দিন
কয়েক আগে আমাদের দুই কন্যাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছি। উদ্দেশ্য হলো
তাদের আম গাছ, পাখি ও প্রকৃতি দেখাবো ও চেনাবো। কিন্তু সাড়ে চার বছর বয়সী
বড় কন্যা বেঁকে বসেছে। সে তার মাকে ছাড়া কোনোভাবেই আমার সঙ্গে যেতে চায় না।
গোসসা করে দাঁড়িয়ে আছে আমার পাশে। ঠিক তখনই পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন মধ্য বয়স্ক
এক ব্যক্তি। সম্পর্কে তিনি আমার চাচা হন। পেশায় সরকারি চাকুরে।
আমাদের
বাবা-কন্যার একরকম যুদ্ধ দেখে, মেয়ের রাগ, বয়সের তুলনায় গভীর
ব্যক্তিত্বপূর্ণ আচরণ দেখে তিনি আমাকে কিছু পরামর্শ দিয়ে বসলেন। তার আগে
তিনি জানালেন, আমার মেয়েটি কিছুটা বেয়াড়া কিসিমের হয়েছে। তাই মেয়েকে
ডাক্তার দেখাতে হবে। ডাক্তার দেখালেই মেয়ে আমাদের কথামতো চলবে। আচরণ ঠিক
হবে। তার এই পরামর্শ আমাকে গভীর ভাবনায় ফেলে দেয়। কারণটি আমাদের কন্যার
সমস্যা নয়। বরং আমার সেই চাচার মানসিকতা, ভাবনা, চিন্তা ও বিশ্বাসের
জায়গাটি।
পরদিন ছোটবেলার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা মোটরসাইকেল মেকানিকের
দোকানে। দোকানের সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা আছে ‘বাইক ডক্টর’। রাজধানী ঢাকা
শহরেও বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়েছে ‘কার ডক্টর’, কিংবা ‘কার ক্লিনিক’,
‘মোবাইল ক্লিনিক’।
সম্প্রতি ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এই দুটি
অভিজ্ঞতা আমার চিকিৎসা ও সমাজ ভাবনার বুদবুদকে বেশ তীব্র করে। সেই বুদবুদকে
সংযুক্ত করেই এই লেখাটি। এখানে দেখানো হবে যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে
সমাজে ও স্বাস্থ্য খাতে মেডিক্যালাইজেশন আমাদের প্রতিদিনের ভাষা ও
অভিজ্ঞতায় ঢুকে পড়েছে কীভাবে, এর ক্রিয়াশীলতার মাত্রা ও ধরন এবং প্রভাবের
জায়গাটি।
মেডিক্যালাইজেশন ও তার প্রভাব
একটু চোখ-কান খোলা রাখলে;
গভীরভাবে খেয়াল করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন আমাদের সমাজে চিকিৎসাবিজ্ঞানের
শব্দের রূপক বা রূপান্তরিত ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এগুলোকে ‘মেডিক্যালাইজড
ভাষা’ বা মেডিক্যাল মেটাফর হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। আর পুরো প্রক্রিয়াটিকে
বলা যেতে পারে মেডিক্যালাইজেশন। এটি একটি জটিল সামাজিক-সাংস্কৃতিক
প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় চিকিৎসাবহির্ভূত সমস্যা বা পরিস্থিতিগুলোকে ক্রমশ
চিকিৎসাবিজ্ঞানের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এর ফলে সেগুলোকে চিকিৎসা সংক্রান্ত
বিষয় হিসেবে সংজ্ঞায়িত, অনুধাবন ও চিকিৎসা করা শুরু হয়। এটি প্রায়ই একটি
বায়োমেডিক্যাল মডেলের প্রয়োগকে অন্তর্ভুক্ত করে। যা রোগ, ব্যক্তিগত
অসুস্থতা ও প্রযুক্তিভিত্তিক সমাধান খোঁজাকে উৎসাহিত করে। ফলে প্রায়ই
স্বাস্থ্য বা অসুস্থতার সামাজিক, পরিবেশগত বা রাজনৈতিক কারণগুলো উপেক্ষিত
হয়।
মেডিক্যালাইজেশনের একটি প্রধান প্রভাব হলো- স্বাভাবিক মানবীয় আচরণ,
অনুভূতি ও অভিজ্ঞতাগুলোকে চিকিৎসাজনিত সমস্যায় রূপান্তর করা। এর ফলে সাধারণ
জীবনঘটনা, যেমন- দুঃখ, বার্ধক্য, বা শিশুর দুষ্টুমি- এসবকেও মানসিক বা
শারীরিক রোগ হিসেবে দেখা হয় এবং চিকিৎসা বা ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের
চেষ্টা করা হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত রোগ নির্ণয় ও
চিকিৎসা, ব্যক্তিগত বা সামাজিক দায় এড়ানো। কারণ সব কিছু ‘রোগ’ হিসেবে
ব্যাখ্যা করা হয়। ব্যক্তিকে কলঙ্ক বা লেবেলিং করা হতে পারে। কারণ মানুষকে
শুধুই রোগীর দৃষ্টিতে দেখা হয়। আর এই মেডিক্যালাইজেশনের প্রক্রিয়ায়
গুরুত্বপূর্ণ এবং কখনও কখনও বিতর্কিত ভূমিকা পালন করে। তারা এমন সব সচেতনতা
তৈরি করে যা অনেক সময় সাধারণ উপসর্গকেও বড় ধরনের রোগ হিসেবে তুলে ধরে,
যাতে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয় এবং ওষুধের চাহিদা বাড়ে। অনেক সময়
চিকিৎসাবিদদের সম্মেলন, গবেষণা এবং চিকিৎসা নির্দেশিকা স্পন্সর করে, যা
রোগের সংজ্ঞা বা চিকিৎসা পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। এছাড়া সরাসরি ভোক্তাদের
কাছে বিজ্ঞাপন প্রচার করে। এতে সাধারণ মানুষ নিজে থেকেই নির্দিষ্ট ওষুধ
চেয়ে চিকিৎসকের কাছে যায়, যার ফলে অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারের
প্রবণতা বাড়ে।
অন্যদিকে বিভিন্ন কায়দায় রোগের সংজ্ঞা বাড়ানো ব্যস্ত
থাকে। রোগের পরিধি এমনভাবে বাড়ায় যাতে আরও বেশি মানুষ সেই রোগের আওতায় পড়ে
এবং ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশে মেডিক্যালাইজেশনের প্রক্রিয়া
মেডিক্যালাইজেশনের
প্রক্রিয়া বহুমাত্রিক এবং বিভিন্ন স্তরে এটি পর্যবেক্ষণ করা যায়। সাধারণ
জীবন ঘটনাকে চিকিৎসা শর্ত হিসেবে পুনঃসংজ্ঞায়িত করা হয়। সমাজে
চিকিৎসাবিজ্ঞানের শব্দের রূপকগুলো অনেকটাই প্রতীকী, কৌতুকপূর্ণ বা পেশাগত
গৌরবের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন, গাড়ি মেকানিকের দোকানকে অনেক সময় ‘কার
ডক্টর’ বলা হয়। এখানে ‘ডক্টর’ শব্দটি গাড়ির সমস্যা নির্ণয় ও সমাধানের
ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের ভূমিকার সঙ্গে সাদৃশ্য বোঝায়। অন্যদিকে ক্রিকেটে
যখন কোনও ব্যাটসম্যান খুব নিখুঁত, কার্যকর এবং ত্রুটিহীন শট খেলেন, তখন
সেটাকে বলা হয় ‘ক্লিনিক্যাল শট’। এখানে ‘ক্লিনিক্যাল’ শব্দটি নির্ভুলতা ও
দক্ষতার অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই দক্ষতাকে একজন চিকিৎসকের নিখুঁত রোগ নির্ণয়
দক্ষতার সঙ্গে তুলনা করা হয়। আর ‘প্রেসক্রিপশন’ শব্দটি সাধারণত ওষুধের
নির্দেশিকার জন্য ব্যবহৃত হলেও, অনেক সময় এটিকে কোনও সমস্যা সমাধানের জন্য
বিস্তারিত নির্দেশনা বা পরামর্শ অর্থেও ব্যবহার করা হয়।
যেমন, ‘এই
সমস্যার সমাধান করার জন্য একটি সুস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন দরকার।‘ এছাড়াও বলা
“বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন মেনে সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।” এছাড়া রোগ
নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ডায়াগনোসিস শব্দটি। তবে কোনও সমস্যার মূল
কারণ খুঁজে বের করা বা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার দেখা যায়। যেমন,
‘আমাদের দলের পরাজয়ের সঠিক ডায়াগনোসিস করা প্রয়োজন।‘ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে
‘ভাইরাস’ শব্দটি বহুল প্রচলিত, যা কম্পিউটারের কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে।
এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ‘ভাইরাস’ শব্দের মতোই, যা মানবদেহের ক্ষতি করে। আর
অপারেশন শব্দটি সাধারণত অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও, কোনও জটিল
কাজ বা গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয়।
যেমন, ‘আমাদের এই প্রজেক্ট সফল করার জন্য একটি বড় অপারেশন দরকার।‘ অন্যদিকে
চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় থেরাপি শব্দটি। তবে মানসিক বা অন্য
কোনও সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পরামর্শ বা সহায়তা অর্থেও এর ব্যবহার
আছে। যেমন, ‘তার মানসিক শান্তি ফিরে পাওয়ার জন্য কিছুটা থেরাপি প্রয়োজন।
রোগের লক্ষণ বোঝাতে ব্যবহৃত হয় সিম্পটম। তবে কোনও সমস্যার প্রাথমিক ইঙ্গিত
বা লক্ষণ বোঝাতেও এটি ব্যবহার করা হয়। যেমন, ‘অর্থনৈতিক সংকটের প্রথম
সিম্পটম দেখা যাচ্ছে। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া
ধ্বংস করে। তবে কোনও খারাপ বা ক্ষতিকারক প্রবণতা দূর করার জন্য
‘অ্যান্টিবায়োটিক’ শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়। যেমন, ‘দুর্নীতির
বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক দরকার।’
এছাড়াও বাংলাদেশের
প্রেক্ষাপটে দৈনন্দিন জীবনে চিকিৎসাবিজ্ঞানের শব্দের ব্যবহারকে কয়েকটি
বর্গে ভাগ করা যায়। যেমন, পেশাভিত্তিক রূপক বা নামকরণে মেডিক্যাল শব্দের
ব্যবহার; খেলাধুলা ও পারফরম্যান্সে মেডিক্যাল শব্দের ব্যবহার; সাংস্কৃতিক,
মিডিয়া ও কথ্য ভাষায় মেডিক্যাল শব্দের রূপান্তর; বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ডিংয়ে
মেডিক্যাল শব্দের ব্যবহার; এবং রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতিতে মেডিক্যাল রূপক।
পেশাভিত্তিক রূপক বা নামকরণে মেডিক্যাল শব্দের ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে ‘কার
ডক্টর’, ‘কার ক্লিনিক’ ‘ফ্রিজ ডক্টর’, ‘কম্পিউটার ডক্টর’, ‘মোবাইল ডক্টর’,
‘সাউন্ড ডক্টর’, ‘সাউন্ড ইঞ্জিন ডক্টর’, ও ‘ফ্যান ডক্টর’।
‘কার ডক্টর’
শব্দটি গাড়ি মেকানিকের দোকানে প্রচুর ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঠিক
চিকিৎসকের মতো গাড়ির সমস্যা শনাক্ত করে ও ঠিক করে দেওয়াকে নির্দেশ করো
হচ্ছে। অন্যদিকে রেফ্রিজারেটর বা এসির মেকানিককে ডাকা হচ্ছে ফ্রিজ ডক্টর
নামে। আর হার্ডওয়্যার টেকনিশিয়ান বা সফটওয়্যার স্পেশালিস্টকে বলা হচ্ছে
কম্পিউটার ডক্টর। এছাড়া মোবাইল সার্ভিসিং টেকনিশিয়ানকে বলা হচ্ছে মোবাইল
ডক্টর। সাউন্ড সিস্টেম বা গানের যন্ত্রাংশ ঠিক করা ব্যক্তিকে ডাকা হচ্ছে
সাউন্ড ডক্টর বা সাউন্ড ইঞ্জিন ডক্টর। বৈদ্যুতিক ফ্যান মেরামতকারী হলেন
ফ্যান ডক্টর।
অন্যদিকে খেলাধুলা ও পারফরম্যান্সে ব্যবহৃত মেডিক্যাল
শব্দের মধ্যে রয়েছে ‘ক্লিনিক্যাল শট’, ‘ডেডলি বোলার’, ‘ডায়াগনোসিস করা
ম্যাচ, ‘ম্যাচের টেম্পারেচার বেড়ে গেছে’ কিংবা ‘ক্রিজে রোগী মতো পড়ে ছিল’।
ক্রিকেট বা ফুটবলে নিখুঁত, নির্ভুল, কৌশলগত শটকে বলা হচ্ছে ক্লিনিক্যাল
শট। আর ভয়ংকর বা মারাত্মক দক্ষতার বোলারকে বলা হচ্ছে ডেডলি বোলার। ম্যাচ
বিশ্লেষণ করাকে চিকিৎসা বিশ্লেষণের সঙ্গে তুলনা করে বলা হচ্ছে ম্যাচ
ডায়াগনোসিস করা। কোনও ম্যাচে উত্তেজনাকে তুলনা করা হচ্ছে জ্বর বা রোগের
সাথে। ম্যাচের টেম্পারেচার ছিল হাই। খুব দুর্বলভাবে খেলা বোঝাতে বলা হয়
ব্যাটার ক্রিজে রোগী মতো পড়ে ছিল।
এছাড়া বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ডিংয়ে
মেডিক্যাল শব্দের ব্যবহার হলো ‘স্কিন ক্লিনিক’, ‘বিউটি ক্লিনিক’, ‘হেয়ার
থেরাপি’, ‘ফিটনেস থেরাপি’, ‘স্লিমিং ক্লিনিক’, ‘ডিজিটাল হেলথ চেকআপ অফার’
ইত্যাদি। সৌন্দর্য বিষয়ক সেবা প্রতিষ্ঠানকে চিকিৎসালয় হিসেবে উপস্থাপন
হচ্ছে ‘স্কিন ক্লিনিক’ বা ‘বিউটি ক্লিনিক’ হিসেবে। চুল পড়া প্রতিরোধে
ব্যবহৃত পণ্যকে বলা হচ্ছে ‘হেয়ার থেরাপি’। ব্যায়াম ও ওজন কমানো কেন্দ্রের
নতুন উপস্থাপনা হলো ‘ফিটনেস থেরাপি’ বা ‘স্লিমিং ক্লিনিক’ হিসেবে। ব্যাংক
বা অ্যাপের অফার বোঝাতে ‘ডিজিটাল হেলথ চেকআপ অফার’ কথা বলা হচ্ছে।
আর
রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতিতে মেডিক্যাল রূপকগুলো হলো ‘রাষ্ট্রের সিস্টেম
অসুস্থ’, ‘আইনের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে’, ‘অর্থনীতির পেইনকিলার বাজেট’ ও
‘ভোটারদের মনোবিশ্লেষণ দরকার’ ইত্যাদি। সরকারের কাঠামোগত সমস্যা বোঝাতে
রাষ্ট্রের সিস্টেম অসুস্থ; সংকট মুহূর্তে আইন প্রয়োগ বোঝাতে আইনের স্যালাইন
দেওয়া হয়েছে; সাময়িক স্বস্তির বাজেট, অর্থনীতির পেইনকিলার বাজেট, ভোটের
সময় জনগণের মানসিকতা বোঝাতে ভোটারদের মনোবিশ্লেষণ দরকার ইত্যাদি।
সমাজের
বিভিন্ন স্তরে প্রচলিত এসব শব্দ ও রূপক আমাদের যাপিত জীবন, চিন্তা, ভাবনা ও
বোধে গেঁথে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ জীবন প্রক্রিয়া ও আবেগ আমরা দেখছি, চিন্তা
করছি মেডিক্যালের লেন্স দিয়ে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় সন্তান জন্মদানের কথা।
ঐতিহ্যগতভাবে যা সমাজে ধাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত একটি স্বাভাবিক
শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ছিল। এখন তা ক্রমশ প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির দিকে
সরে যাচ্ছে। প্রায়ই চিকিৎসাগতভাবে প্রয়োজনীয় না হলেও সি-সেকশনের মতো
চিকিৎসা হস্তক্ষেপের ব্যবহার বাড়ছে। এছাড়া বার্ধক্যের স্বাভাবিক
লক্ষণগুলোকেও কখনও কখনও চিকিৎসাযোগ্য শর্ত হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
বয়স-সম্পর্কিত স্মৃতিভ্রমকে প্রাথমিক ডিমেনশিয়া, হালকা বিষণ্নতাকে
ক্লিনিক্যাল ডিসঅর্ডার হিসেবে দেখার প্রবণতা বাড়ছে। শোক ও দুঃখের মতো
স্বাভাবিক মানবিক আবেগকেও একটি বিষণ্নতা রোগ হিসেবে রোগীকরণ করা হচ্ছে। যার
জন্য ওষুধের প্রয়োজন হয়।
অন্যদিকে অসংক্রামক রোগ (ডায়াবেটিস, উচ্চ
রক্তচাপ, হৃদরোগ) বৃদ্ধি পাওয়া একটি বাস্তব জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ হলেও এর
ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রায়ই আজীবন ওষুধ ও ঘন ঘন মেডিক্যাল চেকআপের ওপর
অত্যধিক নির্ভর করার প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে
সচেতনতা বাড়ার সাথে সাথে উদ্বেগ, মানসিক চাপ এবং আচরণগত সমস্যাগুলোর মতো
পরিস্থিতি ক্রমশ নির্ণয় করা হচ্ছে। ওষুধ দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রবণতা
বাড়ছে। ফলে অন্তর্নিহিত সামাজিক বা মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলো উপেক্ষা করা
হচ্ছে।
বাড়ির পাশেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিস্তার এবং উন্নত ইমেজিং
(যেমন, এমআরআই, সিটি স্ক্যান) এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষার সহজলভ্যতা প্রায়ই
অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষাকে উৎসাহিত করছে। এমনকি ছোটখাটো অসুস্থতার জন্যও
প্যাথলজিক্যাল ও ইমেজিং পরীক্ষা হচ্ছে। এটি রোগীর চাহিদা ও চিকিৎসাসেবা
প্রদানকারীদের প্রণোদনা উভয় দ্বারাই চালিত হয়। এ ছাড়া ওষুধ কোম্পানিগুলো
ভোক্তাদের কাছে সরাসরি এবং চিকিৎসা পেশাদারদের মাধ্যমে আগ্রাসী বিপণন
স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর ধারণাকে প্রভাবিত করে। ওষুধভিত্তিক সমাধানের কথা
প্রচার করে। ফলে ঐতিহ্যবাহী নিরাময় থেকে বায়োমেডিসিনের দিকে ধাবিত হচ্ছে
আমাদের সমাজ। পিছিয়ে পড়ছে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি। ঐতিহ্যবাহী নিরাময় পদ্ধতি
(আয়ুর্বেদ, ইউনানি, লোকচিকিৎসা) এখনও বিদ্যমান থাকলেও আধুনিক বায়োমেডিসিনের
প্রতি একটি ক্রমবর্ধমান পছন্দ এবং বিশ্বাস বাড়ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত শহুরে
জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অন্যদিকে বায়োমেডিসিনের মৌলিক প্রবণতা হলো ঐতিহ্যবাহী
জ্ঞান এবং অনুশীলনগুলোকে তুচ্ছ, অপ্রাসঙ্গিক ও অবৈধ করে তোলা।
বাংলাদেশে মেডিক্যালাইজেশনের কারণ ও চালিকাশক্তি
মোটাদাগে
বাংলাদেশে মেডিক্যালাইজেশনের কারণ ও চালিকাশক্তিগুলো হলো রোগের প্রকৃতির
পরিবর্তন, শহুরে এবং আধুনিকীকরণ, স্বাস্থ্যসেবার বর্ধিত প্রবেশাধিকার,
পশ্চিমা চিকিৎসা মডেলের প্রভাব, মিডিয়া এবং তথ্য প্রযুক্তি,
সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিশ্বাস ও মর্যাদা, এবং শক্তিশালী জনস্বাস্থ্য অবকাঠামো
এবং প্রাথমিক যত্নের অভাব। বাংলাদেশ একটি রোগতাত্ত্বিক রূপান্তর
প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখানে সংক্রামক রোগের পাশাপাশি অসংক্রামক
রোগের বোঝা বাড়ছে। এই পরিবর্তন আরও অত্যাধুনিক চিকিৎসা হস্তক্ষেপের
প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে। অন্যদিকে এদেশে নগরায়ণের হার বাড়ছে ব্যাপক
মাত্রায়। শহুরে হওয়ার সাথে সাথে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, তথ্যের সহজলভ্যতা
বায়োমেডিক্যাল সমাধানের চাহিদা বাড়িয়ে তুলছে। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা
অবকাঠামোর উন্নতি হলেও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের দ্রুত বৃদ্ধি একটি
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই মুনাফার
উদ্দেশ্যে কাজ করে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য উদ্যোগ এবং
চিকিৎসা শিক্ষা পশ্চিমা বায়োমেডিক্যাল মডেল দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত; যা
রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রযুক্তির ওপর জোর দেয়।
ইন্টারনেট, সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যম এবং প্রচলিত মিডিয়া স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রচারে ভূমিকা
রাখে। প্রায়ই স্বাস্থ্য এবং অসুস্থতার একটি চিকিৎসা কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি
প্রচার করে এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ায়। আবার কখনও কখনও স্বাস্থ্য উদ্বেগ
সৃষ্টি করে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে চিকিৎসা সহায়তা চাওয়া এবং একটি রোগ নির্ণয়
প্রাপ্তি একটি নির্দিষ্ট সামাজিক মর্যাদা দিতে পারে। অসুস্থতার জন্য একটি
বৈধ কারণ প্রদান করতে পারে। যা চিকিৎসাবহির্ভূত ব্যাখ্যার চেয়ে সামাজিকভাবে
বেশি সহজে গৃহীত হতে পারে। এছাড়া এ দেশে শক্তিশালী জনস্বাস্থ্য অবকাঠামো
এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অভাব প্রকট। অথচ একটি শক্তিশালী, সুসম্পন্ন
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা যা প্রতিরোধমূলক সেবা ও স্বাস্থ্য
শিক্ষার ওপর জোর দিলে মেডিক্যালাইজেশনের প্রবণতাকে কমানো যেতো। বর্তমান
ব্যবস্থা প্রায়ই মানুষকে সাধারণ সমস্যার জন্য উচ্চ স্তরের মেডিক্যালাইজড
চিকিৎসা ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দেয়।
বাংলাদেশের মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশে,
যেখানে দ্রুত আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন ঘটছে, সেখানে মেডিক্যালাইজেশন একটি
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যার বহুমুখী প্রভাব রয়েছে সমাজ ও স্বাস্থ্যের ওপর।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় সিজারিয়ান সেকশন এর কথা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
সুপারিশকৃত হারের চেয়ে বাংলাদেশে সি-সেকশনের হার বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ।
যদিও চিকিৎসাগতভাবে নির্দেশিত সি-সেকশন জীবন বাঁচায়, তবে একটি উল্লেখযোগ্য
অংশ ঐচ্ছিক বা স্পষ্ট চিকিৎসা প্রয়োজন ছাড়াই সম্পন্ন হয়। কারণ ডাক্তার এবং
বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর জন্য আর্থিক প্রণোদনা, রোগীর চাহিদা। কখনও কখনও
প্রসবের ব্যথা বা সি-সেকশন নিরাপদ এমন ধারণা থেকে। এর পরিণতি হলো মায়ের
অসুস্থতা বৃদ্ধি, পরিবারের উপর আর্থিক বোঝা বৃদ্ধি এবং মা ও শিশু উভয়ের
জন্য সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা।
এছাড়া ক্লান্তি, অলসতা বা
সাধারণ অসুস্থতার মতো অনেক অনির্দিষ্ট লক্ষণ প্রায়শই ‘দুর্বলতা’ হিসেবে
নির্ণয় করা হয়। এর জন্য মাল্টিভিটামিন, টনিক বা অপ্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা
করা হয়, যা সামাজিক, পুষ্টিগত বা মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলোর গভীর তদন্তের
পরিবর্তে ঘটে। অন্যদিকে যদিও মানসিক অসুস্থতার মোকাবিলায় এটি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। তবে সাধারণ চাপ, উদ্বেগ বা শোকের জন্য পর্যাপ্ত
মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা ছাড়াই ফার্মাকোলজিক্যাল সমাধানের ওপর ক্রমবর্ধমান
জোরকে মেডিক্যালাইজেশন হিসেবে দেখা যেতে পারে। এর পরিণতি হলো ওষুধের ওপর
অতিরিক্ত নির্ভরতা। অন্তর্নিহিত সামাজিক সমস্যাগুলোকে আড়াল করা এবং ওষুধের
সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি। এছাড়া হজমের বিভিন্ন অস্বস্তি প্রায়ই
দ্রুত ‘গ্যাস্ট্রিক সমস্যা’ হিসেবে নির্ণয় করা হয়। দীর্ঘ সময়ের জন্য
অ্যান্টাসিড বা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। খাদ্যাভ্যাস,
মানসিক চাপ বা অন্যান্য জীবনযাত্রার কারণগুলো ব্যাপক খতিয়ে দেখা হয় না।
বাংলাদেশে মেডিক্যালাইজেশনের পরিণতি
বাংলাদেশে
স্বাস্থ্য খাতে আউট-অব-পকেট ব্যয় ব্যয় অনেক বেশি। মেডিক্যালাইজেশন, বিশেষ
করে ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার অতিরিক্ত ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় প্রেসক্রিপশন এবং
সি-সেকশনের মতো হস্তক্ষেপ, ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়
উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। এছাড়া জীবনের স্বাভাবিক পরিস্থিতিগুলো চিকিৎসা
কেন্দ্রিক হয়ে উঠলে প্রচলিত সামাজিক সহায়তা ব্যবস্থা ও মোকাবিলা
পদ্ধতিগুলোর গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা কম থাকে। ঘটে সামাজিক সমস্যার
ব্যক্তিকরণ। সামাজিক সমস্যাগুলো (যেমন- দারিদ্র্য, বেকারত্ব, গার্হস্থ্য
সহিংসতা) প্রায়শই ব্যক্তিগত চিকিৎসা সমস্যায় রূপান্তরিত করা হয়। ফলে
পদ্ধতিগত সমাধান থেকে মনোযোগ সরে যায়।
জীবনের প্রশ্নে ব্যক্তি হয়ে পড়ে
ক্ষমতাহীন। চিকিৎসা পেশাদারদের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। হারায়
নিজস্ব স্বাস্থ্য ও সুস্থতা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ক্ষমতা। তবে
মেডিক্যালাইজেশন কখনও কখনও নির্দিষ্ট আচরণকে অসুস্থতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে
কলঙ্ক কমাতে পারে। কিন্তু এটি রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার সাথে যুক্ত নতুন
ধরনের কলঙ্কও তৈরি করতে পারে। ফলে স্বাভাবিক বৈচিত্র্যময়তা হারিয়ে যায়।
স্বাভাবিক মানবিক অভিজ্ঞতা বা বৈচিত্র্য যা কিছু ক্ষেত্রে ‘স্বাভাবিক’ বলে
বিবেচিত হয়, তা সংকুচিত হয়ে পড়ে। কারণ মানবিক আচরণ ও বৈশিষ্ট্যকে চিকিৎসা
শর্ত হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এর ফলে স্বাস্থ্যের বাণিজ্যিকীকরণ ঘটে।
স্বাস্থ্য একটি পণ্য হয়ে ওঠে যা কেনা ও বিক্রি করা যায়।
অতিরিক্ত রোগ
নির্ণয় এবং অতিরিক্ত চিকিৎসা অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ, চিকিৎসার
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সীমিত স্বাস্থ্যসেবা সম্পদের ওপর বোঝা বাড়াতে পারে।
বাংলাদেশে সি-সেকশনের উচ্চ হার এর একটি প্রধান উদাহরণ। প্রতিরোধমূলক
যত্নের চেয়ে নিরাময়মূলক যত্নের ওপর জোর দেওয়া হয়। আর মেডিক্যালাইজেশনের
সুবিধা প্রায়ই তাদের কাছে যায় যারা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে, যা
মানসম্মত যত্ন এবং ডায়াগনস্টিক প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে ধনী ও
দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে তোলে। জেনে-বুঝে সম্মতি, রোগীর
স্বায়ত্তশাসন ও চিকিৎসা শোষণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে যেখানে
ডাক্তার ও রোগীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা উল্লেখযোগ্য।
মোটাদাগে মেডিক্যালাইজেশন সাধারণ মানবীয় পরিস্থিতিকে চিকিৎসার আওতায় আনে।
ফার্মাসিউটিক্যাল
কোম্পানিগুলো প্রায়ই এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে নিজেদের লাভের জন্য। এর
ফলে ওষুধনির্ভরতা বাড়ে। স্বাস্থ্যসেবার বাণিজ্যিকীকরণ ঘটে- যা নৈতিকভাবে
প্রশ্নবিদ্ধ। কাজেই দেখা যাচ্ছে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত চিকিৎসাগত শব্দ ও
রূপক আমাদের চিন্তাভাবনা, ধারণা, বিশ্বাস ও আচরণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
সাধারণ মানবিক অভিজ্ঞতা বা অনুভূতিগুলোকে ‘রোগ’ বা ‘অসুস্থতা’ হিসেবে
বর্ণনা করা হলে মানুষ নিজেদের ও অন্যদের সম্পর্কে ভিন্নভাবে ভাবতে শুরু
করে। এই ধরনের ভাষা আমাদের বিশ্বাসকে প্রভাবিত করে যে প্রতিটি সমস্যারই
একটি ‘মেডিকেল সমাধান’ আছে, যা ওষুধ বা থেরাপির মাধ্যমে পাওয়া যাবে।
ফলে
আমরা সামাজিক বা ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোর মূল কারণগুলো খুঁজে বের করার বদলে
কেবল উপসর্গগুলোর চিকিৎসা করি। এটি আমাদের আচরণেও পরিবর্তন আনে; আমরা হয়তো
সামান্য শারীরিক অস্বস্তি বা মানসিক চাপের জন্য দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন
হই, যা আগে স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হতো। এই ‘মেডিক্যালাইজড’ ভাষা ব্যক্তি ও
সমাজের ওপর এক অদৃশ্য প্রভাব ফেলে, যা স্ব-ধারণা, অন্যের প্রতি সহানুভূতি
এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের পদ্ধতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে।
লেখক:
জনস্বাস্থ্য ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র লেকচারার, মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড
জার্নালিজম বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)।