রোববার ২৬ অক্টোবর ২০২৫
১০ কার্তিক ১৪৩২
এবার কি অঙ্ক-ইংরেজির বিপর্যয় কাটবে?
রেজানুর রহমান
প্রকাশ: রোববার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:১৮ এএম আপডেট: ২৬.১০.২০২৫ ১:৫১ এএম |



আপাতত একটা স্বস্তির পরিবেশ পাওয়া হলো। বেসরকারি শিক্ষকদের আন্দোলন থেমেছে। সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্লাসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টানা আট দিন কর্মবিরতির ফলে শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে ছুটির দিনেও ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সবই ভালো খবর, স্বস্তির খবর। কিন্তু কিছু প্রশ্ন বোধকরি রয়েই গেল।
টানা আট দিনের আন্দোলনে সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মান-মর্যাদা কতটা বিকশিত হলো? আট দিন পর যে সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন সেই সিদ্ধান্ত সরকার আগে নিতে পারত কি না- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন অনেকে।
একথা সবাই স্বীকার করবেন, সেই করোনাকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের শিক্ষা এবং শিক্ষাব্যবস্থাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে শিক্ষকদের সংগঠন, বিশেষ করে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানই শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সেই অর্থে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদাসীনতার পাহাড় জমেছে। অনেকটা সেই আলোচিত কৌতুকের মতো- দেখি না কী হয়...
শিক্ষক হলেন সবার চেয়ে সম্মানীয় ব্যক্তি। শিক্ষক হলেন গুরুজন। শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। অথচ এবারে শিক্ষক আন্দোলনের প্রথম দিনে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওপর পুলিশ যেভাবে লাঠিচার্জ করেছে, নির্দয়, নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়েছে তার ব্যাখ্যা কী? এ ঘটনার নিন্দায় ভাসলো গোটা দেশ। অথচ শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ দেখা গেল না। শিক্ষক-শিক্ষিকারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে আন্দোলনের নতুন ঠিকানা হিসেবে খুঁজে নিলেন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারকে। প্রচণ্ড গরম ও কখনো কখনো বৃষ্টির ঝাপটাকে মোকাবিলা করে অসহায় শিক্ষকরা শহিদ মিনারে খোলা আকাশের নিচে রয়েই গেলেন। প্রথম দিকে তেমন কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থন মিলছিল না। পরে এক দলের দেখাদেখি অন্য দলের নেতারা পর্যায়ক্রমে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে এসেছেন। তবুও যেন কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না। অবশেষে টানা আট দিন পর শিক্ষা উপদেষ্টা স্বয়ং এলেন শহিদ মিনারে। ধাপে ধাপে দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেন। আন্দোলনরত শিক্ষকরা আশ্বাসের ওপর বিশ্বাস রেখে আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিলেন। কিন্তু রয়ে গেল অনেক প্রশ্ন।
আট দিন পর যে সমস্যার সমাধান করা গেল তা আন্দোলনের শুরুর দিকেই করা যেত কি না? এমন কথাও শোনা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের শুরুর দিকেই একটি প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। কিন্তু ওই মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিদেশে থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিলম্ব হয়। যদি এ ঘটনা সত্য হয় তাহলে কী প্রশ্ন দাঁড়ায় না ‘শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর’ এ কথাটি আসলে কথার কথা? আমরা বলার জন্য বলি।
অন্য পেশার সঙ্গে শিক্ষকতা পেশাকে এক কাতারে দাঁড় করানো ঠিক হবে না। সে কারণেই আট দিন পর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া গেল তা আগেই নেওয়া উচিত ছিল। তাহলে শিক্ষাবছরের শেষ দিকে এসে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো না।
ধরা যাক, শিক্ষকরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করায় আপাতত সংকট কেটে গেছে। কিছু প্রসঙ্গ বোধকরি আলোচনা করা দরকার। বেসরকারি পর্যায়ের সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকারা যখন ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করে ঢাকায় কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আন্দোলনে নামলেন তখনই সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। স্মরণকালের ফল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে এবার। এজন্য ইংরেজি, অঙ্ক এবং তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অযোগ্যতাকে দায়ী করা হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের এইচএসসি পর্যায়ের ছেলেমেয়েরাও ইংরেজি, অঙ্ক ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ হতে পারেনি। এজন্য দায় কার? নিশ্চয়ই সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী দায় এড়াতে পারেন না। যৌক্তিক দাবি-দাওয়া পূরণে শিক্ষকরা এই যে আট দিনের আন্দোলন করলেন একবারও কিন্তু এইচএসসির ফল বিপর্যয়ের কথা ওঠেনি। আন্দোলন থামল। পুরোটা না হলেও কিছু তো দাবি আদায় হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার মানোন্নয়নের দাবি কি আদৌ কারও কাছে গুরুত্ব পাবে? এ ব্যাপারে কি কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে?
এই যে এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি, অঙ্ক ও তথ্যপ্রযুক্তিতে শিক্ষার্থীরা ভালো না করায় ফল বিপর্যয় হলো, তা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অন্য কোথাও কি গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে বা হচ্ছে? আমরা স্বীকার করি বা না করি এটা তো সত্য, দেশের অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অঙ্ক, ইংরেজির ক্ষেত্রে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব বেশ প্রকট। এমনও অভিযোগ রয়েছে- কোথাও চাকরি না মিললেও রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে মেধাহীন মানুষের পক্ষেও বেসরকারি স্কুল, কলেজে সহজেই চাকরি মেলে। যদিও সব শিক্ষকের ক্ষেত্রে এ কথা খাটে না। সারা দেশে অনেক অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের মেধা ও যোগ্যতার স্ফূরণ ঘটিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে সচল রেখেছেন। কিন্তু কিছু অযোগ্য শিক্ষকের কারণে তাদের অবদানের কথা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয় না।
এবার আসি সম্মানিত শিক্ষকদের তিন দফা দাবির প্রশ্নে। ১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া ও মাসিক ৫০০ টাকার মেডিকেল ভাতা অনেকটা হাস্যকর বটে। কাজেই বাড়ি ভাড়া ও মেডিকেল ভাতা প্রশ্নে শিক্ষকরা যে দাবি তুলেছিলেন তা অত্যন্ত যৌক্তিক। সরকার ধাপে ধাপে যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছে। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য কথার সঙ্গে কাজের মিল রাখবেন। কিন্তু বিষয় হিসেবে অঙ্ক, ইংরেজি ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের ভাবনাটা কী? অভিযোগ উঠেছে- কোনো কোনো বেসরকারি স্কুল-কলেজে মেধাহীন অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা এ বিষয়গুলো পড়ান। কিছুটা হলেও দাবি-দাওয়া তো পূরণ হলো। এবার আমরা কি আশা করতে পারি আমাদের সন্তানরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পাবে। অঙ্ক, ইংরেজি ও তথ্যপ্রযুক্তিতে আর খারাপ করবে না? এ নিশ্চয়তা কার কাছে খুঁজব?
লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার
সম্পাদক, আনন্দ আলো













http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
গুলশান কার্যালয়ে কুমিল্লার সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় আজ
রেকর্ড আয়ে কুমিল্লা ইপিজেড
কুমিল্লা বোর্ডের এইচএসসির ৪২ হাজার খাতা চ্যালেঞ্জ
ভোটাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই ৩১ দফার মূল লক্ষ্য: হাজী ইয়াছিন
দেশকে এগিয়ে নিতে সকলকে এক ছাতার নিচে আসতে হবে -----হাবিব-উন-নবী সোহেল
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দল মনোয়ন দিলে আমি বিএনপিকে এই আসন উপহার দিবো :সাবেক সচিব ড. এ কে এম জাহাঙ্গীর
‘চকবাজারের ঘটনায় জড়িত কেউ যুবদলের নয়’
চলতি মাসেগ্রিন সিগন্যাল পানে ২০০ প্রার্থী
বুড়িচং-ব্রাহ্মণাপাড়ার বিএনপি ঐক্যবদ্ধ: হাজী জসিম
আল্লাহই আমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডথেকে মুক্তি দিয়েছেন-কায়কোবাদ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২