বাংলাদেশের
ক্রীড়াঙ্গনে এখন প্রবাসী খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ একেবারেই নতুন কিছু নয়।
ফুটবলে যেমন হামজা চৌধুরী, শমিত সোম আর ফাহামিদুল ইসলাম জাতীয় দলের
জার্সিতে আলোচনায় এসেছেন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো ব্যাডমিন্টনের নামও।
ঢাকার
পল্টনের উডেনফ্লোর জিমনেসিয়ামে আজ শুরু হয়েছে ৩৯তম জাতীয় ব্যাডমিন্টন
চ্যাম্পিয়নশিপ, যেখানে অংশ নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আয়মান ইবনে জামান।
তবে তিনি বিদেশে বড় হওয়া কেউ নন, বরং দেশেই শিখেছেন ব্যাডমিন্টনের
খুঁটিনাটি। জাতীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টনে দুবার একক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন
আয়মান ২০১৪ ও ২০১৬ সালে।
২০২০ সালে পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি
জমান আয়মান। নেব্রাসকায় কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর এখন
তিনি একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। পাশাপাশি শিকাগোর একটি ব্যাডমিন্টন
একাডেমিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক ও প্রাদেশিক প্রতিযোগিতায় অংশ
নিচ্ছেন। শিকাগোতে তিনি র্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে এবং নেব্রাসকায়
হয়েছেন স্টেট চ্যাম্পিয়ন।
২০১৬ সালের পর এবারই প্রথম জাতীয় পর্যায়ে
ফিরেছেন আয়মান। লক্ষ্য স্পষ্ট আবার জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া। আগস্টে
থাইল্যান্ডে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন
আয়মানসহ আরও সাতজন। তবে বড় লক্ষ্য আসন্ন এসএ গেমস।
নিজের
প্রত্যাবর্তন নিয়ে আয়মান বললেন, ‘আমি এসেছি আবার দেশের হয়ে খেলতে। আবার
জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। এই প্রতিযোগিতা থেকেই এসএ গেমসের দল গড়া হবে।
তাই এখানে অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে।’ আয়মানের বাবা কামরুজ্জামান
রতনের গলায় গর্ব, ‘সে দেশের জন্য খেলতে চায়, এটা আমাদের জন্য অনেক বড়
সম্মান।’
এবারের চ্যাম্পিয়নশিপে আরও এক প্রবাসীর অংশগ্রহণ নজর
কেড়েছে। ৩২ বছর বয়সী মোস্তাফিজুর রহমান লিপটন বর্তমানে কাতারের দোহায় একটি
একাডেমিতে কোচিং করান। ২০২১ সালে জাতীয় সামার র্যাঙ্কিংয়ে দ্বৈতে
চ্যাম্পিয়ন ও বাংলাদেশ গেমসে ব্রোঞ্জ জেতা লিপটন এবার দেশে ফিরে জাতীয় আসরে
খেলছেন।
লিপটন বললেন, ‘এবারের প্রতিযোগিতা অনেক গোছানো, আগের চেয়ে
অনেক যত্ন নেওয়া হয়েছে। প্রাইজমানিও বেড়েছে, খেলোয়াড়দের লড়াইয়ের মানসিকতাও
তাই বেড়েছে।’
প্রবাসীদের এমন সক্রিয় অংশগ্রহণে সন্তুষ্ট বাংলাদেশ
ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল কবির। তাঁর কথা, ‘আমরা চাই
ফুটবলের মতো ব্যাডমিন্টনেও প্রবাসীদের অংশগ্রহণ বাড়ুক। আগ্রহীদের জন্য আমরা
সার্কুলার দিয়েছি, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি।’
এই জাতীয় প্রতিযোগিতা
শেষেই এসএ গেমস সামনে রেখে শুরু হবে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। পাশাপাশি
ফেডারেশন চেষ্টা করছে একজন ইন্দোনেশিয়ান কোচ নিয়োগের।
তবে আয়োজনের
আড়ালে রয়েছে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা। প্রতিযোগিতার ভেন্যু পল্টনের উডেনফ্লোর
জিমনেসিয়ামের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) নষ্ট হয়ে গেছে।
ফেডারেশন
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহায়তা চাইলেও জানা গেছে, মেরামতের খরচ ১২ কোটি
টাকা! তাই আপাতত ভাড়ায় নেওয়া হয়েছে ১০০ টনের এসি, যা কোর্ট ঠান্ডা রাখলেও
গ্যালারির দর্শকদের ঘাম ঝরছে গরমে। তবু কর্কের সঙ্গে শাটলের ঠোকাঠুকিতে
মুখর জিমনেসিয়াম। কারণ, এবার রেকর্ডসংখ্যক ৪৫০ জন খেলোয়াড় অংশ নিচ্ছেন,
৬৩টি জেলার প্রতিনিধি হয়ে। এর মধ্যে পুরুষ ৩৭৭ জন, বাকিরা নারী।
পুরস্কারও বেড়েছে এবার। আগে ছিল ৩ লাখ, এবার ১০ লাখ টাকা। পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন পাবে দেড় লাখ, নারী এককে চ্যাম্পিয়ন এক লাখ টাকা।
গতকাল এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেছেন সাবেক ক্রিকেটার ও বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আজ শুরু হয়েছে মূল পর্বের খেলা।