বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে দেশের পোশাকশিল্প। শুল্ক সমঝোতা না হলে বেকার হতে পারে লাখ লাখ শ্রমিক। সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক ছাড় না দিলে বা শুল্কহার না কমালে দেশের রপ্তানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুল্ক ইস্যুতে ভিয়েতনাম-ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেভাবে দর-কষাকষি চালিয়ে সফল হয়েছে, বাংলাদেশকেও সেই একই পথ অনুসরণ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার শেষ পর্যন্ত শুল্ক ছাড় না দিলে বাংলাদেশের সামনে বড় ধরনের বিপদ অপেক্ষা করছে; যা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। রপ্তানিকারকরা এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গড়ে ১৬ শতাংশ (১৫.৬২ শতাংশ) শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশ করে। ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে তখন মোট ৫১ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। রপ্তানিকারক ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশি রপ্তানিপণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ বড় ধরনের অর্থনৈতিক আঘাত; বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য। আগে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল প্রায় ১৬ শতাংশ, এখন তা তিন গুণেরও বেশি। হঠাৎ এই ব্যাপক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিজিএমইএ সূত্র বলছে, ছোট ও মাঝারি মিলিয়ে ১ হাজার ১০০-এর বেশি কারখানায় ১০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে ১০ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলোর সক্ষমতায় ঘাটতি আছে। বাড়তি শুল্কের চাপ এসব প্রতিষ্ঠান সামাল দিতে পারবে না। ফলে ক্রয়াদেশ বা অর্ডার পাবে না তারা। ক্রয়াদেশ না পেলে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। বাড়তি শুল্কের প্রভাব ছোট-বড় সব কারখানাতেই পড়বে। যেকোনো ফ্যাক্টরি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ক্রয়াদেশ না পেলে সেই প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারে না।
তখন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, ক্রয়াদেশ সাধারণত দুভাবে আসে। একটি হলো সরাসরি, যা ওয়ালমার্টের মতো বড় বায়ারদের মাধ্যমে। আরেকটি হলো পরোক্ষভাবে। অর্থাৎ ইম্পোর্টার ও বায়িং হাউসের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয়। ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো সরাসরি রপ্তানি করে না। বাড়তি শুল্কের কারণে এসব প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পোশাকমালিকরা বলছেন, এর মধ্যে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালীন সময়ের জন্য বায়িং হাউস ও ইম্পোর্টারের মাধ্যমে যেসব ক্রয়াদেশের প্রস্তাব পাওয়া গেছে, তার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ক্রয়াদেশ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বেশি নির্ভরশীলতার কারণে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
শুল্ক কমানোর আলোচনায় বেশ কিছু দেশ এগিয়ে আছে। অনেকেই দর-কষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকেও এ পথে হাঁটতে হবে। এ জন্য দরকার সাহসী কৌশল ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষি করে যদি বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশের তুলনায় শুল্কহার কমিয়ে আনা যায়, তাহলে উল্টো বাজারটিতে রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
তবে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শুল্কহার যদি বেশি হয়, তাহলে এই বাজার ধীরে ধীরে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। ক্ষুদ্র কারখানাগুলোতে বিশেষ সুবিধা, অর্থাৎ নীতি-সহায়তা ও কম সুদে বা সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আশা করছি, সরকার দেশের পোশাকশিল্পকে আসন্ন সংকট থেকে উত্তরণের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।