এবার
গোমতীর চরে ওষুধিগুণ সমৃদ্ধ সবজি করলার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম
পাওয়ায় খুশি চরের কৃষকরা। গত আগষ্টের বন্যায় গোমতীর চরের কৃষকরা
ক্ষতিগ্রস্থ হলেও চলতি বছর নানান সবজি চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শুরু
করেছেন তাঁরা। এ চরে বারো মাসই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ নানা জাতের সবজি চাষ হয়।
এর মধ্যে এ বছর চরে করলা চাষে আশানুরুপ ফলন হয়েছে। আকারে বড় ও দামে ভালো দর
পাওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।
সম্প্রতি কুমিল্লার বিভিন্ন
এলাকার গোমতীর চর ঘুরে দেখা গেছে, মাচায় সাদা ফুল ও সবুজ লতাপাতার নিচে
ঝুলে আছে উন্নত প্রজাতের বড় বড় করলা। কৃষকদের কেউ কেউ মাচা থেকে পরিপক্ক
করলা সংগ্রহ করে জমির পাশে স্তুপ করছেন। আবার কেউ কেউ ওজন মেপে বস্তা ভর্তি
করে পাইকারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। জমিতে পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও
করলা সংগ্রহের কাজ করছেন। জেলার মুরাদনগর, দেবিদ্বার, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া
ও সদর দক্ষিণ এলাকায় করলা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন গোমতীর চরের কৃষকরা।
চরের
কৃষকরা জানান, গত আগষ্টে গোমতীর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবে যায় চরের
সকল কৃষিজমি। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার
উপজেলার বিস্তীর্ণ কৃষি জমি। ক্ষতিরমুখে পড়ে জমিতে থাকা ফসল উৎপাদনকারী
কৃষকরা। তবে পানি নেমে গেলে অক্টোবরের শুরু থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন
তাঁরা। তিন মাসের মধ্যেই বানের পলিতে উর্বর জমি ফিরিয়ে দেয় কৃষকের ভাগ্য।
এসব জমিতে চাষ করা নানা শাক-সবজির মধ্যে করলা চাষও হাসি ফুটিয়েছে কৃষকের
মুখে।
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি
বছর কুমিল্লায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে উন্নত প্রজাতের করলা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে
শুধু গোমতীর চরে ১২০ হেক্টর জমিতে করলা চাষ হয়েছে। চরের প্রায় ২ শতাধিক
কৃষক আধুনিক পদ্ধতিতে করলা চাষ করায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায়ও
করলা রপ্তানি করা হয়। এতে এ বছর প্রায় দুই কোটি টাকা আয় করেছেন চরের
চাষীরা।
গোমতী চরের করলা চাষী বাবুল মিয়া ও বাচ্চু মিয়া বলেন, এবার
অন্য বছরের চেয়ে করলার দাম ভালো। প্রতি কেজি করলা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি
হয়েছে। আমাদের করলা বাজারের নেওয়ার ঝামেলা নেই, ক্ষেত থেকেই পাইকারেরা
সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে যায়।
দেবিদ্বারের বারেরা চরের কৃষক আবুল কালাম
বলেন, ৪০ শতক জমিতে করলা চাষ করেছি। কীটনাশক ও সার ও অন্যান্য খরচ হয়েছে
৩০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। ক্ষেতে আরও
করলা আছে আরও ৩০-৪০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করা যাবে। তিনি আরও বলেন, গত
বছর বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে জমির ফসল। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর
সে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
দেবিদ্বার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বানিন
রায় বলেন, দেবিদ্বার উপজেলা এ বছর ৩৫ হেক্টর জমিতে করলার আবাদ হয়েছে। গত
বছর ছিল ৩০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আমরা আশা করছি সামনে খরিপ-১ খরিপ
মৌসুমে করলার আরও দ্বিগুণ চাষ হবে। করলার চাষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ
হয়েছে গোমতীর চরে। গোমতীর চরের মাটি ও আবহাওয়া করলাসহ লতা জাতীয় সবজিতে সব
সময় ভালো ফলন হয়ে থাকে। কৃষকরা মাচাতে শসা চাষ করেন। শসার পর একই মাচাতে
করলা চাষ করেন কেউ লাউ ধুন্দুলও করে থাকেন। এ বছর আমাদের প্রত্যাশা ছিল
করলার একটি বাম্পার ফলন হবে এবং তাঁরা বেশ লাভবান হবেন। উপজেলা পরিষদের
অর্থায়নের আমারা রবি মৌসুমে ১০জন কৃষককে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে নিরাপদ ফসল
উৎপাদনে সহায়তা করা হয়েছে। সামনে কৃষকদের ভালো ফসল উৎপাদেনে প্রশিক্ষণের
ব্যবস্থা করার আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
কুমিল্লা জেলা
কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ আইউব মাহমুদ কালের কন্ঠকে বলেন, গোমতী
চরের কৃষকরা ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। এ বছর গোমতীর চরে ১২০
হেক্টর জমিতে করলা চাষ হয়েছে। চরের কৃষকরা আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে
নানা প্রকার সবজি চাষ করছেন। এর মধ্যে করলা অন্যতম। চরের করলাতে পুষ্টি ও
ওষুধিগুণ ভালো থাকায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি। তাঁরা করলাতে ক্ষতিকারক কোন
বিষ প্রয়োগ না করে আধুনিক পদ্ধতিতে পোকা দমন করে বিষমুক্ত সবজি চাষ করেন
বলেই এই চরের সবজি সুস্বাধু হয়। তাঁরা বিভিন্ন মৌসুুম ও অমৌসুমে করলা চাষ
করেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকেও উপজেলার
বিভিন্ন কৃষি অফিসারদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রণোদনা ও উন্নত মানের সার-বীজ
সরবরাহ করা হচ্ছে।