রণবীর ঘোষ কিংকর।
কুমিল্লার
চান্দিনায় ক্রেতা ও বন্ধক দাতাদের কোটি টাকার স্বর্ণ এবং গচ্ছিত টাকা নিয়ে
উধাও হয়ে গেছেন একজন জুয়েলার্স এর মালিক। গত ১০ দিন ধরে তার ব্যবসায়
প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে চান্দিনা উপজেলার জোয়াগ ইউনিয়নের
লক্ষ্মীপুর নতুন বাজারে। উধাও হয়ে যাওয়া ব্যবসায়ী ওই বাজারের পর্শীয়া
জুয়েলার্স এর মালিক নারায়ণ কর্মকার (প্রদীপ)। সে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার
চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি কয়েক মাসে স্বর্ণের
দাম বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি ভরি ২ লাখ টাকার বেশি হওয়ায় সে লোভ সামলাতে পারেনি
বলেও অভিযোগ উঠেছে। ওই ব্যবসায়ী সব মিলিয়ে ৪ কোটিরও বেশি টাকা এবং স্বর্ণ
নিয়ে পালিয়ে গেছেন বলে ভোক্তভোগীরা দাবি করেন।
ভোক্তভোগী কৈলাইন গ্রামের
ছফিউল্লাহ এর ছেলে শরীফ জানান, নারায়ণ কর্মকার (প্রদীপ) এই এলাকারই
বাসিন্দা। সে লক্ষ্মীপুর নতুন বাজার সংলগ্ন লক্ষ্মীপুর গ্রামের মনোরঞ্জন
কর্মকার (মনা খলিফা) এর ছেলে। প্রায় ২০ বছর ধরে এই বাজারে জুয়েলারি ব্যবসা
পরিচালনা করে আসছে। তিনি জিম্মাদার হয়ে ওই ব্যবসায়ীকে ৪ লাখ টাকা ঋণ তুলে
দেন। এছাড়া তার স্ত্রীর ২ ভরি স্বর্ণও ওই ব্যবসায়ীর নিকট গচ্ছিত ছিলো।
দৈনিক ৬০০ টাকা করে সমিতি করেছিলেন। গত ২ বছরের টাকা তিনি নেননি। তার মোট
১২ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী।
সরেজমিনে, জোয়াগ ইউনিয়নের
লক্ষ্মীপুর নতুন বাজারে গিয়ে দেখা যায় পর্শীয়া জুয়েলার্সটি বন্ধ, সাটার ও
কলাপসিবল গেইটে তালাবদ্ধ। খোঁজ নিয়ে জানা যায় গত ১০ দিন ধরে ব্যবসায়ী
নারায়ণ কর্মকার (প্রদীপ) গাঢাকা দিয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর নতুন
বাজার সংলগ্ন লক্ষ্মীপুর গ্রামে। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি।
তবে ভোক্তভোগীরা অভিযোগ করেন- ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়ে এখনো
তার শ^শুর বাড়ি পাশর্^বর্তী ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার গোকর্ণঘাট এলাকায় আশ্রয়
নিয়েছে। তাদের মাধ্যমে ওই ব্যবসায়ীকে খোঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি
জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভোক্তভোগী পাশর্^বর্তী কচুয়া উপজেলার তুলপাই
গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই বাজারের ব্যবসায়ী বরুণ সাহা জানান, তিনিও দৈনিক
সমিতির সদস্য। প্রতিদিন ৭৫০ টাকা করে জমা দিতেন। তার ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা
ওই ব্যবসায়ী আত্মসাৎ করেছেন। তিনি আরও জানান, আমরা ৫১ জন সদস্য দৈনিক সমিতি
করেছিলাম। প্রতি বৈশাখ মাসে শুরু হতো, চৈত্র মাসের শেষ দিন সমিতির টাকা
জমাকারীদের প্রদান করা হতো। এসব সমিতির টাকা তার নিকট গচ্ছিত থাকতো। সবার
টাকা নিয়ে সে পালিয়ে গেছে।
একই ভাবে ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেনের ৩লাখ ৩০
হাজার, আবুল হোসেন এর ৩ লাখ ৫০ হাজার, এরশাদ আলীর ৫ লাখ, বেলাল গাজীর ১ লাখ
৪২ হাজারসহ অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা ও বন্ধকদাতার স্বর্ণ নিয়ে
পালিয়ে গেছে ওই ব্যবসায়ী।
এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী নারায়ণ কর্মকার (প্রদীপ) এর মুঠোফোনে কল করে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এব্যাপারে
চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) জাবেদ উল ইসলাম বলেন- ‘এবিষয়ে কেউ
এখনো আমাদেরকে জানায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
