মাসুদ পারভেজ।।
রথারোহন,
শুভ আরতি ও কীর্তনসহযোগে ভক্ত সমাবেশ এবং বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় কুমিল্লায়
রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসব ঘিরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় হিন্দু
সম্প্রদায়ের হাজারও মানুষ অংশগ্রহণ করেন। শিশু থেকে নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধ সকল
বয়সী মানুষ নেচেগেয়ে উৎসবটি উদযাপন করেন। হিন্দু রীতি অনুযায়ী তিনটি আলাদা
রথে চড়ে জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রাদেবী জগন্নাথপুর শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের
মন্দির থেকে ঠাকুরপাড়া শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ গৌর নিতাই মন্দিরে বেড়ানোর
উদ্দেশ্যে রওনা করেন। এ রথযাত্রা উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর
জগন্নাথপুর শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে বিশাল শোভাযাত্রা শুরু হয়।
শোভাযাত্রাটি নগরীর ঠাকুরপাড়া শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ গৌর নিতাই মন্দিরে এসে
শেষ হয়। এসময় যাত্রায় বিপুল সংখ্যক নারী,পুরুষ রথ টেনে উৎসব করতে দেখো
গেছে।
ইসকন ও কুমিল্লার যৌথ আয়োজনে এ রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে কুমিল্লা
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিল পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোড়ে
মোড়ে নজরদারিতে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। সঙ্গে বিশৃঙ্খলা এড়াতে নিয়োজিত ছিলো
বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী।
এদিকে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসব
উপলক্ষে শোভাযাত্রার পূর্বে আয়োজিত ভক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য
রাখেন, বিএনপির চেয়াপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াছিন।
বক্তব্যে
তিনি বলেন, কুমিল্লার মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সম্পর্কে
হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। সেই সম্প্রীতি ও সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট
করার চেষ্টা করা হয়েছে গত কয়েক বছর আগে। সেটি একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছিল।
তারা চেষ্টা করেছিল সারা বাংলাদেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে স্বার্থ
হাসিলের জন্য। কিন্তু সচেতন কুমিল্লার মানুষ সেটি প্রতিহত করেছে। আমরা
বিশ্বাস করি অতীতের মতো ভবিষ্যতেও যদি আমরা সচেতন ও এক থাকি, আগামী
প্রজন্মকেও যদি একই ভাবে তৈরি করতে পারি তাহলে এই সম্প্রীতির সম্পর্ক কেউ
নষ্ট করতে পারবে না। তাই আমাদের এই সম্প্রীতির শহর কুমিল্লাকে শান্তিপূর্ণ
রাখতে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এক থাকতে হবে এবং এক থাকতে পারলেই
আগামীর প্রজন্মকে সুন্দর একটি কুমিল্লা উপহার দিয়ে যেতে পারবো।
হাজী
ইয়াছিন আরও বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মই মানবকল্যাণের কথা বলেছে। এমন কোন
ধর্ম খুঁজে বের করা যাবে না যে ধর্মে অন্যায়,অবিচারকে প্রশ্রয় দিয়েছে।
উপাসনালয় ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু সকল ধর্মের লক্ষ্য একটাই পৃথিবী ও
মানবসভ্যতা ও আগামী প্রজন্মের কল্যাণ এবং পৃথিবীকে সুন্দর করা। তারপরও কেন
ধর্মকে নিয়ে বাড়াবাড়ি হয়।
সমাজে কিছু ধান্দাবাজ লোক আছে, ওই
ধান্দাবাজরা তাদের ধান্দা চরিত্রাপ্ত করার জন্য হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ,
খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে ধান্দাবাজ লোক গুলোর কোন না কোন স্বার্থ থাকে।
আন্তর্জাতিক
কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) কুমিল্লার সভাপতি শ্রী সুকান্ত চক্রবর্তীর
সভাপতিত্বে ভক্ত সমাবেশে এসময় উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা
প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল
বারী আবু, সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের
পুরোহিতগণ।
অন্যদিকে এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ জুলাই ২০২৫ উল্টো রথের দিন ফের রথ ফিরে যাবে জগন্নাথ মন্দিরে ইসকনে।