বুধবার ২৯ অক্টোবর ২০২৫
১৩ কার্তিক ১৪৩২
অভিযানের পরদিনই দালালের খপ্পরে প্রাণ গেলো প্রসূতির
বশিরুল ইসলাম
প্রকাশ: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৪৪ এএম |


অভিযানের পরদিনই দালালের  খপ্পরে প্রাণ গেলো প্রসূতির কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে দালালবিরোধী অভিযানের পরদিনই দালালদের খপ্পরে পড়ে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে । দালাল চক্র হাসপাতাল থেকে রোগীকে নিয়ে যায় শহরের রামমালা টমছম ব্রিজ এলাকার বেসরকারি হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান ওই রোগী।মারা যাওয়া প্রসূতির নাম কাশমিন আক্তার (২১)। তিনি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ হাটিয়ার আজমির হোসেনের স্ত্রী।
পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে কাশমিন আক্তারকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর গাইনি ওয়ার্ডে নেওয়ার পথে দালাল চক্রের সদস্যরা রোগীর স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পরও চিকিৎসক না আসায় কাশমিনের মৃত্যু হয়।
রোগীর স্বজন এমরান জানান, আমরা প্রথমে কুচাইতলী হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। পরে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার জুয়েল ও হেলপার রিফাত আমাদের বলেন, এখানে ডাক্তার পাবেন না, প্রাইভেট হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসা পাবেন। আমরা তাদের কথায় হলি ফ্যামিলিতে যাই। সেখানে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ডাক্তার এলেও রোগীকে বাঁচানো যায়নি। 
স্বজনদের অভিযোগ, ব্লাডের জন্য চার হাজার ছয়শ টাকা নেওয়া হয়। ডাক্তার দেখার আগেই রক্তক্ষরণে রোগী মারা যান। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত মরদেহ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দিতে বলেন।এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের প্রশ্নকেন সরকারি হাসপাতালের ভর্তি রোগীকে প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হলো? 
স্থানীয়দের অভিযোগ, কুমেক হাসপাতালের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় দালাল চক্র রোগীদের প্রলোভন দেখিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায় এবং মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করে। টাকা না দিলে হুমকি-ধমকিও দেয় তারা। এমনকি রোগীর স্বজনদের গায়েও হাত তোলা হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলা এমন কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে সোমবার জেলা প্রশাসন ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে কুমেক হাসপাতাল থেকে ১০ দালালকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই অভিযানের পরদিন কুমেক হাসপাতালে ওঁৎ পেতে থাকা দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রাণ গেলো প্রসূতি মায়ের।
কুমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. তানভির বলেন, রোগী কাশমিন আক্তারকে আমি ভর্তি দিয়েছিলাম। গাইনি ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছিল। পরে কীভাবে হলি ফ্যামিলিতে গেল, তা আমার জানা নেই।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাসুদ পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। সহকারী পরিচালক ডা. শাহাজাহান বলেন, কে কোথা থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায়, তা প্রশাসনের বিষয়।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. রেজা মো. সারোয়ার আকবর বলেন, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালকে আগেও সতর্ক করা হয়েছিল। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভাররা জানান, অভিযুক্ত জুয়েল ও রিফাত বর্তমানে হাসপাতাল এলাকায় কোন এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার না। তারা এখন দালালি করে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুচাইতলীর জুয়েল, মুরাদপুরের কাউছার, ইমন, আরমান, মামুন, জাহিদ, রাহাত ও ‘বাইট্টা’ মিলন নামের একদল যুবক দীর্ঘদিন ধরে কুমেক হাসপাতালে দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।
এদের মধ্যে ‘বাইট্টা মিলন’ সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ধরা পড়লেও বয়স কম হওয়ায় ছাড়া পেয়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, সে হাসপাতালের সবচেয়ে প্রভাবশালী দালাল এবং রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করে থাকে।এ ঘটনার পর কুমিল্লার সচেতন মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার ২৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসন ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে ধরা পড়ে ১১জন দালাল। তাদের মধ্যে মিলন নামে এক দালাল বয়স কম থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জানা যায় সেই দালালদের মধ্যে সবচেয়ে বেপরোয়া। তার বিরুদ্ধে হাসপাতালের স্টাফ থেকে শুরু করে স্থানীয়দের নানা অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ১০ দালালকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সরাসরি জেলহাজতে পাঠানো হয়। তাদের কাউকে ১০দিন কাউকে ১৫দিন আবার কাউকে ২০দিন বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। হাসপাতালে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের নানা ভাবে হয়রানি করে আসছে হাসপাতালের দালাল চক্র। দালাল চক্রের সদস্যদের কাছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও জিম্মি বলে জানা গিয়েছে। তাছাড়াও হাসপাতালে দালালদের বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। কেউ ঔষধ কোম্পানীর নামে দালালি করে। কেউ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্ড ঝুলিয়ে দালালি করে আবার হাসপাতালের স্টাফ কার্ড ঝুলিয়ে দালালি করে। ইদার্নিং দেখা যাচ্ছে গণমাধ্যমের ফিতা ব্যবহার করে হাসপাতালে দালালি করছে। জানা গিয়েছে গণমাধ্যমের কার্ড ঝুলিয়ে দালালি করলে প্রশাসন ধরবে না এজন্য এইসব ফিতা ব্যবহার করা হয়। 

















http://www.comillarkagoj.com/ad/1752266977.jpg
সর্বশেষ সংবাদ
অভিযানের পরদিনই দালালের খপ্পরে প্রাণ গেলো প্রসূতির
লাল শাকে রঙিন গোমতীর চর
ডেঙ্গু কেড়ে নিল আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ত্বকীকে
কুমিল্লা নিহা ব্রিকস পরিচালনা করতে আর কোন বাঁধা নেই : হাইকোর্টের আদেশ
বুড়িচং-মীরপুর সড়ক অবরোধ করে ২ ঘন্টা মানববন্ধন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
চান্দিনায় জামায়াতের গণমিছিলে সংঘর্ষ: প্রার্থীর মাইক কেড়ে নিলেন কর্মীরা
এক আসনে একাধিক প্রার্থী বাছাই করে রাখছে বিএনপি
এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে থেকেমৃত্যুর কোলে তুহিন
কুমিল্লা নগরীর যানজট নিরসনের দাবীতে প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
সারাদেশে ৫ দিন বৃষ্টির আভাস
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২