কুমিল্লা
ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে তাকে দীর্ঘ প্রায় ৮
ঘন্টা সময় ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। রাত পৌনে ১১ টায় এ রিপোর্ট লেখা
পর্যন্ত তিনি কলেজের মসজিদে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। অধ্যক্ষের পদত্যাগের ১
দফা দাবিতে সোমবার (১৪ জুলাই) বিকাল তিনটা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত
কিছুক্ষণ পরীক্ষা ভবনে ও পরে মসজিদের ভেতরেই অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এসময় শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কয়েকদিন সময় চাওয়া হলেও
অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
জানা
গেছে, ৯ দফা দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু এ নিয়ে অধ্যক্ষের ‘আশ্বাসমূলক বক্তব্য ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ’ না পেয়ে
সোমবার দুপুর থেকেই ‘এক দফা এক দাবি, অধ্যক্ষের পদত্যাগ চাই’ স্লোগান তুলে
বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে
রাখেন। এক পর্যায়ে সোমবার সন্ধ্যায় মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে সেখানেও তাকে
অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন তিনি।
এসময় তার সাথে কয়েকজন শিক্ষককেও বসে থাকতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীদের
দেয়া ৯ দফা দাবি হলো-কলেজে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে অবিলম্বে ছাত্র
সংসদ নির্বাচন আয়োজন, ডিগ্রি শাখার জন্য পৃথক ও আধুনিক ক্যাম্পাস স্থাপন,
সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার,
বহিরাগত, মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি
স্থাপন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বাস ও মাইক্রোবাস সার্ভিস চালু, আবাসিক হল ও
আশপাশের হোটেল এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয় পানি, আধুনিক ওয়াশরুম এবং
যুগোপযোগী শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড
পরিচালনায় আলাদা ফান্ড গঠন, কলেজের সব ধরনের আয়-ব্যয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে
স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
ভিক্টোরিয়া কলেজের মসজিদে অবরুদ্ধ অবস্থায়
অধ্যক্ষের সাথে থাকা অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি
আমরা দেখছি। অধ্যক্ষ স্যারকে অন্তত আর ১০ দিন সময় দিলে এগুলো একটা সমাধানের
পথে আসবে।
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মফিদুল হাসান পল্লব বলেন,
এই কলেজে আমরা গেলে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। অধ্যক্ষ স্যার দরজায়
তালা দেন। প্রশাসনের কাছে যাওয়ার আগে কাউকে নিয়ে যেতে হয়। এটা কেমন
গণতান্ত্রিক পরিবেশ?
উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম
বলেন, ফয়জুন্নেসা হলে শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। মেয়েরা
কথা বললে তাদেরকে শোকজ, অভিভাবক ডাকে, বৈঠকের ভয় দেখানো হয়। নয় দফার কোনো
দাবিই মানা হয়নি। বরং আমাদের নিরাপত্তাহীনতায় রাখা হচ্ছে।
নবাব
ফয়জুন্নেসা হলের শিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা বলেন, হলে পানি নেই। কথা বলেও
সমাধান নেই। নয় দফা দাবি জানিয়েও সমাধান নেই। তাই আমরা উনাকে চাইনা। উনি এক
বছরেও তামিম নির্যাতনের বিচার করতে পারেনি। যারা নির্যাতন করেছে তাদের
শাস্তি দিতে পারেনি। অথচ আমাদের বহিষ্কার করবে বলে হুমকি দিচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের
দাবির প্রেক্ষিতে আয়-ব্যয়ের হিসাবের অস্বচ্ছতার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক
পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক মো: মুনছুর হেল্লাল
জানান, ‘প্রশাসনিক ভবনের ডিজিটাল বোর্ডে এখন সবগুলো খাতওয়ারী নোটিশ
দেখাচ্ছে। ওয়েবসাইটেও দিয়েছে। ’
তবে পদত্যাগের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।