নিজস্ব প্রতিবেদক।। কুমিল্লা সদর আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ায় দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী বলেছেন, আমাকে একবার পরীক্ষা করে দেখুন; আমার দ্বারা কারও কোন ক্ষতি হবে না। দল আমাকে মূল্যায়ন করেছে। আমার জীবনের শেষ সময়েও দল আমাকে সম্মানিত করেছে। আমি জীবন দিয়ে হলেও দলের সম্মান বজায় রাখবো।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কুমিল্লার চৌয়ারা এলাকায় নিজ বাসভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
কুমিল্লা সদর আসনে দলের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন সম্পর্কে তিনি বলেন, ইয়াছিন আমার দলের সতীর্থ ভাই, তাদের প্রতি আমাদের কোন রাগ ক্ষোভ অভিমান নেই। মনোনয়ন পাওয়ার পর আমি বলেছি, কুমিল্লা যাওয়ার আগে চেষ্টা করবহাজী ইয়াছিনের সঙ্গে কথা বলে আসার জন্য, কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। আমি দক্ষিণ জেলা বিএনপি'র সভাপতি জাকারিয়া তাহের সুমন সাহেবকে বলেছি অবিলম্বে দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার পথ থেকে আমার সম্পূর্ণ প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করে দল। দলকে আমি বরাবরে বলেছি কুমিল্লা মহানগর সদর দক্ষিণ ও সদদের নেতা কর্মীদের সঙ্গে আমাকে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য, তারা তার উদ্যোগ নিচ্ছে। তিনি বলেন- আমি নিজেও হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিনকে মুঠোফোনে কল করেছি বেশ কয়েকবার। এরপর কুমিল্লা বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জসীমউদ্দীনকে বলেছি হাজী আমিনুল ইয়াসিনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য, এমনকি বাসায় যেতে চাই।
আমি সকল স্তরের নেতাকর্মীদেরকে অনুরোধ জানাবো তারা হিজী ইয়াছিনের সঙ্গে কাজ করেছেন, আমাকে দেখে নাই। আমাকে একবার পরীক্ষা করুক, আমি তাদের কাজে লাগবো, তাদের কুমিল্লার কাজে লাগবো। আমি কথা দিচ্ছি আমার দ্বারা তাদের উপকার না হলেও ক্ষতি হবে না। আপনারা এমন কোন কাজ করবেন না যাতে তারা কষ্ট পায়। আমরা সবাই জাতীয়তাবাদী পরিবারের অংশ। আমরা ধানের শীষের পক্ষে সকল ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে কাজ করতে চাই।
নিজেকে 'দুর্ভাগা মানুষ' উল্লেখ করে মনিরুল হক চৌধুরী বলেছেন, গত ৬৩ বছর ধরে রাজনীতি করছি। আমাকে বাদ দেওয়ার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। আমার আসনকে কখনও নাঙ্গলকোট, কখনও লাকসাম, আবার কখনও চৌদ্দগ্রামের সঙ্গে দিয়ে আমাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী লোটাস কামালের রোষানলে পড়ে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি, কিন্তু দল থেকে কখনও বিচ্যুত হইনি। আলহামদুলিল্লাহ, দল আমাকে মূল্যায়ন করেছে। জীবনের শেষ সময়েও দল আমাকে সম্মান দিয়েছে। আমি জীবন দিয়ে হলেও দলের এই সম্মান রক্ষা করবো।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীর চৌয়ারা এলাকায় নিজ বাসভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দীর্ঘদিন দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন সম্পর্কে তিনি বলেন, ইয়াসিন আমার দলের সতীর্থ ভাই। তাদের প্রতি আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। আমি নেতাকর্মীদের অনুরোধ করছি। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে তারা কষ্ট পায়। আমরা সবাই জাতীয়তাবাদী পরিবারের অংশ। ধানের শীষের পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ১/১১ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ আমাদের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশের মানুষ বিএনপিকে ছেড়ে যায়নি, জেল-জুলুম সহ্য করেও দলকে হৃদয়ে ধারণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, পতিত স্বৈরাচার সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বেগম খালেদা জিয়াকে আপসের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তিনি আপস না করে দিনের পর দিন জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মিথ্যা মামলায় তিনি বছরের পর বছর জেল খেটেছেন।
২০১৪ সালে চৌদ্দগ্রামে পেট্রোলবোমা হামলার মামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেই ঘটনায় বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমাকে আসামি করা হয়েছিল। আমি দীর্ঘদিন জেলে ছিলাম, এমনকি ২০১৮ সালের নির্বাচনে জেল থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। আওয়ামী লীগ নিজেরা পেট্রোলবোমা মেরে আমাদের আসামি করেছে রাজনীতি থেকে আমাদের মাইনাস করার ষড়যন্ত্রে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, মনোনয়ন দিয়ে আমাকে সম্মানিত করার জন্য তারেক রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি আশা করছি কুমিল্লার জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে কুমিল্লার উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ দেবে। আমার হাতে কুমিল্লা উন্নয়নের কিছু পরিকল্পনা আছে, ইনশাআল্লাহ সেগুলো বাস্তবায়ন করবো।
এদিকে মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো নিজ এলাকায় আসেন মনিরুল হক চৌধুরী। তাঁকে বরণ করতে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট, আলেখারচর ও কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় হাজারো নেতাকর্মী মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর নিয়ে স্বাগত জানান। পরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি নিজ বাসভবনে পৌঁছান।
এ সময় জেলা, মহানগর, সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
