বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২
একটি চিঠি
শান্তিরঞ্জন ভৌমিক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫, ২:০১ এএম আপডেট: ০৮.০৭.২০২৫ ২:৫০ এএম |

একটি চিঠি


শ্রদ্ধেয় কানাইদা,
অনেকদিন পর তোমার চিঠি পেয়ে প্রথমে অবাক হয়েছি, পরে আনন্দে মন ভরে গেলো। কীভাবে যেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চিঠিপত্র এখন কেউ লিখে না। মোবাইলের যুগ। সেজন্য  লিখিত ঠিকানা আর কেউ সংরক্ষণও করে না। আগে ব্যক্তি যোগাযোগ ছিল এক ধরনের সামাজিকতা ও দায়িত্ববোধের অনুষঙ্গ। বিশেষত নিমন্ত্রণাদির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা দেখা সাক্ষাৎ এবং বিনয়ের বিষয়টি ছিল ভব্যতার আকর। এখন এসএমএস-এর মাধ্যমে নিমন্ত্রণ বা আমন্ত্রণ পত্রাদি পাঠানো হয়। মোবাইলে হাই-হ্যালো করা হয়। এটাই বর্তমানের রীতি। আমরা ব্যস্তজীবনে এটা মেনে নিয়েছি, অভিমান অচল হয়ে গেছে। এতে ব্যক্তিগতভাবে ঘনিষ্ঠতা বাড়লো কি কমলো তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই।
কানাইদা, তোমার ঠিকানা কোথায় আছে খুঁজে পাবো না। মোবাইল নাম্বারও জানা নেই। তাই অনেকদিন যোগাযোগ নেই। মাঝে মাঝে মনে পড়ে, কিন্তু আগের মতো সুযোগ না থাকায় বলা চলে তোমাকে ভুলেই যাওয়ার মতো। কোথায় ঠিকানা পেলে, কীভাবে মনে পড়ল তা জানি না, তবে তোমার চিঠিটি আমাকে পুনর্জন্ম বা পূর্বজন্মের দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। কয়েকবার পড়েছি। কথাগুলো শুধুই কুশল-সমাচার এবং সামান্য স্মৃতিবিষয়ক। কিন্তু আমার কাছে এ মুহূর্তে মনে হলো- এটা মহাভারতের প্রতিরূপ। ছোট্ট চিঠিটি আমাকে একজীবনের ইতিহাসকে সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে।
কানাইদা, তোমার সাথে আমার শেষ দেখা ১৯৬২ সালে। ১৯৭১ সালে আমি ত্রিপুরায় শরণার্থী ছিলাম, তুমি কলিকাতা থাকো, কোথায় থাকো তা জানা ছিল না। তোমার কথা ২/১ বার মনে হলেও দুর্যোগে কাউকে হয়রানি করতে চাই নি। তুমি আমার চেয়ে বছরখানেক বড় তবে পড়াশোনায় সতীর্থ। কলেজে দ্বিতীয়বর্ষে পড়াকালীন তুমি ভারতে অর্থাৎ কলিকাতা চলে গেলে, আমাকেও বলেছিলে, আমি যাইনি।
তোমাকে বলেছিলাম- যেও না। তুমি বললে এ দেশে থাকা যাবে না। কেন ? একথা নিয়েই আজকের লেখা।
কানাইদা, তুমি বুদ্ধিমান। দূর দৃষ্টি সম্পন্ন যুবক তখন তুমি। বলেছিলে- পাকিস্তান একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রে বিশেষ সম্প্রদায় অর্থাৎ মুসলমান ভিন্ন অন্য সম্প্রদায়ের অধিবাসী নিরাপদে-নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারবে না। মুসলমান দিনে দিনে সংখ্যাধিক্যে গোটা দেশ ভরে যাবে, অন্য সম্প্রদায়ের লোক দেশত্যাগী হবে, অথবা বাধ্য হয়ে ধর্মান্তরিত হতে হবে। সম্প্রদায় কোনো জাতি নয়, জাতি হলো ফুলের বাগানের মতো। সম্প্রদায়িক দেশ এক ফসলী ক্ষেত।  শুধু উৎপাদন এবং ভোগ। আর সম্প্রদায়ের মেলবন্ধন হলো একটি নির্দিষ্ট ‘বিশ^াস’। এই বিশ^াসকে আখ্যায়িত করা হয় ধর্মীয় লেবাসে। আর ধর্ম হলো অন্ধকারে কালো বিড়ালের চোখ। দেখা যায়, ধরা যায় না। জাতি হলো বাগান। তার বৈচিত্র্য আছে, সৌন্দর্য আছে, আছে ঐক্য। বিশ^াস-অনুবিশ^াস-বিশ^াসে অযৌক্তিক প্রভাব ইত্যাদি মানুষকে মানবিক করে গড়ে তুলে না। মিথ্যাচার ও ভণ্ডামি হলো পুঁজি। তা যখন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখনই রাষ্ট্র হয়ে যায় ব্যর্থ রাষ্ট্র। বাংলাদেশের কথাই বলি। ব্রিটিশরা চলে যাবার সময় একটা ভেজাল সৃষ্টি করে গেলো। ভেজাল হলো- ভারতবর্ষে কিছুটা অংশ বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য স্বাধীনতা দিয়ে গেলো। তারা জানে বা জানত যে সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক স্বাধীন দেশ হয় না। আবার অমীমাংসিত কাশ্মির রেখে গেলো শাশুড়ি-বৌদের চিরস্থায়ী ঝগড়ার মতো। বিষয়টা এমন মা ছেলের অধিকার চায়, স্ত্রী চায় স্বামীর এবং স্বামী বেচারা দিশাহীন ধ্বংসের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। সুতরাং সমাধানের কোনো সুযোগ নেই। কারণ তথাকথিত বিশ^াস-দ্বন্দ্বই প্রধান বাধা। এই জ¦রে আক্রান্ত আমার স্বদেশ; বাংলাদেশ। জ¦রের উপসর্গ হলো মিথ্যাচার ও ভণ্ডামি। তাই বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র হতে চলেছে। এখানে শুধু রাজনৈতিক চর্চা নেই, জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড নেই, জাতিগত সংস্কৃতিচর্চা নেই, প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণের প্রতিষ্ঠান নেই, সামাজিক মেলবন্ধন নেই, মানবিক মূল্যবোধ নেই, জীবনযাপনের নিশ্চিয়তা বা নিরাপত্তা নেই, ভোগবাদী প্রতিষ্ঠানের উত্থান প্রবলভাবে বেড়ে গেছে। ফলে মানুষের মধ্যে যে সুকুমার বৃত্তিচর্চা তা কমে গেছে। আত্মকেন্দ্রিকতা ও আধিপত্যবাদ উদার মানসিকতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। অহংকার এখন বাংলাদেশের মানুষের অলংকার।
কানাইদা, মাতৃভূমি বা জন্মভূমি ত্যাগের কথা যেমন আগেও ভাবিনি, এখনও ভাবি না। তুমি হৃদয়ের স্বভাব ঔধার্যকে ত্যাগ করে কৃত্রিম মাতৃভূমির সন্ধানে দেশাত্যাগী হয়েছিলে। কতটা তৃপ্তি যাপন করছ জানি না। তবে এতটুকু বুঝি- প্রকৃত মাতৃভূমির টান বা আকর্ষণ অথবা ভূমির স্পর্শ-সুখ স্বর্গও দিতে পারবে না। হৃদয় ও প্রাণহীন জীবনযাপন, ভোগের প্রাবল্যে প্রকৃত সুখ বা আনন্দ দিতে পারে না। মা বলতেন- ‘শ^শুরের ভিটায় না খেয়েও পড়ে থাকব, এ মাটিতে মরতে পারলেই সুখ। আমি কোথাও যাব না।’ 
আমরা যখন কর্মস্থলে চলে যাই, মা একা বাড়িতে থাকতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম, মা যখন আমার বা ভাইদের কাছে থাকতেন, তাঁর মানসিক কষ্ট আমাদেরকে বিব্রত করে তুলত। আমরা সে মায়ের সন্তান, এজন্যই দেশত্যাগী হলাম না। অনেক বছর পর যখন চিঠিটা লিখেছ, আমি বার বার পড়েছি তোমার নীরব কান্নার সুর শুনতে পেয়েছি। 
কানাইদা, দৃশ্যত আমরা ভালো নেই। অসুবিধা বা অসংগতির ফিরিস্তি অনেক, পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে চিন্তিত। এখন পৃথিবীটাই যেন মাতৃভূমি। দু’ছেলে চলে গেছে আমেরিকা-কানাডা। আর ফিরে আসবে না। তার পরের প্রজন্ম আর পরম্পরা ধারা হিসেবে পরিচিতি থাকবে না। তাহলে ? তোমার দেশত্যাগ, আর আমার পরবর্তী প্রজন্মের দেশত্যাগ কিন্তু একসূত্রে বাঁধা নয়। আমরা একটা দেশের নাগরিক, পরবর্তী প্রজন্ম হলো বিশ^নাগরিক। আমাদের অনুভূতি আর পরবর্তী প্রজন্মের অনুভূতির ভাষা এক নয়, সুরও এক নয়। এমনকি নিভৃত গভীরে যাপিত শিহরণও এক নয়। তাই একসময় হিসাব মিলাতাম, এখন খাতাটি ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করে দিয়েছি।
কানাইদা, এখন আমি অন্য প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই। দেশত্যাগী হয়েছিলে ধর্ম আর সংস্কার বাঁচাতে, সম্মান আর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, মানসিক স্বস্তি ও নিরাপত্তার জন্য। মাথা উঁচু করে চলার অভিপ্রায়ে। প্রশ্ন করব না- জানতে ইচ্ছে হয়- তা কি পেয়েছ?
বই পুস্তকে পড়েছি- জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়ে গরিয়সী অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ। 
ডিএল রায় লিখেছেন-
‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।’
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-
‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।
সার্থ জনম, মা গো, তোমায় ভালোবেসে,
জানি নে তোর ধনরতন আছে কি না রানীর মতন,
শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে।।’
আমার দেশের নাম বাংলাদেশ। আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমার পরিচয় বা সংস্কৃতি হলো বঙ্গসংস্কৃতি। আমার জন্ম এ বাংলায়। তাই
‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল-
পুণ্য হউক, পূণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান।।
বাংলার ঘর, বাংলার হাট ও বাংলার বন, বাংলার মাঠ-
পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক হে ভগবান।।
বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা-
সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান।।
বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই-বোন
এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান।।’
ব্রিটিশরা শাসন-শোষণ করে চলে গেলো, পশ্চিম পাকিস্তানী ২৩ বছর নির্যাতন, শোষণ লুটপাট করে চলে যেতে বাধ্য হলো। ১৯৭১-এর ডিসেম্বর ১৬ তারিখ স্বাধীনতা পেলাম। কিন্তু পাকিস্তানী প্রেতাত্মারা আজও হায়েনা হয়ে গুপ্তি মেরে বসে আছে। তাই মাঝে মাঝে মনে হয় দিনান্তে পাপ ক্ষয় এখনও হয়নি। বলতে ইচ্ছে করছে-
‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ¦ালো।
একলা রাতের অন্ধকারে আমি চাই পথের আলো।।’
কানাইদা তুমি সম্মান, প্রাণ এবং পরম্পরা খুবই ভালোবাস। এজন্যই দেশত্যাগী হয়েছিলে কিন্তু হলফ করে বলতে পারি- মনটাকে, হৃদয়টাকে নিয়ে যেতে পারোনি। তার প্রমাণ এতদিন পর তোমার চিঠি এ বার্তা আমার কাছে এসে পৌঁছেছে। তুমি জানতে চেয়েছ- রামদয়াল ঘোষের পুকুরটা আছে কিনা, পশ্চিমের মাঠের মাঝে বড় গাবগাছটি কি আছে ? গোলমতি খালের উপর কাঠের পুলটির কথা, যেখানে ছোটবেলা সেখানে বসে গল্প করতাম, বর্ষাকালে ভিনদেশি নৌকার বহর দেখতাম, মনা পাগলা গান ধরত দিনদরিয়ার মাঝিকে উদ্দেশ্য করে এগুলো তো ভুলতে পারোনি। মনে হলো তোমার প্রাণের গভীরে মন গেয়ে উঠেছে-
‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা।
তোমাতে বিশ^ময়ীর, তোমাকে বিশ^মায়ের আঁচল পাতা।।
তুমি মিশেছ মোর দেহের সনে,
তুমি মিলেছ মোর প্রাণে মনে,
তোমার এই শ্যামলবড়ণ কোমল মূর্তি মর্মে গাঁথা।।’
আসলে এতদিন পর নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ, দেহটা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছ, আর কিছুই নিতে পারোনি।
আমি বা আমরা রয়ে গেলাম। পাকিস্তান আমলে ক্ষণে ক্ষণে সংকটে বিপদে পড়েছি, মোকাবিলাও করেছি। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর একটু সুবাতাস বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন আমাদেরকে শত্রু বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা দিল। ১৯৬৪ সালে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেশ ছাড়ার পথ সুগম করে দিল, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ বুঝিয়ে দিল- পূর্ব পাকিস্তান মূলত পাকিস্তান নয়। তারপরের ইতিহাস বাংলাদেশের অভ্যুদয় তারপরও কি আমরা নিরাপদে থাকতে পেরেছি ? না, হারিয়ে বা গেছি দলে দলে। রোহিঙ্গাদের সংখ্যা- হিসাব আছে, বাঙালি সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগীর হিসাব নেই। এজন্য কিন্তু বাংলাদেশের লোকসংখ্যা কমেনি, বেড়েছে বহুগুণ। মিলিত সম্প্রদায়গত সাড়ে সাতকোটি এখন প্রায় এককভাবে বা একক সম্প্রদায়গত আঠার কোটি।
সম্প্রদায় থেকে সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি। আগেই বলেছি- সম্প্রদায় কোনো জাতি নয়। পৃথিবীর সকল প্রান্তে যে কোন সম্প্রদায়ের লোক বাস করতে পারে। আমরা মেয়ে- মেয়ের জামাই কানাডা বাসী। তারা সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে। ঐ দেশের রীতিনীতি সবকিছুই পালন করতে হয়। নির্বাচনে ভোট প্রদান করে। পরপর তিনবার ভোটাধিকার প্রয়োগ না করলে নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যায়। দেশত্যাগের হুকুম জারি হয়। অর্থাৎ দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রতি অনীহা বা অবহেলা ঘোরতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ আমার দেশে ভোট প্রদান না করলেও ভোটার ও নাগরিক, আবার আমি ভোট না দিলেও অন্যে কারচুপি করে ভোট প্রদান করে দেয়। বিচিত্র কর্মকাণ্ডে আমার স্বদেশ। ‘মমতা’ শব্দটি কতটা জোরালো একমাত্র আমার দেশেই অধিকমাত্রায় দেখা যায়। সভ্যতা বিকাশে পৃথিবী চলেছে প্রগতিধারায় আমরা তথাকথিত ধর্মীয় পরিচয়ে সম্প্রদায় সৃষ্টি করে চলেছি মরুর পথে। মরুর দেশে মরুভূমি নেই, আধুনিকতায় নান্দনিক, আর আমরা তাদের পশ্চাৎপদ ঐতিহ্যকে ধারণ করছি ইহকাল-পরকালের মেলবন্ধনে। এখানেই দ্বন্দ্ব।
কানাইদা, এই অভিযাত্রা যে শুধু তোমার ছেড়ে যাওয়া দেশেই বিদ্যমান, তা ভেবো না, কারণ তুমি যেখানে বাস করছ, তার প্রকরণগত পার্থক্য থাকলেও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একই। তুমি দেশত্যাগী হয়ে কতটা লাভবান বা স্বস্তি পেয়েছ বা পাচ্ছ, তা জানি না।  আমি মাতৃভূমিকে আক্রিয়ে পড়ে আছি, ভালো আছি, মানসিক স্বস্তিতে আছি। আমি জেনে গেছি-
‘আমার যে সব দিতে হবে সে তো আমি জানি-
আমার যত বিত্ত, প্রভু, আমার যত বাণী।।
আমার চোখের চেয়ে দেখা, আমার কানের শোনা,
আমার হাতের নিপুণ সেবা, আমার আনাগোনা-
সব দিতে হবে।।’
কানাইদা, একবার এসে দেখে যাও। আমাদেরকে দেখে হয়ত ভালো না লাগতে পারে, তোমার ফেলে যাওয়া শৈশব-কৈশোর কালের স্মৃতিগুলো একবার ছুঁয়ে যাও। বাকীটা না-ই বা বললাম। আবেগ তো প্রতিটি মানুষের একধরনের ঠিকানা। এখানে চিঠি পৌঁছে না, মন পৌঁছে।
একথা কেন লিখলাম, তা জানি না। তোমার চিঠিই আমাকে ক্ষণিকের জন্য উতালা করেছে। নদীর তীরের বাড়ি, হিন্দুলোকের দাড়ি, মুসলমানের নারী- এগুলো নাকি সবসময়ই অনিশ্চয়তার আতংকে উদ্বেল। কিন্তু উদ্বাস্তু জীবনের ঠিকানা কি তোমার জানা আছে ? আমার অনুভবে এক ধরনের যন্ত্রণাকাতর ক্ষণিকের বাসস্থান বলেই মনে হয়।
জীবন তো একটাই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাকে নিয়ে এতটা উতলা হওয়ার কোনো মানে হয় ? যখন যা, তখন তা; যখন যেমন, তখন তেমন; যেখানে যেমন, সেখানে তেমন।  অন্ধকার দূরীভূত হয়ে আলো প্রকাশিত হয়, আমি জেগে উঠলাম। ‘ভোর হলো দোর খুলো।’ দরজা খুলে গেলো। ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল, কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।’ আমি তখন- ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি। আদেশ করেন যাহা মোর গুরু জনে’ তা মেনে চলি। শিশুকাল-বাল্যকাল-শৈশব-কৈশোর-যৌবন-প্রৌঢ় ও বার্ধক্য, তারপর...
কানাইদা, তত্ত্বকথা নয়। জীবন মানেই কর্ম এবং কর্মভোগ। মহাজনরা বলেন- ‘কোথায় যাবে গোপাল, সঙ্গে যাবে কপাল; এটাই হয়ত ভবিতব্য।  তাই আগেও গভীরভাবে এই নিয়ে ভাবিনি। এখনও ভাবিনা। সময় থাকতে সাধন না হলে স্থান বদলে কী মহিমা। আর তো আসা হবে না। তুমি, তোমরা ভালো থেকো। একবার, অন্তত একবার এসে পবিত্র মাতৃভূমিটাকে প্রণাম করে যাও-এটাই অনুরোধ। অনেক কথা ছিল, বলতে পারিনি। যতটুকু বলেছি- এগুলো শুধু কথার কথা। তথাকথিত বিশ^াস-নির্ভর ধর্মই আমাদেরকে স্বস্তিতে বাঁচতে দিলো না, একত্রে থাকতে দিলো না। দোষ কাউকে দেবো না, ভাগ্যকেও নয়-এতটা দুর্বল আমি নই। শুধু প্রার্থনা- ‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু।’
জানি না, এ চিঠি তোমার হাতে পৌছাবে কিনা বা শেষ চিঠি লেখা কিনা। যদি আঘাত দিয়ে থাকি, ক্ষমা করো। শেষ কথা- আমি, আমরা ভালো আছি।
ইতি
তোমার বলাই














সর্বশেষ সংবাদ
সাবেক এমপি কালামের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক
জুনায়েদের নির্বাক চোখ মাকে খুঁজে বেড়ায়!
বুড়িচং সীমান্ত দিয়ে ভারতে মানব পাচারের সময় বিজিবির হাতে আটক ৫
চাউলের অবৈধ মজুদের অভিযোগে কুমিল্লায় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান
১২ দিন পর মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
চট্টগ্রাম থেকে বাস চুরি করে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলো ঢাকায়
টিপুকে শীঘ্রই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে দেখতে পাবো: আসিফ আকবর
কুমিল্লা জেলা ইয়োগা এসোসিয়েশনের প্রথমসাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
কুমিল্লায় তিন মামলা থেকে খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি
৮ আসামি কারাগারে, স্বীকারোক্তি দেননি বাচ্চু মেম্বার
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: newscomillarkagoj@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২