২১ জুন ২০২৫ খ্রি. শনিবার
কুমিল্লা ক্লাব মিলনায়তনে নীলাভ্র ফাউন্ডেশনের ৩য় বর্ষপূতি উদযাপন উপলক্ষে
ড. আলী হোসেন চৌধুরী শিক্ষাবৃত্তি-২০২৫ প্রদান, নীলাভ্র বই-এর মোড়ক
উন্মোচন, স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মাননা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সামগ্রী ও
সার্টিফিকেট প্রদান, বৃত্তি অর্জনকারীদের সার্টিফিকেট ও বৃত্তি প্রদান এবং
বিগত বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। উল্লেখ্য, নীলাভ্র
ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী। সংগতকারণেই জানতে
ইচ্ছে করে এই ‘নীলাভ্র’ ব্যক্তিটি কে ? নীলাভ্র ড. আলী হোসেন চৌধুরীর
কনিষ্ঠ পুত্র, ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরীর ছোট ভাই। পরিবারের কনিষ্ঠজনের নামে
ফাউন্ডেশন কেন ? এ এক অসহনীয় বেদনার ইতিহাস। আর এই ইতিহাসকে ধরে বাখবার
জন্য ফাউন্ডেশন।
ড. আলী হোসেন চৌধুরী আমার স্নেহভাজন আপনজন। নানাভাবেই
আমাদের মধ্যে মেলবন্ধন। এ সূত্রে পারিবারিক পরিমণ্ডলেও ঘনিষ্ঠজন। এটা ভিন্ন
ইতিহাস।
সংক্ষেপে বলি নীলাভ্র প্রচণ্ড অভিমানে আত্মহননের পথ বেছে নিয়ে
আমাদের অন্তরাত্মাকে আঘাত দিয়ে গেছে। তার অভিমান সমকাল এবং সমকালীন নানা
অনুষঙ্গ। নানাভাবে ভেবেছি। একবার মনে হয়েছে- আধুনিক জীবনচর্চায় যখন
প্রতিযোগিতায় মানুষ আত্মগত অবস্থানকে ঠিক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে না, তখন
একধরনের অভিমান হয়। আবার কেউ যদি নির্মল বিশ^াসকে অবহেলা ও উপেক্ষা করে
সরল-সহজকে জটিল করে তুলে, তখনও অভিমান হয়। আত্মগত যাপিত স্বপ্ন যখন কোনা
কারণে ভেঙে যায় এবং উজাড় করা সম্বলটি অবমূল্যায়িত হয়, তখনও অভিমান হয়।
নীলাভ্র- এর অভিমান কি ছিল তা আমার জানা নেই। একজন যুবক প্রতিযোগিতায় হেরে
যাবে, তা মানবো কীভাবে। সুতারাং নীলাভ্র চলে গিয়ে যেমন আমাদেরকে অনেক
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হচ্ছে, আবার তার অনুপস্থিতি হতাশও করছে। সত্যটা হলো-
নীলাভ্র এখন আমাদের প্রত্যক্ষ দৃষ্টপটে নেই। কিন্তু ড. আলী হোসেন চৌধুরী,
যাকে আমার আপন-অন্তরে আদর্শিক সহযোগী হিসেবে জানি এবং তার স্ত্রীকে
ছোটবোনের মতো জানি, সেখানে সান্ত্বনা কোথায় ? মহাভারতে একটি প্রশ্ন ও তার
উত্তর এভাবে উল্লেখ আছে-বকরূপী যক্ষ যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করেছিলেন- ‘জগতে
সবচেয়ে ভারী বস্তু কি ?’ যুধিষ্ঠির উত্তর দিয়েছিলেন-‘পিতার কাঁধে পুত্রের
লাশ।’ আর ব্যাখ্যা চলে না। তাই আলী হোসন ও তার সহধর্মিণীকে সান্ত্বনা দেবার
ভাষা আমার জানা নেই। আমি, আমরা সমব্যথী।
ড. আলী হোসেন চৌধুরী ও তার পরিবার তো নীলাভ্রকে হারাতে চায়নি। এজন্যই ফাউন্ডেশন। নীলাভ্র কোথায় ? নীলাভ্র আছে।
রবীন্দ্রনাথের ‘কল্পনা’ কাব্যগ্রন্থে ‘মদনভস্মের পর’ কবিতায় লিখেছেন-
‘পঞ্চশরে দগ্ধ করে করেছ একি সন্ন্যাসী,
বিশ^ময় দিয়েছ তারে ছড়ায়ে।
ব্যাকুলতর বেদনা তার বাতাসে উঠে নিশ^াসি,
অশ্রু তার আকাশে পড়ে গড়ায়ে।।’
প্রসঙ্গ
ভিন্ন। বেদনা এবং অশ্রুবিসর্জন সমধারায় প্রবাহমান। নীলাভ্র আজ সর্বত্র।
কীভাবে তাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়, এজন্যই ফাউন্ডেশন। নীলাভ্র বেঁচে থাকলে যা
করত, ফাউন্ডেশন স্থাপন করে পরিসরটা বাড়িয়ে দিয়েছে- নানামুখিনতায়।
শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, আর্তমানবতা সেবায় নানা কার্যক্রম, সমাজের হতদরিদ্রের
পাশে থাকা, চিকিৎসাসেবা প্রদান ইত্যাদি। ফাউন্ডেশনের প্রতি কাজে নীলাভ্র
নেপথ্যে থেকে যেন করে যাচ্ছে। এভাবেই তো সমাজ এগিয়ে যায়, মানবসমাজ একটি শুভ
অবস্থানে এসে দাঁড়ায়।
আমার খুবই ভালো লাগছে- নীলাভ্র-রা যে অভিমান নিয়ে
পরাজিত, আপনজনেরা সেখানে তাকেই বেশি করে হ াজির করার প্রয়াস নিয়ে আলোর পথে
আহবান জানিয়ে বলেন-
‘দীর্ঘ জীবনপথ, কত দু:খতাপ, কত শোকদহন
গেয়ে চলি তবু তাঁর করুণার গান।
খুলে রেখেছেন তাঁর অমৃতভবনদ্বার-
শ্রান্তি ঘুচিবে, অশ্রু মুছিবে, এ পথের হবে অবসান।’
না, নীলাভ্র হারিয়ে যায়নি, যাবে না। নীলাভ্র, তোমার জন্য প্রার্থনা।