জুলাই সনদ এবং গণভোট প্রশ্নে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই ২৩৭টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। ঘোষিত তালিকায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তিনটি আসনে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ছাড়া প্রার্থী হচ্ছেন স্থায়ী কমিটির ১০ জন সদস্য। বাকি ৬৩টি আসনের মধ্যে কিছু আসন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিকদের জন্য রাখা হয়েছে। গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
গণমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, দেশের অন্য দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে হয় প্রার্থী বাছাই করার কাজটি করে ফেলেছে অথবা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত। পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) পুরো মাত্রায় নির্বাচনে মনোযোগী হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এনসিপির সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনি জোট হতে পারে। এনসিপি ছাড়াও আওয়ামী লীগবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিএনপি ছাড় দিচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গেও কয়েকটি দলের সম্ভাব্য জোট গঠনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে নির্বাচনি ট্রেন এখন গন্তব্য ছেড়ে আসার পর ক্রমশ গতি পাচ্ছে। কে কোন আসনে প্রার্থী হলেন, কার কেমন যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা, সেই আলোচনা আর তর্ক-বিতর্কে সারা দেশ এখন সরগরম। গ্রাম-গঞ্জের ছোট-বড় চায়ের দোকানে ধূমায়িত চায়ের সঙ্গে নির্বাচনি উত্তাপও ছড়িয়ে পড়েছে।
সরকারপ্রধানের ঘোষিত সময় অনুসারে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আইনানুগভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আনছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও নির্বাচনের জন্য সরকার প্রস্তুত করছে। মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকেও পুনর্বিন্যস্ত করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা এর আগে বলেছেন, সরকার বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে সর্বকালের সেরা এবং ঐতিহাসিক করার পরিকল্পনা করছে। সরকার এই নির্বাচনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক উদাহরণ তৈরি করতে চায়। এ কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে প্রেস সচিবের কণ্ঠেও। গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলেনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তবে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং গণভোট নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যের কারণে নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার এই দোলাচলের কারণে সরকারঘোষিত সময়, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সরকার এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার জন্য দলগুলোকে সাত দিনের সময় দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সাম্প্রতিক তৎপরতার কারণে এ সমস্যা মিটে যাবে। সেটা না ঘটলে দেশ নির্বাচনি সংকটে পড়তে পারে।
বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করায় নির্বাচন আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। আশা করা যায়, দু-এক দিনের মধ্যে জামায়াতসহ অন্য দল ও জোটগুলো তাদের প্রার্থী ঘোষণা করবে। রাজধানীর বিভিন্ন আসনসহ জামায়াত তো এরই মধ্যে নির্বাচনি প্রচারণায় নেমে পড়েছে। বোঝাই যায়, সব দলের নানা তৎপরতায় নির্বাচনি ট্রেন ক্রমশ গতি পাচ্ছে।
নির্বাচনের আসলে বেশি দেরি নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন বলছে, দেশের ইতিহাসের দৃষ্টান্তমূলক শ্রেষ্ঠ নির্বাচন করতে চায় তারা। দেশের মানুষও সেটাই প্রত্যাশা করে। জুলাই সনদের জটিলতা কাটিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করবে, সেটাই সবার প্রত্যাশা। আরও স্পষ্ট হোক, আসন্ন নির্বাচনের গতি-প্রকৃতি কেমন হবে। নির্বাচন যেকোনো বিবেচনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া প্রয়োজন। এসবই গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। বিগত কয়েকটি নির্বাচন নিয়ে যেসব কাণ্ড ঘটে গেছে, তাতে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। নির্বাচনের সেই ধারা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। জাতি আসলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে।
