বৃহস্পতিবার ৩০ অক্টোবর ২০২৫
১৪ কার্তিক ১৪৩২
মরমী লালন ফকির
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫, ১:২৪ এএম আপডেট: ১৬.১০.২০২৫ ২:০৮ এএম |


 মরমী লালন ফকির
বাংলার আকাশে যে মানুষটি প্রেম, মানবতা ও আত্মজ্ঞানের বাণী ছড়িয়ে গেছেন, তিনি মরমী সাধক ফকির লালন শাহ। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় একশো ষোলো বছর। তিনি ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর পরলোকগমন করেন। জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তাঁর দর্শন ও ভাবজগত বাঙালি চেতনার গভীরে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে।
লালন ছিলেন একাধারে দরবেশ ও বাউল। তাঁর সাধনা ছিল মানুষকে কেন্দ্র করে-যেখানে ঈশ্বর মানে এই মানুষই, শরীর ও আত্মার মিলনের মধ্যেই ঈশ্বরের উপস্থিতি। শরিয়ত বা শাস্ত্রের কঠোর নিয়ম তিনি মানেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষই সবচেয়ে বড় ধর্ম, আর সকল ধর্মের মর্মই মানুষ। তাই তিনি প্রশ্ন রেখেছিলেন-“সব জনে কয় লালন কী জাত সংসারে, লালন ভাবে জাতের কী রূপ দেখলানা এ নজরে।” এই প্রশ্নে লুকিয়ে আছে জাত, ধর্ম ও গোত্রের বিভাজন অতিক্রম করে মানবধর্মের সার্বজনীন আহ্বান।
লালনের সাধনা ছিল ম‚লত বাউলধর্মীয়। বাউলরা বিশ্বাস করেন, এই মানুষেই সেই মানুষ-অর্থাৎ মানুষের ভেতরেই অচিন মানুষ বা ঈশ্বর অবস্থান করেন। বাউলদের সাধনা দেহতত্ত¡ভিত্তিক, যেখানে আত্মজ্ঞান ও প্রেম একাকার। এই দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে লালনের গানে-“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়।” এই গান কেবল ধর্মীয় গীত নয়, এক গভীর দার্শনিক সত্যের রূপক।
তৎকালীন সমাজে লালন ও তাঁর অনুসারীরা নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। কারণ, শরিয়তপন্থী মুসলমান ও শাস্ত্রনিষ্ঠ হিন্দু-উভয় পক্ষই তাদের মতবাদকে ধর্মবিরোধী মনে করত। কিন্তু লালন নির্ভয়ে নিজের সাধনার পথে ছিলেন অটল। তিনি বলেছিলেন, মানুষ যদি মানুষকে চেনে, তবে ঈশ্বরকে চিনে ফেলে। তাঁর এই সহজ অথচ গভীর দার্শনিক বোধ আজও প্রাসঙ্গিক।
ধারণা করা হয়, লালন প্রায় দশ হাজার গান রচনা করেছিলেন, যদিও আজ সংরক্ষিত আছে মাত্র এক হাজারের মতো। তাঁর গান মুখে মুখে প্রচারিত হওয়ায় সুর ও কথায় কিছু ভিন্নতা দেখা যায়। ১৯১৫ সালে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম লালনের গান প্রকাশ করেন, যদিও সেখানে লালনের নাম উল্লেখ করেননি। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘গোরা’ উপন্যাসে ও অক্সফোর্ড বক্তৃতায় লালনের মানবধর্মের প্রভাবের কথা তুলে ধরেন।
লালনের দর্শনে মিশে আছে তিন ধারার সমন্বয়-বৌদ্ধ সহজিয়া মানববাদ, মুসলিম সুফীবাদের আত্মঅন্বেষণ এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণব প্রেমতত্তে¡র লীলাধর্মী ভাব। এই তিনটি ধারার মিলনে লালন নির্মাণ করেন এক অনন্য মানবতাবাদী দর্শন, যার কেন্দ্রে রয়েছে মানুষ। তাঁর কাছে ঈশ্বর কোনো আকাশের সত্তা নয়, বরং মানুষের ভেতরকার এক জাগ্রত সত্য।
লালনের জীবন ও মৃত্যু দুই-ই ছিল সংগীতময়। মৃত্যুর আগের রাতেও তিনি গান গেয়েছিলেন। ভোররাতে তিনি বলেছিলেন-“আমি চললাম।” সেই সকালেই চিরবিদায় নেন বাংলার এই মরমী সাধক। মৃত্যুর পর তিনি আর কেবল ব্যক্তি লালন নন, হয়ে ওঠেন এক অনন্ত প্রতীক-ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও মুক্ত মানবচেতনার প্রতীক।
লালন আমাদের শেখান, ধর্ম নয়, মানুষই সত্য। তিনি বলেন, “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, তোরই মাঝে আছে লালন, খুঁজে নে রে ভাই।” এই বাণী আজও যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে-নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা সেই ‘অচিন মানুষ’-এর খোঁজে।













http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
মুলার আগাম ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে
নভেম্বরে নতুন পোশাক পাচ্ছে পুলিশ
নির্বাচন ঘিরে ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’ মোকাবিলায় প্রস্তুতির নির্দেশ
২৬৬৪ ইয়াবাসহ আটক যুবদল নেতা রহিম
ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদকের ১৯ মামলার আসামী সবুজসহ গ্রেপ্তার ৫
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
অভিযানের পরদিনই দালালের খপ্পরে প্রাণ গেলো প্রসূতির
২৫০ আসনে গ্রিন সিগন্যাল দিতে যাচ্ছে বিএনপি, রয়েছে কঠোর বার্তাও
ডেঙ্গু কেড়ে নিল আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ত্বকীকে
চান্দিনায় ক্রেতা ও বন্ধকির ৪ কোটি টাকার স্বর্ণ নিয়ে উধাও ব্যবসায়ী
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাকের পিছনে দুই বাসের ধাক্কা আহত ২০
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২