বঙ্গোপসাগরে
সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ফেনীতে চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড
করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৪৪০
মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা চলতি বর্ষা মৌসুমে এক দিনে সর্বোচ্চ
বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। টানা বর্ষণে ফেনী শহরের বেশির ভাগ সড়ক হাঁটুপানিতে
তলিয়ে গেছে। অতিবৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে জেলার বিভিন্ন
নদীর পানি। এর মধ্যে ভেঙেছে দুটি নদীর বেড়িবাঁধ। লোকালয়ে নদীর পানি ঢুকতে
থাকায় জেলার নিচু এলাকার বাসিন্দারা গত বছরের মতো আবার বড় ধরনের বন্যার
আশঙ্কা করছেন।
জেলা আবহাওয়া অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত
২৪ ঘণ্টায় ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু
সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় ২০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত
রেকর্ড করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, টানা বর্ষণ ও
উজান থেকে আসা ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীতে পানি আশঙ্কাজনক
হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ সন্ধ্যা ছয়টায় মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৩
সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ নদীতে পানি বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৫৫
সেন্টিমিটার। নদীর পানি বাড়ায় মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর বন্যা
নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিকেলে
সীমান্তবর্তী পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম গদানগর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর
বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এতে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করেছে নদীর পানি। এর আগে
সকালে ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর রোড এলাকায় মুহুরী নদীর পাড়সংলগ্ন সড়ক ভেঙে
দুটি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভারী বৃষ্টিতে ডুবে গেলে ফেনী শহরের বিভিন্ন এলাকা। শহরের একাডেমি এলাকার হোটেল, রেস্তোরাঁ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে পানি
ডুবেছে শহর:
টানা
ভারী বর্ষণে ফেনী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলি হাঁটু পরিমাণ পানিতে
তলিয়ে গেছে। ডুবেছে ফেনী ফায়ার সার্ভিস, শহর পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন সরকারি
স্থাপনা। সকাল থেকে শহরের প্রতিটি সড়কে ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিভিন্ন সড়কে হাঁটু পরিমাণ পানি থাকায় রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা,
সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাধ্য
হয়ে যাত্রীরা পণ্যবাহী পিকআপ ও পাওয়ার ট্রলির মাধ্যমে চলাচল করছেন। শহরের
প্রধান সড়ক শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক সকাল থেকে কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর
পরিমাণ পানিতে ডুবে ছিল। একাডেমি এলাকার ভাষাশহীদ আবদুস সালাম স্টেডিয়াম
সড়কও কোমরপানিতে ডুবে ছিল।
ফেনী পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার
বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) গোলাম মোহাম্মদ বাতেন বলেন, অতিভারী বর্ষণের
কারণে ড্রেন-কালভার্ট উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানিনিষ্কাশনের জন্য
পৌরসভার কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বৃষ্টি বন্ধ হলে পানি নেমে
যাবে বলে আশা করছেন।
আবার বন্যার আশঙ্কা:
ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও
সিলোনিয়া নদীর আশপাশের এলাকা ও নিম্নাঞ্চলে নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
যেকোনো সময় মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের একাধিক স্থান ভেঙে প্লাবিত হতে পারে বলে
আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী
মো. আবুল কাশেম জানান, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী
মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
ফেনী
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন,
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিগত ৭ ঘণ্টায় নদীতে ৫০০ সেন্টিমিটারের ওপর
পানি বেড়েছে। বাঁধের ভাঙন রোধে তৎপর রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নিয়মিত নদীর পানি ও বাঁধগুলো তদারকি করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি:
ফেনী
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উচ্চমান সহকারী) মো. মজিবুর রহমান
বলেন, চলতি ২০২৫ সালের বর্ষা মৌসুমে এটি (৪০৬ মিলিমিটার) জেলা সর্বোচ্চ
বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড। আজসহ আগামী দুই দিন ফেনীতে মাঝারি থেকে অতিভারী
বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন,
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি ফুলগাজীর নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করছেন। মুহুরী,
কহুয়া, সিলোনিয়া নদীতে পানি বাড়ায় বিষয়টি নিয়মিত জেলা প্রশাসন থেকে তদারক
করা হচ্ছে। সন্ধ্যা সাতটায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বন্যা ও দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। বন্যার সব প্রস্তুতি জেলা প্রশাসন
ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে আগস্ট মাসের স্মরণকালের
ভয়াবহ বন্যায় ফেনীর সব উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এতে ২৯ জনের
প্রাণহানি হয়েছিল। পানিবন্দী ছিলেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়
সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যানবাহন, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রায়
সব খাত। সেই বন্যায় প্রায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ২০ লাখ ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছিল
বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছিল।