তানভীর দিপু।।
পবিত্র
ঈদের ছুটিতে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করেও কুমিল্লা শালবন বৌদ্ধ বিহারকে
কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরতে আসছে মানুষ।
কুমিল্লা জেলার অধিবাসীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ১৪শ' বছর
পুরানো বৌদ্ধ বিহার এবং শতবর্ষী শালবনের সবুজ অরণ্য ঘুরে দেখছেন তারা।
এছাড়া নব শালবন বিহারেও দেখছেন অনেকে।শালবন বিহার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী
প্রত্নক্ষেত্র ইটাখোলা মূড়া, রূপবান মূড়া, হাতিগাড়া মূড়াসহ বিভিন্ন
স্পটগুলোতে ঘুরছে সাধারণ মানুষ।
কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় অবস্থিত
ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শালবন বিহারে স্বাভাবিক সময়ে দর্শনার্থীর
সংখ্যা ৫০০ থেকে ১ হাজারের মতো থাকলেও ঈদের ছুটিতে এই দুই থেকে আড়াই গুণ
ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এবারের ঈদের দিন শালবন বিহার বন্ধ থাকলেও ঈদের পরদিন থেকেই
এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে।তবে প্রচন্ড গরমে শিশু ও নারীদের
ভোগান্তিতে হচ্ছে বলে জানালেন দর্শনার্থীরা। এছাড়া প্রচন্ড গরমে অনেকেই
বিহার ছেড়ে আশেপাশের গাছের তলায় বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে।
ঢাকা থেকে আসা
একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আমার দুই মেয়েকে নিয়ে এই
প্রথম কোটবাড়ী শালবন বৌদ্ধ বিহার দেখতে আসলাম৷ এখানে এসে ঘুরে যেমন ভালো
লেগেছে তেমন আমার ছোট দুই মেয়ে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কেও জানতে
পেরেছে। তার মেয়ে স্কুল পড়ুয়া ইফতি আহমেদ জানান, শালবনে ঘোড়ায় চড়ে ভালো
লেগেছে। বনটা একদম ছোট। বিহারে গিয়ে দ্রুত ঘুরে বের হতে হয়েছে, অনেক গরম।
কুমিল্লার
ময়নামতিতে খননকৃত সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম
প্রধান। কোটবাড়িতে বার্ডেরকাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির
অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির
নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো হলেও
আকারে ছোট।ধারণা করা হয় যে খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম
শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি
নির্মাণ করেন। শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্র্নিমাণ পর্বের কথা জানা
যায়।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মাধুরী দেবনাথ বলেন, ঈদের ছুটিতে কুমিল্লায়
এসেছি, দুইদিন ঘুরবো। শালবন বিহারের ভালো লেগেছে। ছেলে মেয়েরা শুধু বইয়ের
পড়েছে এই বিহার সম্পর্কে, এবার তারা সামনাসামনি প্রাগৈতিহাসিক বিশাল বৌদ্ধ
মন্দিরটি দেখলো।
তবে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, শালবন বিহারের
আশেপাশে আরো যেসব বৌদ্ধ মন্দির বা বিহার রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে একটি
প্রকাশ্য সাইনবোর্ড বা রোডম্যাপ থাকলে খুব ভালো হত। আগে থেকে জানা না
থাকলে- অনেক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এসে শুধু শালবন বিহার ঘুরে চলে যায়,
আশেপাশে যে ইটাখোলা মূড়া, রূপবান মূড়া রয়েছে, তা বুঝতে পারে না।
তার
মেয়ে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নীলাঞ্জনা দেবনাথ বলেন, শালবনে এসে দেখলাম
বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কিভাবে পড়াশুনা করতেন। পূজাপাঠ করতেন। বইয়ে পড়া জিনিস
বাস্তবে দেখে ভালো লাগছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা থেকে আসা
ফরিদুজ্জামান বলেন, বিহারের ভেতরে অনেক গরম। বাচ্চাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে সবাই
তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছে। ভেতরে খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। ছায়া বসতে হলেও
দূরে যেতে হবে। তারপরও ঘুরতে আসা কারণ ঈদের পরে আর ছুটি পাওয়া যাবে না।
কুমিল্লার
শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মোঃ শাহীন আলম জানান,
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর দেখার জন্য প্রতিদিনই
দর্শনার্থীরা আসেন। বিশেষ করে ঈদ ঘিরে এখানে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ
বেশি দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। এবারও ঈদের পরদিন থেকেই ঐতিহ্যাবাহী এ
স্থানটিতে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেছে। প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার
মানুষের সমাগম ঘটছে। এবারের ঈদের প্রথম তিন দিনে টিকিট বিক্রি বাবদ ২ লাখ
৩৬ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। আশা রাখছি এ সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও একই
হারে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকবে।
এদিকে পর্যটন মৌসুমকে কেন্দ্র করে প্রত্নক্ষেত্র গুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ট্যুরিস্ট
পুলিশ কুমিল্লার পরিদর্শক হারুনুর রশিদ জানান, শালবন বিহার এলাকায়
দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও থানা পুলিশও
কাজ করছে। আমরা চেষ্টা করছি সরকারি বিনোদন কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি
বিনোদন কেন্দ্রগুলোত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রে
পুলিশের হট লাইন নাম্বার দেয়া আছে, কারো কোন অভিযোগ থাকলে তারা সেটিতে কল
করে জানাতে পারেন।