পড়ালেখা
শেষ করে ব্যাংকে চাকরি নিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল সাদিয়া হক পাটোয়ারীর(২৪)।
কিন্তু তার শেষ দুইটি ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি। এর আগে কক্সবাজারে চকোরিয়ায় এক
মর্মান্তি সড়ক দুর্ঘটনায় সাদিয়া, তার মা-ভাবিসহ একই পরিবারের ৫ জন নিহত হন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১০টায় চৌদ্দগ্রামে জানাযা শেষে সাদিয়াসহ ৫ জনকে
পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এরআগে বুধবার বেলা ৯টার দিকে
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া এলাকায় সাদিয়াদের বহনকারী
মাইক্রোবাসটি দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে তিনিসহ পরিবারের ৫ সদস্য ঘটনাস্থলেই মারা
যান। তাদের মৃত্যুর সংবাদে শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় দুইটি গ্রাম। নারী-পুরুর ও
স্বজনরা আহাজারী করতে থাকে। শুরু হয় লাশ আশার অপেক্ষা।
বৃহস্পতিবার ভোর
৫টায় সাদিসহ ৫ জনের মরদেহ বহনকারী ৫টি অ্যম্বুলেন্স উচ্চ সুরে সাইলেন্ট
বাজিয়ে যখন গ্রামে প্রবেশ করে তখন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতরণ হয়। শেষ
বারের মতো প্রিয় জনের মরদেহ গুলো একনজর দেখতে ছুটে আসেন অ্যাম্বুলেন্সের
কাছে। এই যেন এক অন্যরকম পরিবেশ।
নিহত সাদিয়ের জেঠাতো বোন সাহিদা
সুলতানা উর্মি বলেন, আমার চাচা-চারির খুব ইচ্ছা ছিল তাকে বিয়ে দেওয়ার।
কিন্তু তার ইচ্ছে ছিল এমবিএ শেষে করে ব্যাংকে চাকরি নিবে। এরপর সে বিয়ে
করবে। কিন্তু তার শেষ ইচ্ছে গুলো আর পূরণ হলো না। সাদিয়া কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের
মেধাবী ছাত্রী ছিল।
তিনি আরও জানান, ব্যক্তিগত ভাবে সাদিয়ার পছন্দের কোন
ছেলে ছিল না। সে নিয়োমিত নামাজ, কোরআন তেলাওয়া এবং শালিনভাবে চলাফেরা
করতো। বর্তমান সময়ে এই পর্যায়ের মেয়েরা এমন স্বভাবের খুবই কম হয়। আমরা তার
জন্য আল্লাহর কাছে জান্নাত কামনা করছি।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বুধবার বেলা
৯টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর ঢালা এলাকায়
বেপরোয়া গতিতে বিপরীত থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের
সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের চান্দিশকরা গ্রামের
বাসিন্দা উদয় পাটোয়ারীর স্ত্রী ফারজানা মজুমদার লিজা (২৮), মা রুমি বেগম
(৬৫), বোন সাদিয়া হক পাটোয়ারী (২৪), শাশুড়ি রিজওয়ানা মজুমদার শিল্পী (৫৫) ও
শ্যালিকা ফারহানা মজুমদার টিজা (২৫)। এ সময় আহত হন সাদির ভাই উদয় পাটোয়ারী
(৪৩), ভাইয়ের ছেলে সামাদ পাটোয়ারী (৪) ও শ্যালক শাহেদ মজুমদার লিশান আহত
হন। এদের মধ্যে লিশানের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সাদিয়া বড় ভাই মো. মনিরুল হক
বলেন, ১৫ দিন আগে কক্সবাজারে যাওয়া পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সামাদের মাথায়
আঘাতের কারণে পিছিয়ে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা
হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বুধবার ভোরে সাদিয়া, আম্মা, ভায়ের শাশুড়ি ও
শালিকাকে চৌদ্দগ্রাম থেকে গাড়িতে তোলে নেন।
গাড়িটি ভাই নিজেই চালিয়ে
যাচ্ছিলেন। সাদিয়া ছোট বেলা থেকেই পড়া-লেখায় মেধাবী ছিল। তার স্বপ্ন ছিল বড়
হয়ে ব্যাংকার হবে। সেই পরিকল্পনা নিয়েই পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল।
কক্সবাজারের মাসরি বাস তার সেই স্বপ্ন কেড়ে নিলো।
