অধিনায়ক শুভমান গিলকে হারিয়ে তাদের দুভার্গ্যের শুরুটা
হয় গতকাল (শনিবার)। ফলে চতুর্থ ইনিংসে স্বাগতিকরা ব্যাটিংয়ে নামে ১০ জন
নিয়ে। এরপর মাত্র দুজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে নামা প্রোটিয়াদের বিপক্ষে
নিজেদের পাতা ফাঁদেই ধসে গেল ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ।
হারমার-মহারাজদের
ঘূর্ণিতে ১২৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে গেছে ভারত। এর মধ্য
দিয়ে ভারতের মাটিতে প্রোটিয়াদের টেস্ট জিততে দীর্ঘ ১৫ বছরের অপেক্ষার অবসান
হয়েছে। এর আগে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাগপুর টেস্টে শেষবার টেস্ট
জিতেছিল গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন দিন দেখতে টেম্বা
বাভুমাদের লম্বা সময় অপেক্ষায় থাকতে হলো।
প্রোটিয়া অধিনায়ক নিজেই সামনে
থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীরা অলআউট হওয়ার সময়ও
একপ্রান্তে ৫৫ রানে অপরাজিত ছিলেন বাভুমা। পুরো ম্যাচ মিলিয়ে এটাই ছিল কোনো
ব্যাটারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। ইডেন গার্ডেনে ব্যাটারদের
প্রতিকূল উইকেটে মাত্র আড়াই দিনেই শেষ হয়েছে সিরিজের প্রথম টেস্ট। এমন
উইকেট নিয়ে গতকাল থেকে সমালোচনা চলছে।
আজ (রোববার) তৃতীয় দিনের খেলা
শুরুর আগেই ইডেন টেস্ট থেকে গিলের ছিটকে পড়ার কথা জানায় ভারতীয় ক্রিকেট
বোর্ড বিসিসিআই। তবুও শেষদিকে স্বাগতিকরা যখন উইকেটের মিছিল শুরু করে, তখন
হয়তো ব্যাট হাতে অধিনায়ক ক্রিজে আসবেন এমন অপেক্ষায় ছিল কেউ কেউ। কিন্তু তা
আর হয়নি। ৭৭ রানে ৭ উইকেট পড়ার পর ক্রিজে ভারতের একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটার
ছিলেন অক্ষর প্যাটেল। কেশভ মহারাজের প্রথম ৪ বলে ২টি ছক্কা ও এক চার
হাঁকিয়ে মোমেন্টাম কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন তিনি।
পরমুহূর্তেই স্লগ সুইপ
খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়ে অক্ষর ক্যাচ দিয়েছেন বাভুমাকে। দশম ও শেষ ব্যাটার
হিসেবে ক্রিজে নেমে মোহাম্মদ সিরাজ টিকলেন না এক বলও। আউটসাইড এজ হয়ে
স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন এইডেন মার্করামকে। আম্পায়ার আউট কি না নিশ্চিত হওয়ার
জন্য সময় চাইলেন। কিন্তু বাভুমাদের আর পায় কে! ততক্ষণে তাদের বিজয়োল্লাস
শুরু। তৃতীয় আম্পায়ার থেকেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়–আউট সিরাজ। ৩০
রানের জয়ে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে লিড নিলো দক্ষিণ আফ্রিকা।
ভারতের মাটিতে
দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান ডিফেন্ড করে জিতল বাভুমার দল। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮
উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছে সিমন হারমার। এর আগে ওয়ানখেড়েতে ২০০৪ সালে
মাত্র ১০৭ রানের লক্ষ্য দিয়েও স্বাগতিকদের বিপক্ষে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।
অন্যদিকে, আফ্রিকানরাও নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান ডিফেন্ড করে
টেস্ট ম্যাচ জিতল। এর আগে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র ১৫৯ রানে
অলআউট হয়। সেটি পেরিয়ে ভারত প্রথম ইনিংসে ১৮৯ রান তোলে। ৩০ রানের লিড নিলেও
তা কাজে লাগেনি দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যর্থতায়।
বাভুমার ৫৫ রানে ভর করে
দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকদের পুঁজি দাঁড়ায় ১৫৩। রবীন্দ্র জাদেজা সর্বোচ্চ ৪
উইকেট শিকার করেন। আগের ইনিংসের লিড বাদ দিয়ে ১২৩ রানের ছোট লক্ষ্য পায়
ভারত। কিন্তু কঠিন পিচে এই রানও যে যথেষ্ঠ হয়ে উঠতে পারে সেটাই প্রমাণ দিলো
প্রোটিয়ারা। ভারতের পক্ষে ওয়াশিংটন সুন্দর সর্বোচ্চ ৩১ ও অক্ষর প্যাটেল
করেন ২৬ রান। আর কেউই লক্ষ্য তাড়ায় বলার মতো কিছু করতে পারেননি। সফরকারীদের
পক্ষে হারমার ৪, মার্কো জানসেন ও মহারাজ দুটি করে শিকার ধরেন।