বাকশক্তিহীন
জুনায়েদ।মুরাদনগর তিন খুনের ঘটনায় নিহত হওয়া জোনাকির ছেলে।কুমিল্লার চিপ
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গনে রবিবার এসেছে খালামনির রিক্তার
সাথে।তখন রিক্তার কান্নায় আদালত প্রাঙ্গণ ভারি হয়ে উঠেছে।গণমাধ্যম কর্মীরা
ক্যামেরা তাক করে রেখেছে তাদের দিকে।জুনায়েদের অবুঝ মুখ যেনো কিছুই বুঝতে
পারছেনা।খালামনির গা জড়িয়ে ফেল ফেল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।নির্বাক ঠোঁট
যেনো কিছু একটা বলতে চায়, তবে বলতে পারছেনা;কিভাবে বলবে সে যে কথা বলতে
অক্ষম।কিন্তু তার টলটলে দু' চোখ যেনো কিছু একটা টের পেয়েছে।আতঙ্কিত চোখের
শব্দ যেনো স্পষ্ট ভাষায় তার মাকেই খুঁজে বেড়ায়।কিন্তু মা কোথায়?
জুনায়েদ
জানে তার মা আইসিওতে। এখনো বেঁচে আছে।চিকিৎসা নিচ্ছে।খালামনি ও আত্মীয়
স্বজনরা তাকে তাই বুঝিয়েছে।কি নির্মমতার শিকার এই শিশুটিও! বয়স আট কি নয়
হবে ছেলেটির।তার সামনেই গ্রামের মানুষ পিটিয়ে প্রিয় মা কে মেরে ফেললো।নানির
চোখ তুলে নিলো, মামাকে কুপিয়ে হত্যা করলো।কতোটা ভয়ংকর চিত্রের সাথে তাকে
পরিচয় করিয়ে দিল সমাজ।কি ধারণা হবে তার এ সমাজের মানুষ সম্পর্কে?
অথচ
শিশুটি আজ মায়ের কোলে গল্প করার কথা ছিল।মাকে জড়িয়ে তার আদর খাওয়ার সময়
ছিলো।মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেত, স্কুল থেকে ফিরে মা ঘুম পাড়ানি মাষি-পিষির
গান গেয়ে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিত!কিন্তু সবকিছুই যেনো আজ নিস্তব্ধতায় ছেয়ে
গেছে।সে বড় হবে,আলোকিত মানুষ করার স্বপ্ন হয়তো মা দেখেছিল। কারণ পৃথিবীর
খারাপ মা-বাবারও স্বপ্ন থাকে তার সন্তান মানুষের মত মানুষ হবে,অনেক বড়
হবে,সন্মান কামিয়ে দেশ ও পৃথিবীর মানুষকে জয় করবে!কিন্তু আজ সব ধূলিসাৎ হয়ে
গেলো।মব যে কতোটা ভয়ংকর রূপ নেয় তা এ শিশুর মা-মামা-নানির নৃশংস মৃত্যু
দিয়েই আলোড়ন হল।
জুনায়েদের খালামনি তাকে দু'হাতে জড়িয়ে রেখেছেন।অশ্রুপাত
হওয়া দু'চোখ যেন রিক্তার থামছেইনা।মুঠোফোনের গ্যালারি থেকে ঘটনার দিনের
ছবিগুলো দেখিয়ে দেখিয়ে বিবরণ দিচ্ছেন।কি বীভৎস মৃত্যু;কি জঘন্য মানুষের
প্রতিচ্ছবি।কি মহাঘৃণ্য মানুষের কর্ম;মানুষের হাতেই মানুষ খুন!
রিক্তা
আক্তারের আহাজারি কোন রকমই থামছেনা।চিৎকার করে বলছেন আমার বোইন পুত এখনো
জানে তার মা বেঁচে আছে।বোবা মুখে আকার ইজ্ঞিতে সে শুধু তার মাকেই
খুঁজে।সারাক্ষণ মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে ।কিন্তু তাকে মিথ্যে বলে শান্তনা
দিচ্ছি!তার মা'কে ছাড়া বোইন পুত কিভাবে বাঁচবে?বোইনপুত কাকে মা ডাকবে?
বিকেলের
আকাশ ঘন মেঘে ঢেকে যাচ্ছে।সাদা মেঘের আনাগোনা দখল করে নিচ্ছে কালো মেঘ।এই
বুঝি নামবে অঝোর বৃষ্টি!না নামবে না, কারণ আকাশের চোখে বৃষ্টি নেই।রিক্তা
৪জুলাই থেকে কাঁদতে কাঁদতে চোখের অশ্রুও শুকিয়ে গেছে।
আমি চেয়ে আছি
দু'হাতের আদরে জড়িয়ে থাকা জুনায়েদের মুখে।গভীরভাবে তাকেই দেখছি।হৃদয় দিকে
তার সারা মুখ পড়ছি;তার কোমল চোখের অবুঝ ভাষা টলমল করছে;নির্বাক চোখ যে
মাকেই খুঁজছে, সেটা উপলব্ধি করারও বাকি থাকলোনা!খুনিদের বিচার হবে,কেউ কেউ
হয়তো ছাড়া পেয়ে যাবে,আবার হয়তো কেউ ফাঁসিতেও ঝুলবে।
কিন্তু, জুনায়েদের মাকে এনে দেবে কে?