সুনন্দা
সেন (কবির) তাঁর বাবা বাংলা সাহিত্যের পন্ডিত সুধীর সেন, রবীন্দ্রনাথের
স্নেহধন্য ছিলেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক ছিলেন ৫৯ সালে পরোলোক
গমন করেন। তাঁর মা সুধাসেন তিনিও ছিলেন বাংলার খন্ডকালীন শিক্ষক। থাকতেন
ঐতিহাসিক তালপুকুর পাড়ে ওস্তাদ মন্টু সিংহদের বাড়ির পাশে ভাড়া বাড়িতে,
সুধাসেন ভালো কির্তন গাইতে পারতেন, তিনি ছিলেন চির অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল
নারী ৫০-৬০ এর দশকে কুমিল্লার অন্তঃপুরবাসিনী মেয়েদের, নারীদের শিক্ষা
সংস্কৃতির পাদপিঠে এনেছিলেন। তার নাম সুধা মাসিমা হিসাবে ছড়িয়ে গিয়েছিল।
সামাজিক কাজ নৃত্যনাট্য, নাটক সংগীত সব কিছুতেই তাঁর স্পর্শ ছিল, আমার লেখা
কুমিল্লার মঞ্চ নাটকের ইতিহাস, কুমিল্লায় রবীন্দ্রনাথ এবং কবির ১৫৬তম
জন্মবার্ষিকী ফোল্ডার তাঁর কাজ নিয়ে লেখা ছাপা হয়েছে (ছবি সংযুক্ত)।
সুধীর
সেন ও সুধা সেনের মেয়ে সুনন্দা সেনকে নিয়ে আমার আজকের লেখা। বাবা মায়ের
অস্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সুনন্দা সেন জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন
ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারের কবির সাহেবকে। যিনি পাকিস্তান সরকারের একজন
ক্ষ্যাতিমান চাটর্ড একাউন্টেন্ট ছিলেন। সুনন্দা কবির বাবা মায়ের আদর্শে বড়
হয়েছেন গৌরবান্বীত করেছেন কুমিল্লার সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে। বাবা সুধীর সেন
১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দি গ্রেট ভার্নাল থিয়েটারে নাটক করতেন আমরা তার
উত্তরসুরী। আমার লেখা কুমিল্লার মঞ্চ নাটকের ইতিহাস গ্রন্থে তাঁর কথা আছে।
১১
অক্টোবর ছোট ভাই আহসানুল কবিরের আমন্ত্রণে ধর্ম সাগরের দক্ষিণ পাড়ে একটি
ভবনের ৯ তলায় সুনন্দা কবিরকে ঘিরে বসেছিল কুমিল্লার নবীন প্রবীন শিক্ষা
সংস্কৃতির তিন প্রজন্মের মিলন মেলা। যাতে ছিলেন দিদি স্বয়ং।এসময় অধ্যাপক
শান্তিরঞ্জন ভৌমিক, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান, জহিরুল হক দুলাল, সমীর মজুমদার,
এডভোকেট গোলাম ফারুক, ড. আলী হোসেন চৌধুরী, জামিল আহমেদ খন্দকার, ড.
আনোয়ারুল হক, অভিজিৎ সিনহা মিঠু, অধ্যাপক ডা. মোসলেহ উদ্দিন, ডা. খোরশেদ
আলম, অধ্যক্ষ নিখিল রায়, যাত্রীর বিধান চন্দ, ড. মো: ফারুক সরকার, শক্তি
কাম সিনহা, ডা. মল্লিকা বিশ্বাস, তাসলিমা বেগম, আহসানুল কবির,ইকরাম
মুস্তাফিজ পপলু, রফিকুল ইসলাম সোহেল, চন্দন দেব রায় ও আরো অনেকে উপস্থিত
ছিলেন। দিদির সৌজন্যে খালি গলায় গান পরিবেশন করেন শিল্পী কাঁকন দাশ।
কথায়
কথায় উঠে এসেছিল ৫০, ৬০ ও ৭০ দশকের কুমিল্লার সংস্কৃতির কথা, স্মৃতি হাতড়ে
অনেকে বের করে এনেছিল পরিমল দত্ত, বানী দত্ত, বাঁশরী ভদ্র,কল্যানী
রক্ষিত,কুলেন্দু দাস, সুখেন্দু চক্রবর্তি, সুরেন দাস, মন্টু সিংহ,শেফাল
রায়, দুলাল চৌধুরী, কমেলেন্দু দাস,মুকসুদ আলী মজুমদার, নাছির আহমেদ,
মেহাম্মদ রুহুল্লা,মিলন আহমেদ প্রমুখের কথা। আমাদের পূর্বসুরিদের কথা। আমার
সৌভাগ্য আমার গবেষণালব্ধ কুমিল্লার মঞ্চ নাটকের ইতিহাস গ্রন্থে এদের সবার
কথা আছে।
আমার তাড়াছিল আমি রাতের বাসে কক্সবাজার আসবো তাই আমি আমার
বইথেকে কিছু তথ্য দিদির সাথে শেয়ার করে কনফার্ম হয়ে নিলাম। তাঁর হাতে আমার
লেখা কুমিল্লার মঞ্চ নাটকের ইতিহাস, স্বাধীনতাত্তোর কুমিল্লার সংস্কতি
অঙ্গনের কিছু লিফলেট এবং আমার মেয়েদের সম্পদনায় ‘আমাদের বাবা শাহজাহান
চৌধুরী’ তাঁর হাতে তুলেদিতে পেরে আমি ধন্য হলাম। তিনি আমাকে আশির্বাদ করলেন
মনেহলো তাঁর হাতের ছোঁয়ায় আমার সংস্কৃতি ও নাট্য জীবন ধন্য হলো। আপনি আরো
অনেকদিন বেঁচে থাকুন দিদি আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে।
শুনেছি আড্ডা চলেছিল
বেশ রাত অবদি ইতিমধ্যে আরো অনেকে এসেছিল যাদের নাম আমি উল্লেখ করতে পারিনি।
৮৫ বছরের কুমিল্লার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সোনার খনি সুনন্দা সেন ও সবার কাছ
থেকে বিদায় নিয়ে রাতের ¯িøপার কোচে শুয়ে শুয়ে অতীতকে স্মরণ করলাম এবং তৃপ্ত
হলাম স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত আমরাও কম লড়াই সংগ্রাম করিনি। কিন্তু
আগামী দিনগুলোতে কি হবে তা ভেবে এখন থেকেই আতঙ্কিত বোধ করছি।
