দেশের মানুষের দৃষ্টি এখন নির্বাচনের দিকে। কিছুদিন আগে এ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু এখন তা আর নেই। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গণমাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। তাদের এই প্রস্তুতি চলছে। সাধারণ মানুষও নির্বাচনি উত্তাপ অনুভব করতে শুরু করেছেন। রাজনীতির হালফিল অবস্থা মূলত এ রকমই। ইতোমধ্যে সুনির্দিষ্ট করে না হলেও নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে দেশবাসী জেনে গেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার লন্ডন বৈঠকের পর নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তাও দূর হয়েছে। ফলে নির্বাচনি প্রস্তুতিতেও গতি এসেছে। দেশের সব রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বড় দলগুলো নির্বাচনের উত্তাপটা বেশ বুঝতে পারছে। সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষিত হলে এই উত্তাপ নিঃসন্দেহে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। আপাতত চলছে প্রাথমিক প্রস্তুতি।
নির্বাচনে জয়ী হওয়া সব দলেরই লক্ষ্য থাকে। তবে শক্তিমত্তার দিক থেকে সবাই সমান নয়। জয়ী হওয়ার নানা উপায় এবং পদ্ধতি নিয়ে তাই তাদের ভাবতে হয়। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে না আসতে পারে, তাহলে নির্বাচনের মাঠে এককভাবে শীর্ষে থাকবে বিএনপি। অন্য দলগুলোও প্রাণপণ লড়বে। জয়ী হওয়ার জন্য তাই তারা জোট বাঁধার কথা ভাবছে। খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে দুটি বড় নির্বাচনি জোট হতে চলেছে। এর একটি গঠিত হতে পারে উদারপন্থি গণতান্ত্রিক দলগুলোকে নিয়ে; আরেকটি ইসলামপন্থিদের নিয়ে।
খবরের কাগজের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, আওয়ামী লীগ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না- এমনটা ধরে নিয়ে ভোটের মাঠে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠাই ছোট দলগুলোর লক্ষ্য। তাদের তৎপরতা আপাতত সীমাবদ্ধ আছে পর্দার আড়ালের প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার মধ্যে। নির্বাচন-পূর্ব এবং নির্বাচনকালীন নির্বাচনি কৌশল কী হবে, সেসব নিয়েই তারা কথাবার্তা বলছেন। তারা চাইছেন ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে। এই উদ্যোগকে তারা এখনই জোট বলতে চাইছেন না। জোট গঠনের ঘোষণাও দিচ্ছেন না। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে বা পরে এই জোট গঠনের ঘোষণা আসতে পারে।
সংস্কার নিয়েও তাদের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে। এই সংস্কারও হয়ে উঠছে নির্বাচনি কৌশল। বিএনপির তুলনায় ছোট দলগুলো গুরুত্ব দিচ্ছে পিআর (ভোটের আনুপাতিক হার অনুসারে আসন প্রাপ্তি) পদ্ধতির ওপর। অন্যদিকে বিএনপি চাইছে পূর্বের, অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট প্রাপ্তির ভিত্তিতে জয়ী হওয়ার নির্বাচন পদ্ধতি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা জরুরি। এ জন্য জোটের গুরুত্ব রয়েছে। এটা হলে আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে। প্রাণবন্ত থাকবে সংসদ। সরকারি দল নিজেদের খেয়ালখুশিমতো একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। আমরাও মনে করি, জবাবদিহিমূলক সংসদই গণতন্ত্র সুরক্ষার চাবিকাঠি। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন তাই জরুরি। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক এবং বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য সরকারও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অন্তর্র্বতী সরকার দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের দিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাইছে। এ লক্ষ্যে স্বচ্ছ, কর্মঠ, পেশাদার কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগ দিতে সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের। এ-সংক্রান্ত গেজেট ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
এভাবেই ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’ বা ‘দিনের ভোট রাতে’ হয়েছে- এমন অভিযোগ বা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চায় সরকার। সার্বিকভাবে নতুন সরকারের বৈধতা নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সরকারের লক্ষ্য সেটাই। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আশা করছি, এবার কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আরও যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সরকার সেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এবারের নির্বাচন যাতে সব দিক থেকে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ নির্বাচন হয়, দেশবাসী সেটাই প্রত্যাশা করে।