‘ঘোরলাগা বিবরণীর’ লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই

আলমগীর মোহাম্মদ ।।
এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন হাঙ্গেরীয় লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ৭২ বছর বয়সী এই লেখক তাঁর দীর্ঘ, জটিল বাক্য আর ঘোর লাগা বিবরণীর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি তাঁর সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে লিখেছেন,"অ্যাপোক্যালিপটিক (মহাপ্রলয়ঙ্করী) আতঙ্কের মাঝেও শিল্পের শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা প্রভাবশালী ও দূরদর্শী সৃষ্টিকর্ম"। এই স্বীকৃতি ক্রাসনাহোরকাই-এর ব্যক্তিগত সাফল্যকে অতিক্রম করে মধ্য ইউরোপীয় মহাকাব্যিক সাহিত্য ঐতিহ্যের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের জন্ম ১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রোমানিয়া সীমান্তবর্তী ছোট শহর গিউলায়। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে হাঙ্গেরির কমিউনিস্ট শাসনের পটভূমিতে, যা তাঁর সাহিত্য রচনার এক গভীর ও বিষণ্ণ ভিত্তি তৈরি করেছে। আইনের ছাত্র হয়েও তিনি বেছে নেন স্বাধীন লেখক জীবন। তিনি হাঙ্গেরির দ্বিতীয় লেখক যিনি সাহিত্যে নোবেল পেলেন; এর আগে ২০০২ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন তাঁর স্বদেশী ইমরে কারতেস। ক্রাসনাহোরকাইয়ের চিন্তাজগতে কাফকার নিঃসঙ্গতা, টমাস বার্নহার্ডের হতাশা এবং ফরাসি লেখক আলবেয়ার কামুর অ্যাবসার্ডিজমের ছাপ সুস্পষ্ট। তবে তাঁর চিন্তাভাবনা কেবল পশ্চিমা সাহিত্য-দর্শন অনুসারী নয়; বরং তিনি প্রাচ্যের দার্শনিক চিন্তা ও আধ্যাত্মিকতা থেকেও অনুপ্রেরণা নিয়ে তাঁর লেখায় এক 'ধ্যানমগ্ন ও সূক্ষ্ম সুর' তৈরি করেন।
সাহিত্য মহলে ক্রাসনাহোরকাইকে 'ধৈর্যের লেখক' (অঁঃযড়ৎ ড়ভ চধঃরবহপব) বলা হয়। তাঁর দীর্ঘ বাক্য ও ধীরগতির বর্ণনা তাঁর লেখার মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে; যেখানে প্রায়শই একটি মাত্র অনুচ্ছেদ কোনো যতিচিহ্ন ছাড়াই পাতার পর পাতা বিস্তৃত হয়। এই লিখন-শৈলী তাঁর পাঠককে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মতো ধীর কিন্তু অদ্ভুত মানসিক ঘূর্ণনের ভেতর নিয়ে যায়। এখানে পাঠক যেন সভ্যতার শেষ মুহূর্তগুলোর তীব্র সংঘাত নয়, বরং এক দীর্ঘ নীরব নিস্তব্ধতা অনুভব করেন। এই জটিল কাঠামো সত্ত্বেও, এটিই তাঁর লেখনীর প্রধানতম শক্তি ও স্বতন্ত্রতা। তিনি এক পোস্ট-মর্ডান দার্শনিক গল্পকার যিনি অ্যাবসার্ডবাদ, গ্রোটেস্ক অতিরঞ্জন এবং নৈরাজ্যের ছায়ার মধ্য দিয়েও মানুষের ব্যর্থতার সৌন্দর্যটুকু ফুটিয়ে তুলতে চান। সমালোচক সুজান সন্টাগ তাঁকে 'অ্যাপোক্যালিপসের মাস্টার' হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন, যা তাঁর মহাকাব্যিক বিষাদময়তাকে নির্দেশ করে। ক্রাসনাহোরকাই নিজেই তাঁর লেখার এই শৈলীকে বর্ণনা করেছিলেন 'পাগলামির সীমা পর্যন্ত বাস্তবতার পরীক্ষা' হিসেবে।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের সাহিত্যকর্ম ইউরোপীয় সমাজের পতন, মানসিক বিশৃঙ্খলা এবং অসহায় মানুষের জীবনচিত্রণে সমৃদ্ধ। তাঁর প্রথম উপন্যাস শাতান্তাঙো (ঝধঃধহঃধহমড়, ১৯৮৫) কমিউনিস্ট শাসনের পতনের ঠিক আগমুহূর্তে হাঙ্গেরির প্রত্যন্ত এক পরিত্যক্ত যৌথ খামারে বসবাসরত একদল নিঃস্ব মানুষের জীবনকে প্রতীকী ভঙ্গিতে ফুটিয়ে তোলে। এই উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রখ্যাত পরিচালক বেলা তার ১৯৯৪ সালে প্রায় সাত ঘণ্টাব্যাপী একটি সাদাকালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তাঁর আরেক বিখ্যাত উপন্যাস দ্য মেলানকোলি অব রেজিসট্যান্স (ঞযব গবষধহপযড়ষু ড়ভ জবংরংঃধহপব, ১৯৮৯) ইউরোপীয় সমাজের এই পতন ও বিশৃঙ্খলার মহাপ্রলয়কে তুলে ধরে। এছাড়াও ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (ডধৎ ্ ডধৎ, ১৯৯৯) উপন্যাসে হাঙ্গেরির এক আর্কাইভ কর্মচারী বুদাপেস্ট থেকে নিউ ইয়র্কে গিয়ে একটি প্রাচীন মহাকাব্য বিশ্বের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে। তাঁর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা তাঁকে দিয়ে লিখিয়েছে 'দ্য প্রিজনার অব উর্গা' (ঞযব চৎরংড়হবৎ ড়ভ টৎমধ) এবং 'ডিসট্রাকশন অ্যান্ড সরো বিনিথ দ্য হেভেনস' (উবংঃৎঁপঃরড়হ ধহফ ঝড়ৎৎড়ি ইবহবধঃয ঃযব ঐবধাবহং) -এর মতো কাজ, যা পূর্বের দার্শনিক চিন্তার প্রভাবকে স্পষ্ট করে। তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ 'সেইওবো দেয়ার বিলো' (ঝবরড়নড় ঞযবৎব ইবষড়,ি ২০০৮) শিল্প ও সৌন্দর্যের নশ্বরতাকে জাপানি, স্প্যানিশ এবং হাঙ্গেরিয়ান প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করে। তাঁর এই সাহিত্যিক উৎকর্ষের প্রমাণস্বরূপ তিনি ২০১৫ সালের ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং ২০০৯ সালের ম্যান বুকার পুরস্কার-সহ অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেছেন।
লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল প্রাপ্তি বিশ্ব সাহিত্যকে একথাই পুনর্বার স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মানুষের চরম হতাশা, জীবনের অসংগতি এবং এক অনিবার্য ধ্বংসের আশঙ্কার মধ্যেও শিল্পই পারে সেগুলোকে এক দার্শনিক মহাকাব্যের রূপ দিতে। তিনি শুধুমাত্র একজন লেখক নন, তিনি মানবসভ্যতার আত্মপর্যালোচনার এক 'দিকচিহ্ন' হয়ে উঠেছেন, যা তাঁর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে কালের মহাকাব্যে ধ্বনিত হবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক,ইংরেজি বিভাগ, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা।
জবানবন্দি
জহির শান্ত ।।
বেলা ভূমিতে শায়িত নিস্প্রাণ মনুর ছাওয়াল
তার বান্ধবদের সঙ্গে নারী বিষয়ে কথা হলে
চুপ করে বসে রইতো নিলাভ আকাশের মতো
শস্যহীন মাঠে বথুয়ারশাক শীতকে জড়িয়ে যতো
ছতিমের ডালে ভূতেরা অতীত এনে ঝিম ধরাতো
বন্ধুরা চাইতো সে’ও যেন কথা কয় প্রাণ খুলে
কে কার বয়ান শোনে এই অমনোযোগের কালে
তবু ভালো কথা বলে বিদায় নেওয়া সমোচিৎ
তোমার পরাণে বাঁধা ঝলমলে শ্যামের পীরিত
বলেছিল ছাওয়াল, বন্ধুদের চোখে চোখ রেখে
স্বেচ্ছায় বিসর্জন দিবে প্রাণ, সমুদ্র পুলিনে
বিদায় স্মরণে তোমার কথা কয় নম্র যতনে
কয় তোমার তখন বন্ধু ছিল, ফুল - পাতা ছিল
পাশাপাশি বসার অনেক দিনের পাথুরে স্বভাব ছিল
বসলে উঠাবে কে তোমায়, মেজাজের দণ্ডে ফনা
তোমাকে চেয়ে মনুরপুত্র হাত বাড়ায় আচমকা
সব শোনেছিল তোমার বাপ ভাই মা বোন কাকা
তুমি উঠে এলে উল্টো পথে, আগুনের টানে ও বানে
যাদু মন্ত্রে বৈঠকি পাথর চূর্ণ করে চলে এলে
আসার নিঃশেষ ভগ্নাংশ গণিতের মান লেগে রইলো
যতো, মধ্যম রেখায় বিভাজিত হয়ে আহত তড়িৎ
তুমি আবার মুক্তি চাইলে তাতে নড়ে ছিল ভিত
বিষ জমেছিল বেশ ঘন করে মধুকুপি ঘাসে
কিছুটা করবিতে, কিছুটা নীল ধুতরার বীজে
সে আনত, তুমি যা চাও তাই হবে, চোখ অন্ধ
করে, মাজরার মতো ধাবিত সে অনল শিখায়
তোমাকে শেখালো, চলে যাও, নতুন গজানো ঘাসে
পেট ভরে খেতে পারবে। চালহীন আটচালা ছেড়ে
আপন ছেড়ে চলে যেতে হয় পর থেকে আরো অপরে
তুমি তরতাজা সবুজ আলপাডগা চিবানো ঘোড়া
কে ঝুলে তমালের ডালে কে কখন ছিল মরা
তোমার কী দেখার সময় আছে, ঘাস ফড়িং নাচে
শিকড় পেতেছে ঘাস তোমার ডানার একবারে কাছে
তুমিতো দেখোনি, না দেখারই কথা, উড়াল দিলে
গন্তব্যহীন উড্ডিন, বালির কাছে কঠিন বরফ শী’ত
তুমি রাইকুঞ্জে পৌঁছে করো মধুকুপি অঙ্কুরিত
ঠাকুর বলে ‘মরণরে তুঁহ মম শ্যাম’ সঙ্গীত
মনুর ছাওয়াল পুলিনে শায়িত দীর্ঘ অতীত
আম্মার সাথে দেখা হয়
ইয়াসিন আশরাফ ।।
আম্মার সাথে দেখা হয় মাঝে মাঝে সেইখানে
তিনি কাছে এসে বসেন,আমাকে আদর করেন
আমার সব দুঃখ উপল হয়ে যায় তাঁর কাছে
আমার সব সুখ অপরাজিতা হয়ে
যায় তাঁর কাছে
সব সুধাই তাঁকে ঘন্টার পর ঘন্টা
তিনি বুঝে যান তাঁর স্বপ্নের ভুবনকে
তুলে আনতে
আমি কীভাবে সাঁতার কেটে চলেছি অথৈ সমুদ্র
আর তাঁর কন্টক দরোজাগুলো বন্ধ করে দিচ্ছি
একের পর এক
অলৌকিক ঢেউয়ে আরেকটু উড়ে এসে
তিনি বলেন
আমি ভালো আছি কিন্তু তোর
ভালো থাকার জন্য
যে আমি তাঁর কাছে হাত তুলছি প্রতিনিয়ত বাবা
তাই তো দেখি আম্মার চোখে ঘুম নেই এখানেও
তবুও সে চোখে কী পবিত্রতা, কী অজানা দিগন্ত
এখানে আম্মার কাছে আমি সেই নবজাতক
তিনি আমাকে কোলে নিয়ে চুমু খাচ্ছেন আর
আমি তাঁর গায়ের সেই গন্ধ পাচ্ছি যে গন্ধে
আমি আম্মাকে চিনতে পারি
হাজার মানুষের ভিড়েও
এক এক করে আমি দেখি তাঁর মুখ,
ঠোঁট, কপাল, চিবুক,হাত
মেলাতে যাই বাস্তবে আম্মার ছবি।
ঝুলন্ত বিকেলের ফুলে
বশির আহমেদ ।।
একটা মুস্কদানা গ্রাম, পথে পথে চোখের আনন্দ।
হিতৈষী অরণ্যভূমি, জলের ভাঁজ ভেঙ্গে ছুটে যায় অর্ণবপোত।
জাম্বুরা দুপুর, ঝুলন্ত বিকেলের ফুলে মাতাল ভ্রমর!
আশ্বিনের বিলে মাছের রাজত্ব,
গর্দভের অভিধানে লিরিক হারা সংবিধান।
অপয়া সময়, কে কোথায়?
আগুনের রোদ্দুরে কোরাস তরঙ্গ, দু’চোখে সায়ংকাল,
সূর্য ডুবা আকাশে মুখিয়ে আছে শারদীয় জ্যোৎস্নার আলো।
আরিফুল হাসান
শরতের সহযাত্রী।।
শরতের শাদা মেঘ জানে, যখন তুমি ঈঙ্গিতে দেখালে শূন্যস্থান
আমি পাখির মতো নীড়ে ফেরা তুমুল তিরাসে
আছড়ে পড়ছি উপকূল, তোমার পাশের সিটে।
হে বিদুষী, তোমার চশমা পরা চোখে একগুচ্ছ চুলের কোলাজ
ভেঙে দিচ্ছে নেমে যাবার অজানা শঙ্কা।
গুলিস্তান আসার আগেই কেনো বেজে যায় বিদায়ী ঘণ্টা
আর তুমি নেমে যাচ্ছো সত্যি সত্যিই শনির আখড়ায়।
হে বিদুষী, আশ্বিনের ধাঁধা রোদ জানে, সহযাত্রী চলে যাবার মানে
আমরা থাকি
আহাম্মেদ কবীর ।।
আমরা থাকি পাহাড় দেশের বন-বনানী সবুজ ঘাসের
ছোট্ট ঘাসের উপত্যাকার নরম মাটির ঠিক উপরে শক্ত বাঁশের
বাসায় থাকি, ছবি আঁকি, মেঘের সাথে ডাকাডাকি
মা বাবাদেম প্রেমের পাখি খোলা আঁকি চাঁদ জোনাকি
দেখে দেখে বিজুর ফাঁকে আমোদ ভরা হৃদয় নিয়ে
রাঙামাটির রুপার দেশে, হেসে হেসে আমরা থাকি।
আমরা হলাম কৃষি জ্ঞানের ঝুম- চাষি ভাই
কলাপিঠার মতই সরল, তঞ্চঙ্গার তাই তুলনা নাই।
ফুল দিয়ে প্রেম নদীর জলে, মাটির দেশের অন্তরালে
বিযুর -কালে শ্রদ্ধা জানাই, ঢটুক- ঢোল তালে তালে।
আমরা হলাম আদিবাসী নম্র-লাজুক বাগান হাসি
বাংলা-পলির মিশেল দিয়ে বলতে কথা ভালোবাসি
থামী পরা মা জননী, পিতার পোশাক জামা-ধুতি
এালায় বোনের রুপার দ্যুতি অলংকারের শুদ্ধ-মতি
ডবন্নি পিঠা পাঁচন সাথে সবজি-ভাত ভোজন করি
আমরা ঘড়ি, সময় ধরি কর্মে পটু নিবাস-ছড়ি
তাই আমাদের নিজের বাড়ি আমরা বলি সুখের ‘অরক’
এসো সবাই দূর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে যেই আছে সড়ক
তোমরা এল, সেই সেখানে মজা হবে, আমোদ হবে
আসবে কবে, তেমরা সবে?
সবুজ অরণ্য
জোহরা জ্যোতি ।।
সবুজ অরণ্যে যাবো
তোমায় নিয়ে
যদি কখনো এসো
আমার গাঁয়।।
নিয়ে যাবো তোমায় সেই
বটবৃক্ষের ছাঁয়,সবুজ ধানের শীষে
যেথায় ধান শালীকেরা সুর তুলে
গান গায়।
যেথায় বেতফলের ডালে
টুনটুনি দোলে,স্বর্ণলতা জড়িয়ে গায়।
তোমার পথে কাঁটা চোঁরা বিধে পায়।
পুকুর জলে হিজল ফুলে
ছেয়ে থাকে সারাবেলা
কুচুরী পানার বেগুনী ফুলে
মনোহর ,মাতোয়ারা।
ঘরের পাশে ভরে আছে
রজনী গন্ধা জুঁই
আলতো করে ছুঁই
সকাল সন্ধ্যা গুনগুন গানে
ভ্রমরের তাথৈ থৈ।।
গাঁয়ের পাশে বয়ে চলেছে
ছোট্ট বুড়ি নদী,
বরষার জলে তরঙ্গ তুলে
বয়ে চলে অচেনা দুরে।।
আমার শেকড় ,আমার প্রাণ ,,
সবুজ অরণ্য ঘেরা আমার
ছোট্ট সোনার গ্রাম।
কখনোবা অভিমান
সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া।।
কখনো কখনো
অভিমানের ছোপ ছোপ অন্ধকার
তলিয়ে দেয় স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ, জীবন।
তখন-
তাল মিলাতে পারে না সম্পর্কের
অমিয় সুখ।
কখনোবা অভিমান
টেনে আনে একাকীত্বের বিষণ্ণতা...
তখন-
তাল মিলাতে পারে না সময়ের
সরল স্রোত।
হায়!
সবকিছু শূন্য হয়ে যায়,
যখন অভিমান রুয়ে দেয় বিচ্ছিন্নতা,
ছুঁয়ে দেয় করুণ রক্তবীজ।
তবে...
আলতো স্পর্শে-
অভিমান ভাঙতে জানলে
কখনো কোনো সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয় না।
আর...
তখন অভিমান হয়,
পরশ বুলিয়ে দেয়া শীতের সকাল,
মিষ্টি রোদ্দুর কিংবা জোছনায় আলোর সমূদ্দুর!
কারাগার
আহমেদ সাব্বির ।।
নিজেকে ভালোবাসতে গিয়ে,
পেয়েছি কেবল তোমাকে৷
রক্ত মাংসের পর্দাটা পেরিয়ে,
পাইনি নিজেকে।
পেয়েছি কেবল,
একজোড়া কাঠবেড়ালীর চোখ।
যার পুরোটা জুড়ে,
চলে গেছে কাজলের বিরান হাইওয়ে।
আমার বুকের ভেতর,
একটি অন্ধকার ফাঁসির মঞ্চ।
জল্লাদ হাতে দাঁড়িয়ে আছে,
খোদ আমি।
সন্ধ্যা হলেই,
নিজেকে দড়িতে ঝুলিয়ে দেই।
প্রথম প্রথম যন্ত্রণা হয়।
দমবন্ধ হয়ে আসে।
তারপর, চোখ ও জিভ দিয়ে
বেরিয়ে পড়ি তার বাড়ীর ঠিকানায়।
শেষরাতে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরি,
শুয়ে পড়ি বিছানা নামের কবরে।
একাকী হাতগুলো মাথা ছুঁয়ে,
যন্ত্রণার বাতাস হয়ে বেরোয়।
তেলাপোকা থেকে ধীরে ধীরে তুমি হয়ে যাচ্ছি।
আয়না আজকাল গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হয়ে,
গলির মুখে দন্ডায়মান কবিতার আদালতে হাজিরা দেয়।
এই লোক,
হ্যাঁ এই সেই লোক জনাব
যাকে আমি প্রতি রাতে ক্লান্ত কবরে
শুয়ে শুয়ে কাঁদতে দেখি৷
যে প্রতিদিন বিকেলবেলা,
একই ছুরি বারবার শাণ দিয়ে গলার কাছে ধরে।
হ্যাঁ জনাব এই সেই লোক,
যে বুকের ভেতর ফাঁসির মঞ্চ পুষে।
টেবিলা ছড়িয়ে রাখা অর্ধনগ্ন চিঠিগুলো,
বারবার দেখে৷
এসিড দিয়ে হৃদপিণ্ড ধোয়,
কেরোসিন দিয়ে চোখ মুছে৷
গাছের সাথে কথা বলে,
আঙ্গুলের ভেতর গোলাপ ফোঁটায়৷
সাক্ষী দিতে দিতে,
কবিতা ক্লান্ত হয়ে উঠোনে এসে দাঁড়ায়।
আমাকে ডাকে, জানালায় চোখ ছুঁড়ে মারে৷
আমি বেরিয়ে এসে তার কঙ্কালকে জড়িয়ে ধরি,
গন্ধ পাই নিজের ঘামের।
আমাকে নিতে এসে প্রতিদিন সে,
যেন নিজেকে বালিশে বেঁধে দিয়ে যায়।
আমি বালিশ খুলে,
মগজে গোগ্রাসে পুড়ে নেই।
মাতাল হাওয়া ক্রমশ উত্তাল হয়ে,
আমার পাঁজরে ধরা দেয়।
আমি তখন ধীরে ধীরে চামড়া পাল্টে,
তোমার মতো হয়ে যাই।
নিজের হাত ধরতে গিয়ে,
বারবার তোমার হাত খুঁজে পাই।
অন্ধকারে আমার ঠোঁট খুঁজতে গিয়ে,
তোমার ঠোঁট খুঁজে পাই।
নিজেকে ভালোবাসতে গিয়ে,
বারবার আমি তোমাকে খুঁজে পাই।