কুমিল্লার
গোমতী নদীর চর এলাকার ভান্তী ও আমতলী গ্রামে প্রায় ১০ হেক্টর চরাঞ্চলে
বারি মূলা-১, বারি মূলা-২, বারি মূলা-৩ এবং হাইব্রিড কেটিএক্স জাতের শীতের
আগাম সবজি মুলা চাষ হয়েছে। তবে এবার মুলা চাষে তেমন হাসি নেই কৃষকের মুখে।
পোকামাকড়ের আক্রমণ, অনাবৃষ্টি, মাটির উর্বরতা হ্রাস ও জমি থেকে
পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা ও ঘন করে বীজ রোপনের কারণে আশানুরূপ ফলন
নেই এই চরে। তবে দাম ভালো পাওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ পুষিয়ে নেওয়া যাবে জানায়
মুলা চাষীরা।
সম্প্রতি মাঠে গোমতীর চরের ভান্তী ও আমতলী এলাকায় গিয়ে
দেখা গেছে, অতিবৃষ্টির কারণে পোকা মাকড়ে খাওয়া ও পচে যাওয়া মুলার স্তুপ পড়ে
আছে জমিতে। এসব পচা মুলা গরুর খাবার হিসেবে সংগ্রহ করছেন স্থানীয়রা।
অন্যদিকে, জমিতে থেকে ভালো মুলা তোলার কাজ করছেন গ্রামের নারাী-পুরুষরা।
কেউ মুলা সারিবদ্ধভাবে গোছাচ্ছেন, কেউ মুলা আগা ছাঁটাই করছেন, কেউ আবার
পঁচা ও দাগি মুলা আলাদা করে ভালো মুলার ৬/৭ টি করে আঁটি বাঁধছেন, কেউ কোমড়
সমান ডোবার পানিতে দাঁড়িয়ে সেগুলো পরিষ্কার করছেন। কেউ সাজানো মুলা বস্তায়
ভরে ট্রাকে তুলছেন। এসব মুলা দেশের বিভিন্ন বুড়িচং উপজেলার নিমসার পাইকারী
বাজার, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়ার
জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। মুলাচাষ ছাড়াও বির্স্তিণ এ চরে শীতের আগাম ফলন
হিসেবে ফুলকপি, বাঁধা কপি, লালশাক, করলা, সীম, ধনেপাতা, মিষ্টি কুমড়াসহ
বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন কৃষকরা।
ভান্তী গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান
বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে লাগানো আগাম জাতের মুলা গাছে হঠাৎ করে
পোকা ও ছত্রাক আক্রমণ দেখা দেয়। পোকা দমনের ওষুধ ব্যবহার করেও খুব একটা ফল
পাওয়া যায়নি। অতিবৃষ্টিতে বীজের মুল পচে যাওয়ায় ফলন কম হয়, আমরা যে আশা নেই
আগাম মুলা চাস করেছি সেই আশানুপ ফলন হয়নি।তবে এবার বাজারের মুলার দাম ভালো
প্রতি আটি মুলা ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত পাইকারী বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে ক্ষতির
পরিমাণ কম হবে। তিনি আরও জানান, আমি মুলা ছাড়াও কিছু জমিতে লাউশাক চাষ
করেছি, মুলার চেয়ে লাউশাকে লাভ বেশি হয়েছে।
আমতলী গ্রামের অপর কৃষক
সুজন মিয়া বলেন, গতবার বন্যায় ফসল ডুবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। বন্যার পর
উর্বর মাটিতে ফলন ভালো হয়েছে। তবে এ শীতের আগে মুলায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এ
চরে যারাই মুলা চাষ করেছে তাদের অনেকেরই ফলন কম হয়েছে। এটা মাটি দুষণের
কারণে হয়েছে নাকি জানিনা। কৃষি অফিসের লোকজন আসছে তারা পরামর্শ দিয়ে
গেছেন।
নিমসার বাজারের মুলার পাইকারী ব্যবসায়ী মো. ছিদ্দিক মিয়া
জানান, প্রতি বছর এ চর থেকে মুলা ট্রাকে ট্রাকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলায়
নিয়ে যাই। কিন্তু এবার ফলন ভালো হয়নি। বৃষ্টি ও রোগ বালাইয়ের কারণে ক্ষেতেই
মুলা পচে গেছে। দাগি ও পোকা মাকড়ে খাওয়া মুলা বাজারে বিক্রি করা যায়না।
প্রতি বছর ৪/৫ ট্রাক মুলা সংগ্রহ করা যায় কিন্তু এবার দুই ট্রাক মুলা
সংগ্রহ করেছি। আমরা শীতের আগে যে ব্যবসা করতাম তা এ বছর আর হলো না।
কুমিল্লা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ভান্তী ও
আমতলীর গোমতীর চরের প্রায় ৭ হেক্টর জমিতে মুলা চাষ হয়েছে। ৪৪ থেকে ৫০
দিনের মধ্যে মুলা বিক্রি উপযোগী হয়। আমি নিজে মুলা জমিগুলো পরিদর্শন
করেছি, এবার একটা সমস্যা হয়েছে, কৃষকরা একটা বীজ থেকে আরেকটা বীজের দূরত্ব
কম ও ঘন করে লাগিয়েছে। একটা গাছ থেকে আরেকটা গাছের দূরত্ব থাকার কথা ছিল ১
ফুট, কিন্তু কৃষকর এক ফুটের মধ্যে ৩ থেকে ৪টা করে মূলার চারা লাগিয়েছে যার
কারণে মুলা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও অতিবৃষ্টির কারণে চারার গোড়া
পঁচে যাওয়ায় ফলন কম হয়েছে তবে দাম ভালো পাচ্ছে। কৃষকদের জৈব ও বালাইনাশক
ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা পরামর্শ অনুযায়ী চাষ করলে
আগামীতে চরে ভালো ফলন তুলতে পারবেন।
