প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিদেশি সাহায্যের লক্ষ্য কমছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে এ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিদেশি উৎস থেকে বরাদ্দ সাধারণত আগের বাজেটের তুলনায় বেশি ধরা হয়। কিন্তু আসন্ন বাজেটে তার উল্টো ঘটছে। নতুন বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কম ধরা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি সহায়তায় লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী নয়, হবে বাস্তবভিত্তিক। চলতি অর্থবছরে এডিপির বাস্তবায়নের হার গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিদেশি সহায়তায় বরাদ্দ বাড়ালেও মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো তা কমই কাজে লাগাতে পেরেছে। অর্থাৎ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ব্যয় করার সক্ষমতায় ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রা কম ধরা হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অধীনে ৩ শতাধিক বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প রয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিপিসহ উন্নয়ন-সহযোগীদের অর্থায়নে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে পাইপলাইনে টাকার পাহাড় জমেছে।
বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে উন্নয়ন বাজেট বা এডিপি বাস্তবায়নে অর্থের অন্যতম উৎস হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগীদের দেওয়া বিদেশি ঋণ বা সহায়তা। তথ্যমতে, এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থায়নের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে প্রকল্প সাহায্যের নামে বিদেশি উৎস থেকে। বাকি টাকা সরকার তার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়। এখন পর্যন্ত পাইপলাইনে বিদেশি সহায়তা আটকে আছে প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৫ লাখ ২৪৬ কোটি টাকা; যা দিয়ে অন্তত ১৫টি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা ও অদক্ষতার কারণে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি সহায়তার লক্ষ্য ছিল ১ লাখ কোটি টাকা। তবে আলোচ্য অর্থবছরের ৯ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বিদেশি তহবিল থেকে মাত্র ৩২ হাজার ৪১১ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে; যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে খরচের পরিমাণ ছিল ৪৪ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা ছিল ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
প্রতিবছর মোট অব্যবহৃত তহবিলের কমপক্ষে ২০ শতাংশ ব্যয় হলে ধরে নেওয়া হয় প্রকল্প বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক। কিন্তু বাস্তবে এ ব্যয় ১২ থেকে ১৩ শতাংশের বেশি হয় না। যে কারণে টাকা পাইপলাইনে আটকে থাকে। প্রকল্পের নকশায় বড় ধরনের ত্রুটি থাকলেও এটি বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়ায় গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ডিপিপি অনুমোদনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া প্রকল্প আরম্ভের ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রকল্পে দক্ষ লোকবলের অভাবও পরিলক্ষিত হয়।
পাইপলাইনে টাকা আটকে থাকার কারণে বাংলাদেশে বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তাই সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি গোটা উন্নয়নব্যবস্থাকে মন্থর করে দিতে পারে। বিদেশি সাহায্য ব্যবহারে অদক্ষতার কারণে অন্তর্বর্তী সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি অবশ্যই একটি ভালো পদক্ষেপ। তবে এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে সরকারকে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি কমে আসে।