ইসমাইল নয়ন।। 
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় খোসনেয়ারা বেগম নামে এক খামারির ৫টি গরুকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রোববার ( ৮ জুন ) রাত ১০টায় উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের শিদলাই ৯নং ওয়ার্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 
ভুক্তভোগী খামারি খোসনেয়ারা বেগম উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের শিদলাই ৯নং ওয়ার্ডের আনসর আলী মেম্বার বাড়ির মৃত মফিজুল ইসলামের স্ত্রী। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণপাড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খোসনেয়ারা বেগম তার মালোশিয়া প্রবাসী ছেলে কামাল হোসেনের অর্থায়নে ৭টি গরু দিয়ে খামার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এবং তার ছোট ছেলে জামাল হোসেন মিলে গরু লালন-পালন করতেন। অন্যান্য দিনের মতো ঘটনার দিন রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ৫টি গরুকে বালতিতে পানি খাওয়ান। পানি খাওয়ার আধাঘন্টার মধ্যে এক এক করে গরুগুলো অসুস্থ হতে শুরু করে। পরে স্থানীয় পশুর পল্লী চিকিৎসক নূরে আলমকে খবর দিলে নূরে আলম ঘটনাস্থলে এসে অসুস্থ গরুগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে জানান গরুগুলো বিষক্রিয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এর কিছু সময়ের মধ্যেই এক এক করে গরুগুলো মারা যায়। 
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীর গোয়ালঘরে এলোপাতাড়ি হয়ে পড়ে আছে ৫টি মরা গরু। এগুলোর মধ্যে ৩টি গাভী ও ২টি ষাঁড় রয়েছে। মরে যাওয়া গরুগুলোর মধ্যে একটি গাভীর একটি বাছুর রয়েছে। বাছুরটি বারবার মরা মায়ের কাছে ছুটে যাচ্ছে। এ যেনো এক করুণ দৃশ্য। এমন দৃশ্যে উপস্থিত সকলের মনে নাড়া পড়েছে। ভুক্তভোগী খামারির পরিবারসহ উপস্থিত সকলে এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান। 
ভুক্তভোগী খামারি খোসনেয়ারা বেগম বলেন, রোববার রাত সাড়ে ৯টায় প্রতিদিনের মতো গরুগুলোকে বালতিতে করে পানি খাওয়ানো হয়। এর কিছু সময় পর থেকে গরুগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এক এক করে মরতে শুরু করে। কে বা কারা আমাদের গরুগুলোকে বিষ দিয়ে হত্যা করেছে। আমার গরুগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য ১০ লাখ টাকা। 
তিনি বলেন, কারো যদি কোনো শত্রুতা থাকে তা আমাদের সঙ্গে, কিন্তু এই অবুঝ পশুগুলোর কী অপরাধ ! যারা এভাবে এই বোবা গরুগুলোকে বিষ দিয়ে হত্যা করেছে তাদের বুকটা কি একবারও কেঁপে উঠলো না ! আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। 
শিদলাই ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আলাউল আকবর বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অভিযোগ কে বা কারা তাদের গরুগুলোকে পানির সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়েছে। এতে চারটি গুরু মারা গেছে এবং আরও একটি গরু মরার পথে। ঘটনাটি দুঃখজনক। 
তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক ( এসআই ) আবু হাচানাত বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। আমরা অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারে সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা ভুক্তভোগী পরিবারকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দিয়েছি। প্রাণিসম্পদ অফিসের প্রতিবেদন পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইজমাল হাসান বলেন, ঘটনাটি গতকালের। গতকাল তারা আমাদের অবগত করলে আমরা পশুগুলোকে চিকিৎসা দিতে পারতাম। তবে ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি ঘটনাটি শোনার পর ঘটনাস্থলে আমাদের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মাহমুদা জাহান বলেন, আমি এই ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত। দুর্বৃত্তদের সনাক্ত করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে থাকবে ইনশাআল্লাহ।