প্রমথনাথ বিশী
বাংলাসাহিত্যের একজন খ্যাতিমান লেখক। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা
বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। রবীন্দ্র-বঙ্কিম-মধুসূদন বিষয়ে তাঁর অসাধারণ
গবেষণা। এছাড়া মৌলিক রচনা-উপন্যাস ও ছোটগল্প। আমি তাঁর একটি ছোটগল্পের
সূত্র ধরে নিজের কথা আজ লিখছি। গল্পটি রম্যরচনা। সংক্ষেপে বলছি।
ঈশ^র
শুনতে পেয়েছেন যে, পৃথিবীতে এখন কোনো মানুষ নেই। এই কথা শোনার পর তিনি
স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত হলেন। বলে কী। এত মানুষ সৃষ্টি করলাম, এখন বলে
একটিও মানুষ নেই। তাই ঈশ^র মানুষের জন্ম-মৃত্যুর হিসাব যিনি রাখেন, তিনি
চিত্রগুপ্ত, তাঁকে খবর পাঠালেন। চিত্রগুপ্ত এসে হাজরি। ঈশ^র বললেন- শুনতে
পেলাম, পৃথিবীতে কোনো মানুষ নেই, তাহলে এত মানুষ সৃষ্টি করার পর তারা কোথায়
গেলো। বললেন, তোমরা খাতাপত্র দেখ, হিসাব কর এবং এখনই তোমার লোকজন নিয়ে
পৃথিবীতে গিয়ে সরজমিনে দেখে এসে মানুষের সংখ্যার হিসাব উপস্থাপন কর। ঈশ^রের
আদেশ।
চিত্রগুপ্ত তাঁর লোকজন ও খাতাপত্র নিয়ে পৃথিবীর দিকে রওয়ানা
দেয়ার আগে সভা করলেন। প্রথম কোথা বা কোন জায়গা থেকে গণনা শুরু করবেন তা
আলোকচনাক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে, পৃথিবীতে সবচেয়ে ঘনবসিত হলো কলিকাতা। সুতরাং
সেখান থেকে কাজটি শুরু হোক। চিত্রগুপ্ত তাঁর দলবল নিয়ে গণনা শুরু করলেন।
রাস্তাঘাটে জনবসতি প্রচুর। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন- ‘তুমি কি মানুষ ?’
উত্তর- ‘না, আমি কংগ্রেসী’। ‘তুমি ?’ উত্তর- ‘বামপন্থী’। এভাবে সকাল থেকে
সন্ধ্যা পর্যন্ত মানবাকৃতি বহুজনের সাক্ষাৎকার নিলেন কেউ নিজেদের মানুষ
হিসেবে পরিচয় দেয়নি। চিত্রগুপ্ত খাতা খুলে দেখেন অগণিত মানুষ পৃথিবীতে
পাঠানো হয়েছে। অথচ বাস্তবে সরজমিনে মাঠপর্যায়ে এসে দেখেন যে কোনো মানুষ
নেই। তিনি হতাশ হলেন। সবচেয়ে বড় কথা ঈশ্বরকে কি জবাব দিবেন ? চিন্তিত
হতাশাগ্রস্ত চিত্রগুপ্ত ফিরে যাওয়ার আগে দলবল নিয়ে চিৎপুর চিড়িয়াখানাটি
একবার দেখে যেতে চাইলেন এবং সন্ধ্যায় গেলেন। ঘুরতে ঘুরতে দেখেন- একটি
মূর্তির মতন লোমশ মানবাকৃতি একজন দাঁড়িয়ে আছে। সাইনবোর্ডে লেখা ‘বনমানুষ’।
তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন, সে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।
চিত্রগুপ্ত
ফিরে গেলেন এবং ঈশ্বরের কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপন করলেন। লিখলেন,- ‘পৃথিবীতে
সত্যিকার অর্থে এখন কোনো মানুষ নেই। শুধু চিৎপুর চিড়িয়াখানায় একটি
মানবাকৃতি বনমানুষ আছে।’ ঈশ^র স্তম্ভিত ও হতবাক হয়ে বোবা হয়ে গেলেন। এখন
মানুষ কোথাও নেই।
এই সূত্রধরে আমার কথা।
আমরা যাঁকে ঈশ^র বলি, তিনিই
সৃষ্টিকর্তা। সবকিছুর মালিক তিনি। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সবকিছু চলে। বলা হয়-
তার ইচ্ছে ছাড়া গাছের পাতাটিও নড়তে পারে না। তাই তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থেকে সবকিছুর স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রণকর্তা। এ বিষয়ে দ্বিমত
পোষণ করার কোনো সুযোগ বা সাহস কারও নেই। নজরুল বলছেন- তিনি বিরাট শিশু-
‘ভাঙ্গিছেন, গড়িছেন’ এই বিশ্বলয়ে। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেতেই সব হলেও তার একটি
বিধান আছে। বিশেষত সৃষ্টি-প্রবাহে তিনজনকে দায়িত্ব দিয়ে কাজটি সুচারুরূপে
চালাচ্ছেন। এই তিনজনের নাম হলো-ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। তাঁদের কাজ ভাগ করে
দেয়া আছে।
ব্রহ্মা: তাঁর কাজ হলো সৃষ্টি করা অর্থাৎ জগতের সব সৃষ্টির
দায়িত্ব তাঁর তবে শর্ত হলো সৃষ্টির পর সৃষ্ট জীবগুলোকে বিশেষত মানুষগুলোকে
পৃথিবীতে আসার আগে ঈশ্বরের সম্মুখে হাজির করাতে হবে। ঈশ^র তাদের মাথায় হাত
বুলিয়ে বা ফুঁ দিয়ে অনুমোদন দিবেন। সরাসরি পৃথিবীতে আসার সুযোগ নেই, কোনো
ব্যত্যয় ঘটলে তা অনুমোদনযোগ্য নয়।
বিষ্ণু: তার কাজ হলো সৃষ্ট জীব যারা
পৃথিবীতে আসবে, তাদের প্রতিপালন করা অর্থাৎ যতদিন পৃথিবীতে থাকবে, ততদিন
তাদের ভরণপোষণ ও দেখবাল করা।
মহেশ^র: তাঁর কাজ হলো সৃষ্টজীবরা পৃথিবীতে
নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত থাকার পর তাদেরকে সরিয়ে অর্থাৎ ধ্বংস বা মেরে
ফেলা। ঈশ্বর কর্তৃক অননুমোদিত কেউ পৃথিবীতে থাকতে পারবে না। তাদেরকে মহেশ্বর
যে কোনো উছিলায় ধ্বংস করতে বাধ্য- এ নির্দেশ ঈশ্বর তাঁকে দিয়েছেন।
আমরা বলি- এটা একটি খেলা। এ খেলার নাম ‘সৃষ্টি-স্থিতি-লয়’। এভাবেই চলছে।
ঈশ^র
এ তিনজনের উপর দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত। কিন্তু হঠাৎ তিনি শুনতে পেলেন
পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা কমে গেছে, এমন কি কেউ নাকি বলছে- ‘পৃথিবী এখন
মানুষ শূন্য’। তা কী করে হয়। বহুকাল আগে তেত্রিশকোটি মানুষ ছিল, (যারা
প্রকৃত খবর জানে না, তারা বলে তেত্রিশকোটি মানুষ নয় দেবতা) এখন আটশকোটিতে
দাঁড়িয়েছে। অথচ ঈশ্বরের কাছে খবর গেছে- পৃথিবী প্রায় ‘মানুষ-শূন্য’। তিনি
চিন্তিত হলেন। অন্তর্যামী সৃষ্টিকর্তা, তিনি নিজের অন্তররাজ্যে বিচরণ করতে
শুরু করলেন। দেখলেন- ব্রহ্মা তো মানুষ তৈরি করে অনুমোদন নিতেন, অনেকদিন
যাবত তো ব্রহ্মা কোনো অনুমোদন নিচ্ছেনা।
তাহলে কি মানুষ তৈরি বন্ধ ? অথচ আটশ কোটি মানুষের কথা শুনেছেন সৃষ্টিকর্তা। তা কীভাবে সম্ভব ?
সৃষ্টিকর্তা
ব্রহ্মাকে ডেকে পাঠালেন। কুশল-সমাচার ও কাজকর্ম কিরূপ চলছে, সব ঠিকঠাক মত
হচ্ছে কীনা জানতে চাইলেন ঈশ্বর। ব্রহ্মা একে একে তাঁর কর্মধারার বিবরণ
দিচ্ছেন এবং যথারীতি মানুষ তৈরির হিসাবটা জানালেন। বললেন- প্রথম তেত্রিশ
কোটি দিয়ে শুরু করেছিলেন, এখন আটশ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা জানতে
চাইলেন- ‘এই যে আটশ কোটি মানুষ এখন পৃথিবীতে আছে, তাদের অনুমোদন কি নেয়া
আছে ?’ ব্রহ্মা মাথা নত করে বললেন, ‘আপনি বিরাট বিশ্বের দায়িত্বে আছেন,
কর্মব্যস্ত সৃষ্টিকর্তা। শুধুমাত্র মানুষ সৃষ্টির পর একটু মাথায় হাত বুলানো
বা ফুঁ-এর জন্য আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনি। আমি আপনার পক্ষে এ দায়িত্বটা
অনেকদিন পালন করছি। আপনাকে জানানোর প্রয়োজন ছিল, একটু অবহেলা হয়ে গেছে।’
সৃষ্টিকর্তা
অবাক হয়ে ব্রহ্মার দিকে তাকিয়ে থাকলেন অনেকক্ষণ। ভাবলেন- ‘আমার উপর
খবরদারি, আমার আদেশ অমান্য, এতটা সাহস কোথায় থেকে পেলো ব্রহ্মা ?’
সৃষ্টিকর্তা বললেন- ‘ব্রহ্মা, বড় ভুল করে ফেলেছ। তুমি যাদের পৃথিবীতে
পাঠিয়েছ, তারা তো মানুষ নয়, মানুষ হতে পারবে না। আমার হাত বুলানো বা ফুঁ আর
তোমরা তা অনুকরণ এক নয় ? মহা সর্বনাশ করে ফেলেছ। আমার সৃষ্টিটাই বরবাদ করে
দিয়েছ ব্রহ্মা। এ তো এখন সংশোধন যোগ্য পর্যায় নয়।’ সৃষ্টিকর্তা বিচলিত হয়ে
পড়লেন, ব্রহ্মা ওই অনিচ্ছাকৃত ও অধিবেচক সূচক ভুলের জন্য ক্ষমাও চাইতে
পারছেন না। শুধু জোড় হাত করে কাঁদছেন।
অনেকক্ষণ পর সৃষ্টিকর্তা বললেন-
‘ব্রহ্মা, তুমি যাদের পাঠিয়েছ, তাদেরকে চিহ্নিত করতে পারবে ?’ ব্রহ্মা একটু
ভেবে বললেন- ‘পারব। তবে একটি সমস্যা হয়ে গেছে। পৃথিবীতে গিয়ে তারা
বিয়েসাদি করে সন্তান উৎপাদন করে অগণিত সংখ্যায় সয়লাব হয়ে গেছে। ঐগুলোকে
চিহ্নিত করা সম্ভব হবে না।’
সৃষ্টিকর্তা বললেন- ‘একটা কাজ কর, যাদের
তুমি চিনতে পারবে, তাদের একই রং এর পোশাক পরিয়ে দাও, তাদের বিয়ে-সাদি করার
পথ বন্ধ করে দাও। মুখে বড় বড় কথা শিখিয়ে দাও এবং তাদেরকে দিয়ে প্রচার করতে
থাক- জীবন অনিত্য, পরকালই সব। পরকালে সুখ-শান্তিতে ভরা। ইহকালে অবিবাহিত
থাকলে পরকালে সুখসাগরে ভোগ আর ভোগ অনন্তকাল চলবে। পরকালের নাম দিয়ে দাও-
বৈকুন্ঠধাম, বিষ্ণুধাম, স্বর্গ ইত্যাদি। তোমার সৃষ্টি আপাতত সীমিত কর।
আগে
যেখানে এক দম্পতি ১০/১২টা বা বহুবিবাহ করে ৫০/৬০জন সন্তান উৎপাদন করতো, তা
নামিয়ে ১/২ জনের মধ্যে নিয়ে আসো, বাধ্যতামূলক করতে চেষ্টা করো। তোমার
জনসংখ্যা অবশ্যই কমাতে হবে, আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ব্রহ্মা
হিসাব করে দেখেছেন, সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদপুষ্ট মানুষ বর্তমানে ১০% হতে
পারে, বাকী সব তাঁর। ভয়াবহ অবস্থা। সৃষ্টিকর্তা কঠোরভাবে হুশিয়ারি জারি করে
বলেছেন, যেকোনোভাবে বিভিন্ন চিহ্ন দিয়ে যেন ব্রহ্মার আশীর্বাদপুষ্টদের
সনাক্তের ব্যবস্থা করা হয়। ব্রহ্মা দুশ্চিন্তা নিয়ে নিজের অন্যায় কৃতকর্মের
জন্য অনুশোচনা করতে করতে সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে বিদায় নিলেন।
এবার
সৃষ্টিকর্তা বিষ্ণুকে ডেকে পাঠালেন এবং তাঁর বিভাগের হাল অবস্থা জানতে
চাইলেন। বিষ্ণুও সুযোগ খুঁজছিলেন, একবার ঈশ^র-সাক্ষাৎপ্রার্থী হতে। ঈশ^রকে
বিষ্ণু তাঁর বিভাগের হাল অবস্থা জানতে গিয়ে বললেন যে, এ বিভাগ চালাতে
হিমসিম খাচ্ছেন। কারণ, পৃথিবীতে অসম্ভবহারে মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সে
অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এজন্য খাদ্যতালিকা স্থান ভেদে নানা
উপকরণ তৈরি করতে হচ্ছে। অখাদ্য-কুখাদ্য জিনিসও খাওয়ার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত
করতে হচ্ছে।
সৃষ্টিকর্তা বলছেন- ‘এই মানুষগুলো তো তাহলে কষ্টে পড়েছে,
তোমারও বেহাল অবস্থা। দেখো কী ব্যবস্থা নেয়া যায়। তিনি এক বিভাগের কথা অন্য
বিভাগের কাছে জানান দেন না। বিষ্ণু বলছেন, ‘আপনি সৃষ্টিকর্তা, আপনার
আদেশ-নির্দেশে ব্রহ্মা মানুষ সৃষ্টি করে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে তাঁরও তো কোনো
কিছু করার নেই। মানুষের সংখ্যা না কমালে ভবিষ্যতে ভয়াবহ সংকট দেখা দিবে।’
অনেকটা বিনয়ের সাথে ঈশ্বরকে জানালেন। ব্রহ্মা যে ভুল করে এ সংকট সৃষ্টি
করেছে, তা সৃষ্টিকর্তা বিষ্ণুকে জানতে দেননি। তাহলে তাঁদের মধ্যে ভুল
বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে। বিষ্ণু প্রণাম জানিয়ে সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে
বিদায় নিলেন।
রাত্রে সৃষ্টিকর্তা মহেশ্বরকে ডেকে পাঠালেন। মহেশ্বর একটু
অগোছালো। চলাফেরায়-খাওয়া দাওয়ায়- পোশাক-আশাকে তিনি অনেকটা অনিয়ন্ত্রিত,
ব্যতিক্রম। সৃষ্টিকর্তা তা সবই জানেন। তারপরও তাঁকে পছন্দ ও স্নেহ করেন।
মাঝে মাঝে ঠিকঠাক কাজগুলো গুছিয়ে করার পরামর্শ দেন। সৃষ্টিকর্তা তাঁর
বিভাগের হাল অবস্থা কী তা জানতে চাইলেন। মহেশ্বর বলছেন, ‘এখন মানুষের সংখ্যা
অত্যাধিক বেড়ে গেছে, পৃথিবী যেন এ ভার বহন করতে পারছে না। নানা উছিলায়-
যেমন গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে, প্লেন জ¦ালিয়ে,কালকারখানায় আগুন লাগিয়ে নিজেদের
মধ্যে মারামারির আড়ালে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে নানা প্রকার কঠিন রোগ-পীড়া দিয়ে
মানুষ ধ্বংসের ব্যবস্থা করলেও দিন দিন সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। আগেকার মানুষের
মতো তারা নিয়ন্ত্রিত নয়, সবকিছুতেই প্রতিপক্ষের ভূমিকা নিতে চায়। কখনও
রাজনৈতিক শক্তির প্রদর্শন, ধর্মীয় আবেগের আড়ালে আধিপত্য বিস্তার, অসামাজিক
প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে সামাজিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দুর্বল শ্রেণির উপর
অত্যাচার, অনৈতিক কাজ করে অর্থবিত্ত কুক্ষিগত করে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ
করে তুলেছে। এখন মহেশ^রও যেন কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসহায়বোধ করছেন, তা
সৃষ্টিকর্তাকে জানালেন। এবং বলেই ফেললেন যে, এত মানুষ সৃষ্টি করা হয়ত ঠিক
হয়নি। সৃষ্টিকর্তা তাতে রাগ করলেন না। এরূপ পরিস্থিতি যে ব্রহ্মার ভুলের
জন্য তাও বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় কী করা যায়, মহেশ^র কি এ বিষয়ে কিছু
ভেবেছেন বা পরামর্শ দিতে পারেন, সৃষ্টিকর্তা জানতে চাইলেন। মহেশ^র এ কথা
শুনে প্রথমে ঘাবড়িয়ে গেলেন। ভাবলেন- ‘তিনি কি কোনো বেয়াদবি করে ফেলেছেন ?
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন। সংকট থেকে উত্তরণের জন্য মান-অভিমান বা
অহমিকা যাপন করা যায় না। সৃষ্টিকর্তা অভয় দিয়ে বললেন, ‘তুমি খোলামেলা তোমার
অভিমত ব্যক্ত করতে পারো। আমি শুনে তখন বিবেচনা বা সিদ্ধান্ত নিব।’
মহেশ্বর
প্রণাম জানিয়ে এবার আর সৃষ্টিকর্তা বা প্রভু বলে সম্বোধন না করে কাঁপা
গলায় বলতে সৃষ্টিকর্তার কাছাকাছি চলে গেলেন এবং নিম্নকন্ঠে বললেন, ‘হে
বিধাতা এ মুহূর্তে পৃথিবীতে যদি তৃতীয় বিশ^যুদ্ধ সংঘটিত না করা যায়, তাহলে
কোনো কোনো দেশে যে পারমানবিক অস্ত্র ও বোমা রয়েছে, তা দিয়ে আমাদেরকে আক্রমণ
করতে পারে। আমার মনে হয় এই শক্তিধররা আপনার আশীর্বাদপুষ্ট নয়। তারা আপনার
কথা মুখে উচ্চারণ করলেও প্রকৃত পক্ষে প্রতিপক্ষ শক্তি হিসেবে নিজেদের
অবস্থান সৃষ্টি করে ফেলছে। আমার ভুল হতে পারে, তারপরও মাঠপর্যায় বিচরণ করি
বলেই তাদের মনোভাব কিছুটা আঁচ করতে পারছি। আমার পরামর্শের ভুল-ত্রুটির জন্য
ক্ষমা ভিক্ষা চাইছি, হে বিধাতা।
ঈশ^র-সৃষ্টিকর্তা-বিধাতা তিনে মিলে
যিনি সর্বশক্তিমান, যাঁকে অতিক্রম করা কল্পনার বাইরে কিন্তু
পরিবেশ-পরিস্থিতি অনেক সময় মন বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয়। কিছুক্ষণ নীরবতার
পর বিধাতা মহেশ্বরের মুখের দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন। কী ভাবলেন
তিনিই জানেন। পৃথিবীর প্রকৃত মানুষরা আজ অসহায়। বিধাতার ইচ্ছাই শক্তির
আধার।
‘বিধির বাঁধন কাটবে তুমি এমন শক্তিমান-
তুমি কি এমনি শক্তিমান।’