গোটা দেশে ফুটবলারদের কারণে ক্রিকেট খেলা যাচ্ছে না এবং জেলা স্টেডিয়ামগুলো ফুটবল দখল করে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিসিবি পরিচালক আসিফ আকবর। প্রয়োজন পড়লে ফুটবল বা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সঙ্গে মারপিট করে হলেও নিজেদের অধিনায়ক আদায় করতে চান জনপ্রিয় এই সঙ্গীতশিল্পী ও বিসিবির বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ ক্রিকেট কনফারেন্সের উদ্বোধনী দিনে বক্তৃতায় এসব বলেছেন আসিফ। দেশের সব জেলার ক্রিকেট প্রেসিডেন্ট, জেলা ক্রীড়া অফিসার, জেলার ক্রিকেট কোচ, জেলার নারী উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দুই দিনের আয়োজন শুরু হয় রোববার ঢাকার একটি হোটেলে।
আসিফের নিজের জেলা কুমিল্লা। সেখানে এবার লিগ হবে ম্যাটিং উইকেটে। সেই উদাহরণ তুলে বিসিবির নতুন এই পরিচালক তির ছুড়লেন ফুটবল ফেডারেশন ও ফুটবলারদের দিকে।
“আমাদের বোর্ড সভাপতি আছেন এবং যারা বিভিন্নভাবে বাফুফের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, ফুটবল ক্লাবের সঙ্গে, ক্লাবের সঙ্গে জড়িত থাকলেই কিন্তু ফুটবল-ক্রিকেট-হকি, সবই হয়। আমরা যেটা বড় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, ফুটবলারদের জন্য (ক্রিকেট) খেলা যাচ্ছে না, সারা দেশে। এরা উইকেট ভেঙে ফেলে, উইকেট নষ্ট করে ফেলে। যে কারণে, কুমিল্লার ক্রিকেট লিগ ১২ তারিখ থেকে শুরু হবে, প্রাগৈতিহাসিক যুগের ক্রিকেট হবে, ম্যাটে। যেগুলো খেলিনিই আমরা কখনও।”
“আগামী ২৪ তারিখ আবাহনী-মোহামেডান ফুটবল খেলা আছে, কুমিল্লা স্টেডিয়ামে। এই সমস্যা শুধু কুমিল্লার নয়, প্রতিটি জেলার স্টেডিয়াম অকুপাই করে রেখেছে ফুটবল। যেখানে ফুটবলের কাজ নেই, সেখানেই স্টেডিয়াম অকুপাই করে রেখেছে। ফুটবলারদের ব্যবহার খুব খারাপ, এটা আমি সরাসরি বলতে চাই। কারণ, ক্রিকেট একটা ডিসিপ্লিনড খেলা, আভিজাত্যের খেলা এটি, এখানে অনেক নিয়মকানুন আছে, রেকর্ডের খেলা।”
বাফুফে কর্তাদের সঙ্গে বসে ব্যাপারটি সুরাহা করতে বিসিবি সভাপতিকে অনুরোধ করলেন আসিফ।
“আমাদের বোর্ড সভাপতিকে অনুরোধ করব, সিনিয়র বোর্ড সদস্য যারা আছেন, তাদেরকে অনুরোধ করব, আপনারা অনতিবিলম্বে বাফুফের সঙ্গে বসেন। আমরা তো মারামারি করতে যাব না, তবে প্রয়োজন হলে করব। কারণ হচ্ছে, আমাদেরকে খেলতে হবে। আমাদের বাচ্চাদের খেলতে হবে। আমাদের শপথ আছে, আমাদের ছেলেমেয়েরা খেলবে।”
বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টসহ সারা দেশে যত টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা আছে, তাতে মাঠ সমস্যা সমাধানের বিকল্প দেখেন না আসিফ।
“টুর্নামেন্টের অনেক রেঞ্জ আমাদের, অনেক লেভেলের টুর্নামেন্ট আমাদের সামনে আসছে। আমি যেহেতু বয়সভিত্তিকের চেয়ারম্যান হয়েছি, আমি অবশ্যই বাচ্চাদের কথাই বলব। আমরা যদি লিগ শুরু করতে না পারিৃ লিগের তো অনেক জটিলতা, এর মধ্যে স্কুল ক্রিকেট হবে, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট হবে, ট্যালেন্ট হান্ট হবে, টুর্নামেন্ট হবে, হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে হবে। অনেক ধরনের প্রস্তুতি বিসিবির বাইরেও আছে।”
কুমিল্লা লিগে ম্যাটিং উইকেটে খেলার ব্যাপারটি আবার উল্লেখ করে এই বিসিবি পরিচালক বললেন, এভাবে দেশের ক্রিকেটকে পেছনে দিকে টেনে নেওয়া হচ্ছে।
“আমরা যেটা বলতে চাচ্ছি, আবারও পরিস্কারভাবে, ফুটবলের সঙ্গে আমাদের একটা হেস্তনেস্ত করা খুব জরুরি। এখানে আমাদের কুমিল্লার কোচ আছে, জেমস, তার সঙ্গে আমার নিয়মিত কথা হয়ৃ ফুটবলের জন্য খেলা যাচ্ছে না (ক্রিকেট)। কিন্তু আমি শুধু জানতে চাই, এই যে ম্যাটে টুর্নামেন্ট হচ্ছে কুমিল্লায়, এটা কি আমাদেরকে ৩০ বছর পিছিয়ে দিল না?”
“আমি এনএসসিতে (জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ) বলেছি, ক্রীড়া উপদেষ্টার নজরে আনার চেষ্টা করেছিলাম যে, আপনারা তো আমাদেরকে অনেক দূরে নিয়ে গেলেন। যেটা মান্ধাতার আমলে হয়ে গেছে, সেখানে ফেরত নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, এখন পরিবর্তন করেন। আমাদেরকে দ্রুতই বসতে হবে এবং আশা করি বোর্ড সভাপতির কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাব।”
প্রয়োজনে ফুটবলের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়াতে হলেও সেটি তিনি করতে প্রস্তুত বলে আরেক দফায় জানিয়ে রাখলেন আসিফ আকবর।
“ক্রিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষজন একটু ভদ্র স্বাভাবিকভাবেই, আভিজাত্যের ইস্যু আছে এখানে। আমার আবার একটু সমস্যা আছে। আমি আবার অত ভদ্র না। যেহেতু আমি অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার, অনেক আগের.. সুযোগ পাইনি নিজেকে ফোকাস করারৃ যদি ফুটবল মারমিট করে, আমিও মারপিট করব, নো প্রোবলেমৃযে যেমন, তার সঙ্গে তেমন করতে হবে। আমরা তো চাঁদা চাচ্ছি না, কিডনি চাচ্ছি না, হার্ট-চোখ চাচ্ছি না, আমরা চাচ্ছি খেলার অধিকার।”
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে এই বিসিবি পরিচালকের দাবি, সব খেলার জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ করে বাৎসরিক সূচি তৈরি করে দিতে।
“আমাদের যে বাচ্চারা আসবে, ভবিষ্যতে ২০ বছরে যে বাচ্চাগুলো সার্ভিস দেবে বাংলাদেশকে, তাদের খেলার কথা বলছি আমরা। আমরা বলছি বাংলাদেশের তৃণমল পর্যায়ে একদম বান্দরবান থেকে সাতক্ষীরা, পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার, মেহেরপুর থেকে কুমিল্লা, পুরো দেশে ক্রিকেটের উন্মাদনা আছে, উন্মাদের মতো ভালো লোকে ক্রিকেট। তাহলে ফুটবল এখন কেন? আমরা একটা বাৎসরিক ক্যালেন্ডার চাই এনএসসির কাছে। ফুটবল কতদিন হবে, ক্রিকেট, হকি, অ্যাথলেটিকস, ইনডোর গেমস কতদিন হবে, সেটির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রনয়ণ করার সময় চলে এসেছে।”
