প্রদীপ মজুমদার:
কুমিল্লার
লালমাই উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের পশ্চিম আলীশ্বর ডাকাতিয়া নদীর ওপর
নির্মিত প্রায় ৩০০ মিটার বাঁশের সাঁকো দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে ৪০ বছর ধরে
চলাচল করছে শিক্ষার্থী সহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে
দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন স্থানীয়রা। এখন ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে
চলাচলের সময় মাঝেমধ্যেই ঘটছে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা যায়,
উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের আলীশ্বর - শিকারীপাড়া সংযোগ সড়কে ডাকাতিয়া
নদীর ওপর তৈরি করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। দীর্ঘদিন ধরে ওই স্থানে একটি পাকা
সেতুর দাবি বিভিন্ন দপ্তর ও জনপ্রতিনিধির কাছে জানিয়ে এলেও এখনো তার সুরাহা
হয়নি। তবে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব অধিদপ্তরের পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
উপজেলার শিকারীপাড়া,
আলীশ্বর ও ভাবকপাড়ার মানুষ আজও বাঁশের তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ একটি সাঁকো দিয়েই
পার হচ্ছেন ডাকাতিয়া নদী। বর্ষাকালে পানি বাড়লে ভয় ও আতঙ্কই হয় তাদের
নিত্যসঙ্গী। প্রতিদিন স্কুল-কলেজে যাওয়া শিক্ষার্থী, কৃষক, বৃদ্ধ, রোগী এই
সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ডাকাতিয়া নদীর পূর্ব পাড়ে রয়েছে
পেরুল উত্তর ইউনিয়নের আলীশ্বর গ্রাম আর পশ্চিম পাড়ে বাকই উত্তর ইউনিয়নের
শিকারীপাড়া ও ভাবকপাড়া। পশ্চিম পাড়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন নদী পার হয়ে
যেতে হয় আলীশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বীনিয়া মাদরাসা ও আদর্শ উচ্চ
বিদ্যালয়ে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, চিকিৎসা, বাজার কিংবা প্রশাসনিক কাজে
যাওয়ার একমাত্র ভরসাও এই বাঁশের সাঁকো। প্রতিবছর শাহ আলী মাজারে ওরস
উপলক্ষে ২০ হাজার মানুষ এই সাঁকো পার হয়ে আসেন মানত দিতে।
স্কুল
শিক্ষার্থী সুরাইয়া বলেন, এখান (সাঁকো) দিয়ে আসার পথে আমাদের অনেক ভয় লাগে।
বন্যায় এখানে অনেক পানি উঠে। আমরা স্কুলে যাতায়াত করতে পারি না। আমাদের
অনেক সমস্যা হয়। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো বাদ দিয়ে নতুন একটি ব্রিজ
চাই।
পাড়া ভাবকপাড়ার কৃষক আকতার হোসেন বলেন, “আমরা কৃষকরা প্রতিদিন
দুই-তিনবার মালামাল নিয়ে নদী পার হই। অনেক কষ্ট হয়। সাঁকোতে ভারসাম্য রাখতে
পারি না।”
আলীশ্বর গ্রামের ৭৮ বছর বয়সী আবদুস ছাত্তার জানান, “বাচ্চারা
সাঁকো পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়। আমরাই গিয়ে তুলতে হয়। ৮-১০টা গ্রামের
মানুষ একটামাত্র বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করছে। এখন আর প্রতিশ্রুতি নয়, আমরা
ব্রিজ চাই।”
আলীশ্বর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্ধার্থ
সিংহ বলেন, “প্রতিদিন আমাদের বহু শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পার হয়।
ব্রীজ হলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়বে এবং তারা নিরাপদে আসা-যাওয়া করতে
পারবে।”
লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিমাদ্রী খীসা বলেন,
“সাঁকোটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বিবেচনায়
এলজিইডি কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের
উদ্যোগ নেওয়া হবে।