মঙ্গলবার ৬ মে ২০২৫
২৩ বৈশাখ ১৪৩২
সত্যজিৎ সাহিত্য
১০৪তম জন্মবার্ষিকীর শ্রদ্ধার্ঘ
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: রোববার, ৪ মে, ২০২৫, ১:২৮ এএম আপডেট: ০৪.০৫.২০২৫ ২:১০ এএম |


সত্যজিৎ রায় (জন্ম ২ মে ১৯২১ Ñ মৃত্যু ২৩ এপ্রিল ১৯৯২)
বহুবিধ মিডিয়ামে কাজ করেছেন তা আমরা সকলেই জানি। শুরু করেছিলেন রং-তুলি-রেখা দিয়ে, ১৯৫০ সালের পর তুলে নিলেন চলচ্চিত্রের ক্যামেরা তারপর পাশাপাশি শুরু হল তাঁর সুরসৃষ্টির কাজ আর সন্দেশ সম্পাদনার সূত্রে ছোটদের জন্য গল্প রচনা। পরিণত পাঠকের জন্য প্রবন্ধ সত্যজিৎ রায় অনেক আগে থেকেই লিখছেন, কিন্তু প্রায় কৈশোরকালে ইংরেজি ভাষায় অমৃতবাজার পত্রিকা-য় দুটি গল্প প্রকাশের ছিন্ন ঘটনার পর যাকে মৌলিক সাহিত্য সৃষ্টি বলি তার শুরু হল আরও অনেক পরে।  তাই বা বলি কী করে।  ছায়াছবির চিত্রনাট্য রচনায় মৌলিক ভাবনা ও প্রকাশের চ্যালেঞ্জ কম ছিল না। একেবারে প্রথম চিত্রনাট্যের খসড়া থেকেই সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্য রচনার মূল স্রোতটি উৎসারিত হয়েছে, একথা বললে ভুল হবে না। অনেক চলচ্চিত্রকার, যেমন ফেলিনি--ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়ে তাঁর ছবির গল্প নির্মাণ করেন বলে পড়েছি। কিন্তু সত্যজিৎ রায় শেষ পর্যন্তও তাঁদের দলে যোগ দেননি। তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণ এক ধরনের অনুবাদ বা অনুবাদের অনুবাদ। তিনি মূলত এবং সর্বতোভাবে সাহিত্যবদ্ধ চলচ্চিত্রকর । গল্প বা উপন্যাস থেকে চিত্রনাট্য এবং চিত্রনাট্য থেকে চলচ্চিত্র--এই তাঁর চিত্রনির্মাণের সাধারণ গতিপথ। হয়তো এমন হয়েছে যে দু’ একটি ক্ষেত্রে প্রথম ধাপটি বাদ গেছে, প্রথমেই তিনি তৈরি করেছেন এক মৌলিক চিত্রনাট্য, সাহিত্যের আদল ছাড়াই। তবু চিত্রনাট্যরচনার মধ্যে লেখকের ভূমিকা অনেকটাই থাকে, এবং সত্যজিৎ রায়ের বংশগত দাবি তাঁকে যে লেখক করে তুলবে, আজ পিছন ফিরে তাকিয়ে এ এক অমোঘ ও অপ্রতিরোধ্য ভবিতব্য বলেই মনে হয়। লেখক না হয়ে শেষ পর্যন্ত উপায় ছিল না সত্যজিৎ রায়ের।
এই পরিক্রমনটিকে সত্যজিৎ রায়ের আত্নবিস্তারের ইতিবৃত্ত বলা চলে। তবু তাঁর চিত্রশিল্পী সত্তার সঙ্গে তাঁর সাহিত্যকর্মেও যোগ সম্ভবত আর একটু বেশি ঘনিষ্ঠ। উপেন্দ্রকিশোর এবং সুকুমার রায় দুজনেই আর অনেক কিছু হওয়ার পাশাপাশি ছিলেন সুদক্ষ চিত্রকর এবং নিজেদের রচনাকে ইলাষ্ট্রেটর হিসেবে নিজেরাই অলংকৃত করেছেন। সত্যজিৎ রায় ও অন্যের রচনার চিত্রসহায়তা দিতে গিয়ে একদিকে যেমন চলচ্চিত্রকার হয়ে উঠেছেন, তেমনই এক সময় নিজের রচনারও ইলাষ্ট্রেটর হাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর বইগুলিতে তাঁরই আঁকা ছবি অনেক সময় তাঁর চলচ্চিত্রের কখনও প্রতিদ্বন্দ্বী কখনও আদল হয়ে উঠেছে এবং দুয়ের এক বিচিত্র সম্পর্ক রচনা করেছে। সত্যজিৎ রায় গল্প,-উপন্যাসের চিত্রালংকরণ করে নিজের ছবি আর লেখার অন্য এক ধরনের পারস্পরিকতা তৈরি করেছিলেন। বস্তুত, সত্যজিৎ রায়ের চলচিচত্রের প্রবল প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও তাঁর সেগুলি তাঁর ফেলুদার গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলির যে মূুর্তি তাঁর অসণিত পাঠকের মনে গেঁথে গেছে সেগুলি তাঁর আঁকা ছবিরই মূর্তি বলে আমাদের মনে হয়। যদিও আমরা জানি যে, চলচ্চিত্রের অভিনেতাদের ছবি তাঁর গল্পের অলংকরণকে বেশ খানিকটা প্রভাবিত করেছেন। বই সেনার কেল্লা-তে (১৯৭১) জটায়ুর যে-চেহারা ছিল তোপশের কথায়-দেখতে অত্যন্ত নিরীহ, রীতিমতো রোগা, আর হাইটে নির্ঘাত আমার চেয়েও অন্তত দু ইঞ্চি কম, সে চেহারা বদলেছে এসে একেবারে ১৯৭৬-সালে জয় বাবা ফেলুনাথ-এ। সেখানে জটায়ুর চমৎকার ভূঁড়ি হয়েছে, মাথায় চুঁলের ঘের দেওয়া পূর্ণচন্দ্রের মতো টাক, এবং সেইসঙ্গে গোঁফও গজিয়েছ্ েপরের বই ফেলুদা অ্যান্ড কোং-এ (১৯৭৭) মলাটেই দেখা দিলেন পরিচিত চেহারার অর্থাৎ প্রয়াত অভিনেতা সন্তোষ দত্তের মতো চেহারার জটায়ু। ফলে সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টিতে তাঁর ছবি ও কথাসাহিত্যেও সেই সঙ্গে তাঁর চলচ্চিত্রেও একটা অন্যান্য সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে, যার তুলনা অন্যত্র বিরল।
সাহিত্যের ভূখন্ডে প্রথম দু-চার বছর তাঁকে একটু কুণ্ঠিতভাবে পা ফেলতে দেখি। যদিও প্রাবন্ধিক সত্যজিৎ রায়ের আবির্ভাব ঘটেছে মৌলিক সাহিত্যস্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের অনেক আগেই। মৌলিক সাহিত্য রচনার বিষয়ে তিনি কি প্রথম দিকে একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন? ভাবতে আশ্চর্য লাগে, হয়তো এমন আতঙ্ককর অনুমানও জেগে ওঠে যে সন্দেশ পত্রিকা ১৯৬১ সালে নতুন করে প্রকাশিত না হলে, আর মায়ের ইচ্ছাপূরণে এবং পারিবারিক ঐতিহ্যেও পুনরুজ্জীবনে দায়বদ্ধ সত্যজিৎ রায় তার অন্যতম সম্পাদকের দায়িত্ব না নিলে, হয়তো গল্প-উপন্যাস লেখায় হাতই দিতেন না তিনি। খুবই মনোরম এক ঘটনাচক্রে সন্দেশ এর নবপর্যায়ে সম্পাদনার মমতাময় দায় তিনি তুলে নিলেন, আর তখনই তাঁর মৌলিক সাহিত্যস্রষ্টা হিসেবে স্থায়ীভাবে প্ররোচিত হওয়ার ভূমিকা তৈরি হল।
সত্যজিৎ রায়ের বাংলা ভাষায় গল্পরচনা শুরু করলেন ষাটের বছরগুলি গোড়ায়, সন্দেশ পত্রিকায়। তাঁর প্রথম কাজগুলিই বাজিমাত করার মতো সাফল্য নিয়ে এল-প্রফেসর শঙ্কু-ও (১৯৬৫) অসামান্য সব উদ্ভাবন ও কল্পবিজ্ঞানের রহস্য-সন্ধানের গল্পাবলি। এর প্রথমটি, ব্যোমযাত্রীর ডায়রি প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে তে সন্দেশ পত্রিকায়। পরের গল্পগুলি বছর তিনেকের বিরতির পর ১৯৬৪-৬৫ সালে-তে লেখা হয়ে যায়। আমরা জানি না সত্যজিৎ রায় কেন কল্পবিজ্ঞান-ভিত্তিক গল্পরচনাতেই প্রথম হাত দিলেন। পৃথক করে নেন। প্রোফেসর শঙ্কুর চরিত্রটি বাংলা সাহিত্যে এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাসে নেই। বাংলাদেশের চেনা চৌহদ্দির অনেক বাইরে, গিরিডির নষ্টালজিক নির্জনতায় আইনস্টাইনের সমপর্যায়ী এক বিজ্ঞান-সাধক-উদ্ভাবক এমন কোনো বাঙালির দৃষ্টান্ত আমাদের ইতিহাসের ত্রিসীমানায় নেই। সত্যজিৎ রায়ের অসামান্য কৃতিত্ব এই যে, এই অভূতপূর্ব এবং অভবিতব্য সম্পূর্ণ কাল্পনিক প্রায় ঈশ্বরের মতো ক্ষমতাধর এক টাকমসৃণ শুভ্র বৃদ্ধ বাঙালি বৈজ্ঞানিককে আমাদের কল্পনায় সম্ভব করে তুললেন এবং বাঙালির জন্য কল্পিত ও সমান্তরাল এক সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বস্তু হিসেবে তাঁকে নির্মাণ করলেন। দেশকালের পরিপ্রেক্ষিতে এক অবাস্তব চরিত্রের অসম্ভব আবিষ্কার ও কৃতিত্বেও কল্পকথাকে আমাদেও ইচ্ছাপূরণ ও বিশ্বাস্যতার গন্ডিতে নিয়ে আসার এ কীর্তি অবিস্বরণীয়।
ফেলুদা ও প্রোফেসর শঙ্কুর দূরত্বও দেখবার মতো। ফেলুদা প্রোফেসর শঙ্কুর মতো বাঙালির সাংস্কৃতিক-সামাজিক ধারাবাহিকতায় একেবারে অসম্ভব নয়, যদিও তার ন্যায়কোচিত গুণাবলি যথেষ্টই আছে। আর প্রোফেসর শঙ্কু মহাবিশ্বেও নানা স্তরে ও দূরত্বে ঘোরাফেরা করার সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু ফেলুদা মূলত মর্ত্যপৃথিবীর মানবসমাজেই থেকেছে। তার গল্পেও সত্যজিৎ রায় ভ্রমণকাহিনীর একটা উপাদান প্রায়ই রেখেছেন, কিন্তু তা শঙ্কুর মতো বিশ্বজাগতিক ভ্রমণ নয়। দ্বিতীয়ত, শঙ্কু-আখ্যানের শৈলী ডায়েরির, তারিখ ও ঘটনার বিবৃতি ফেলুদার কাহিনীর বিবরণ ও সংগঠনের সূত্র আলাদা। তা মূলত চেনা কাহিনীবয়ন।
সত্যজিৎ রায়ের মৌলিক সাহিত্যকর্মকে বাস্তব সমাজচিত্রণ, গোয়েন্দাকাহিনী ও ফ্যানটাসি এই তিনটি পর্যায়ে মোটামুটি ভাগ করা সম্ভব। প্রোফেসর শঙ্কুর গল্পগুলি কালক্রমের দিক থেকে প্রথমে রচিত হয়েছে, কাজেই সেগুলির বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধেই প্রথমে বলা যাক। বাঙালির নিজস্ব ইতিহাসের মধ্যে শঙ্কুকে ধরানো যায় না, তিনি এমনই এক অতিমানবিক চরিত্র। কিন্তু তাঁর চেহারা সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি বৃদ্ধের চেহারা, খানিকটা উনবিংশ শতাব্দীর ব্রাক্ষ্ম অভিভাবকদের ধরনে-ময়লা রঙ, মাথাভর্তি টাক, দাঁড়ি এবং চশমা। কখনও কখনও তাঁকে সুকুমার রায়ের বই থেকে উঠে আসা চরিত্রও মনে হতে পারে। অর্থাৎ তাঁর অতিমানবত্ব কিছু নেই। এমনকী তাঁর প্রতিবেশী অবিনাশবাবুও তাঁর অতিমানবিক প্রতিভা স্বীকার করেননি প্রথমে, পরে তিনশো তেত্রিশ টাকা সাড়ে সাত আনা দিয়ে রোবোটে রোবুকে বানিয়ে তার অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা দেখানো পরই অবিনাশবাবু শঙ্কুর বৈজ্ঞানিক প্রতিভা স্বীকার করলেন। নইলে অবিনাশবাবু তাঁকে তেমন পাত্তাই দিতেন না। এইভাবে শঙ্কুর বাইরের সাধারণ চেহারা ও তাঁর অতিমানবিক ক্ষমতার মধ্যে একটি বৈপরীত্যে দাঁড় করিয়ে সত্যজিৎ রায় এ চরিত্রটির নান্দনিক আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
শঙ্কুর গল্প যেহেতু ডায়েরি, সেহেতু তাতে ঘটনার বর্ণনা বেশি, ঘটনাহীন নিসর্গ বা মানসিক আবেগ, কল্পনা ইত্যাদিও বর্ণনা খুবই সংক্ষিপ্ত। ফেলুদার গল্পের সঙ্গে শঙ্কুর গল্পের রীতিগত তফাতের মধ্যে যেটি সকলের আগে চোখে পড়ে সেটি হল, শঙ্কুর গল্প মূলত স্মৃতিচারণ -সারাদিন যা ঘটেছে তা দিনের শেষে, বা কখনও পরদিন শঙ্কু আমাদের জানাচ্ছেন। ফলে তাঁর দেওয়া ঘটনার বিবরণ অনেক সময়েই এভাবে শুরু হচ্ছে-কার রাত্রের একটা চাঞ্চল্যকর ঘটনা এই বেলা লিখে রাখি। বা একসঙ্গে এতগুলো চমকপ্রদ ঘটনার সমাবেশে মাথার মধ্যেটা কেমন যেন সব ওলট-পালট হয়ে যায়। বা কাল রাতে একটা অদ্ভুত ঘটনা। ওদিকে ফেলুদার গল্প তোপশে লিখেছে পুরো আখ্যানটা শেষ হওয়ার পরে, অপরাধের ঘটনা থেকে অপরাধী শনাক্ত হওয়া পর্যন্ত পুরো বৃত্তান্ত ঢুকিয়ে দিয়ে। ফলে ফেলুদার গল্পে ঘটনার সঙ্গে বিকৃতকালের দূরত্ব যতটা, শঙ্কুর গল্পে, সে দূরত্ব কম। অবশ্য এই বিলম্বিত স্মরণাত্নক বিবৃতি সত্ত্বেও এমন কথা বলা যাবে না যে, ফেলুদার গল্পে বর্ণিত ঘটনাগুলির প্রত্যক্ষতা কোনো ভাবে ব্যাহত হয়েছে, শঙ্কুর ডায়েরির ছিন্ন ছিন্ন অংশে ওই প্রথম দু-একটি বাক্য পাঠকের মনকে প্রত্যাশী করে তোলে এবং তার পরেই সে শঙ্কুর অভিজ্ঞতায় তার সঙ্গী হয়। ফলে সেদিক থেকে শঙ্কুর গল্পের আবেদনও কোনো ভাবেই ফেলুদার গল্পের তুলনায় দুর্বল নয়। তা হওয়ার কথাও নয়। থিয়েটার বা ফিলমে-র  নিত্যবর্তমান কাল-যা ঘটছে তা যেন দর্শকের সামনে সেই মুহূর্তেই ঘটছে এমন অবস্থা-গল্পে উপন্যাসে নেই। গল্প-উপন্যাস মূলত অতীতের বিবরণ, পাঠক ঘটনার অনেক পরে তার কথা পড়ছেন। কিন্তু বর্ণনার কৌশলে তাও পাঠকের সামনে বর্তমান হয়ে জেগে ওঠে। সত্যজিৎ রায়ের রচনায় এই প্রত্যক্ষতা অনেক বেশি জীবন্ত। কারণ তাঁর চোখ শুধু গল্পকারের নয়, তা একাধারে চিত্রকর ও চলচ্চিত্র নির্দেশকের চোখ। ফলে ঘটনার অগ্রপশ্চাৎ ভূমিকা ও পরিণাম, ঘটনার নাটকীয় মুহূর্তে তার কাজ ও প্রতিবেশের ঘনত্ব আর তীব্রতা-সবই তিনি চমৎকার তুলে আনতে পারেন।
নাটকীয়তা সত্যজিৎ রায় খুব অনায়াসেই ধরেন শঙ্কুর নানা গল্পে, ফলে শঙ্কুর গল্পে প্রত্যক্ষতা ও দূরত্বের একটা বুনোট তৈরি হয়। লেখক ঘটনা থেকে একটু দূরে পৌঁছে ঘটনাকে স্মরণ করেন, আবার তার পরেই পাঠককে প্রায় হাতে ধরে সেই তীব্র নাট্যসংঘাতপূর্ণ ঘটনার দর্শক করে তোলেন । ডায়েরির প্রকরণের মধ্যেই যে ধারাবাহিকতার ছেদ ঘটানোর অবকাশ আছে, তা বজায় রেখেও সত্যজিৎ রায় শঙ্কুর কাহিনী বয়নে বিশেষ দক্ষতা দেখান, আগের অংশের সুতো পরের অংশে তুলে নিয়ে, ঘটনার চমৎকারিত্ব ও অভাবনীয়তার সবটুকু রস নিষ্কাশন করে। শঙ্কুর গল্পগুলিতে স্পেস ও টাইমের অবশ্যই বিশাল মাত্রা আছে-সময়ের দিক থেকে কোচাবাথার গুহার পঞ্চাশ হাজার বছরের বুড়ো কেভম্যান, কিংবা বাগদাদে চার হাজার বছর আগেকার চলচ্চিত্র-প্রক্ষেপযন্ত্র বা ফিল্ম প্রোজেক্টর যেমন আছে, তেমনই আছে স্থানমাত্রার দিক থেকে অন্য গ্রহ বা অন্যগ্রহের প্রানী। আছে বিজ্ঞানের অসম্ভব আবিষ্কার আর বিজ্ঞানকে অস্ত্র করে অভূতপূর্ব শয়তানির এক বিচিত্র পৃথিবী। আছে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া ইউনিকর্নের দল, আছে প্রাণীদেহকে সোনায় পরিণত করার কিমিয়াবিদ্যা, আছে  এমন কম্পিউটার, যে শৈশব-যৌবন-প্রৌঢ়ত্ব-বার্ধক্য পেরিয়ে জীবনকেও অতিক্রম করে যায় এবং যখন এক অপার্থিব বর্ণচ্ছটা বিকীণ করে তার দেহ সশব্দে খন্ড-খন্ড হয়ে যায়, তার ভিতরের কলকব্জা চূর্ন বিচূর্ণ হয়ে ধূলোর মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন সেই ভগ্ন¯তূপ থেকে... রক্ত-হিম করা অশরীরী কণ্ঠস্বর বলে ওঠে-মৃত্যুর পরের অবস্থা আমি জানি! এই বিচিত্র সৃষ্টি ও গতিবিধির জগৎ ও নানা অভাবনীয় রোমাঞ্চকর ঘটনা শঙ্কুর উদ্ভাবন ও বুদ্ধির সঙ্গে জবরদস্ত পাল্লা দিয়ে তাকে মুহুর্মুহু বিপদে ও সংকটে ফেলে বলেই এ গল্পগুলির তীব্র আকর্ষণ তৈরি হয়ে যায়। তবে রচনাশৈলীর দিক থেকে এ গল্পগুলি সম্ভবত তুলনায় দরিদ্র, আর অবিনাশবাবুর চরিত্রে নানা ভিরু ও বিমূঢ় কার্যকলাপের মধ্যে যে হাস্যরস আছে তাও জটায়ুর তুলনায় একটু দুর্বল। কিন্তু যাকে বলে চমৎকার। অর্থাৎ  অভাবিত ও বিস্ময়কর নানা অভিজ্ঞতা-তার এক বিপুল ভান্ডার শঙ্কুর কাহিনীগুলি।
ফেলুদার গোয়েন্দা গল্পে আমরা ফিরে আসি অনেক ছোটো এক জগতে। স্পেস-টাইম ও কল্পনার বিশাল বৈচিত্র্য এখানে নেই, নেই তাতে বিচিত্র উদ্ভাবন ও অভাবিত মহাজাগতিক ঘটনাবলি। পৃথিবীর বা বাংলার গোয়েন্দা গল্পের মূলত ক্লাসিক্যাল ধারাটিকে অনুসরণ করেই ফেলুদার আখ্যানগুলি লেখা হয়েছে। অর্থাৎ গোয়েন্দা মানুষটি অতি বিচক্ষণ হবেন, তিনি তাঁর তীক্ষè দৃষ্টি, পার্থিব বিষয়ে গভীর ও ব্যাপক জ্ঞান এবং অসামান্য বিচারশক্তির চমকপ্রদ নমুনা দেখিয়ে চারপাশের লোকেদের ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দেবেন, এবং গল্পের শেষে সকলকে একসঙ্গে জড়ো করে প্রায়ই অপরাধীর সামনেই পুরো রহস্যটা উদ্ঘাটন করে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। কোনো ডয়েল, ডরোথি সেয়ার্স, অ্যাগাথা ক্রিন্টি তাঁদের প্রধান গোয়েন্দাদের চরিত্রে কখনও কখনও সামান্য একটু বাতিকের ছোঁয়া দেন, শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় তাঁর ব্যোমকেশকে বুদ্ধিমান কিন্তু মধ্যবিত্ত বাঙালিযুবক হিসাবে খাড়া কনে, রেক্স ষ্টাউট তাঁর নিরো উলফ্কে  ভীষণ মোটা, ভোজনরসিক, বদরাগী আর আত্নম্ভরি করে তোলেন, ড্যাশিয়েল হ্যামেট থেকে অনেক মার্কিন লেখক তাঁদের গোয়েন্দাকে রাগী, গুন্ডাগোছের মুখ-খারাপ-করা মারমুখী একটা রূপ দেন। কিন্তু সত্যজিৎ রায় তাঁর গোয়েন্দাকে দিয়েছেন হিরো বা নায়কের আদল নিখুঁত চরিত্র ও শারীরিক সৌন্দর্যময়, সেই সঙ্গে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এক যুবক। ছ-ফুট, দু ইঞ্চি লম্বা, অবধারিতভাবে ফর্সা চলচ্চিত্রের নায়কের মতো, সুদর্শন, তাই বোম্বাইয়ের বোম্বেটে গল্পে মুম্বই ফিল্মের পরিচালক পুলক গোষাল তাকে নায়কের অভিনয় করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন; অতিশয় সাহসী, প্রখর দৃষ্টি-শক্তিধর, প্রচুর পড়াশোনা এবং সেই সঙ্গে যুক্তি ও ন্যায়সঙ্গত অনুমানের এক নির্ভূল যন্ত্রবিশেষ। এই হিরো-র আদলকে আরও বেশি স্পষ্ট ও উচ্চারিত করা হয়েছে আশেপাশের মানুষদের তুলনায় অনেক নিরস ও কিছুটা হাস্যকর করে দাঁড় করিয়ে। বিশেষত জটায়ুর নানা ধরনের খর্বতা ও হাস্যকর বিভ্রান্তি ফেলুদাকে আরও উজ্জ্বল ও দীর্ঘ করে দেখায়। শঙ্কুর ভিতর ও বাহিরের মধ্যে একটা বিরোধ আছে, তার বৈজ্ঞানিকের অতুলন প্রতিভা তার চেহারায় তেমন প্রকট নয়। কিন্তু ফেলুদার মধ্যে সেই বিরোধ সত্যজিৎ রায় রাখেননি।
ফেলুদার ডিটেকশনে নাটকীয়তার চেয়ে, পরিশ্রম, দৌড়োদৌড়ি, খবরাখবর সংগ্রহ এবং দূরবর্তী দুই আর দুইয়ের যোগ করার ভূমিকাই বেশি। শার্লক হোমস্ বা হেরক্যুলে পেয়ারোর মতো গ্রে সেল খাটিয়ে ঘরে বসে রহস্য সমাধান করার সুযোগ ফেলুদার কমই হয়েছে। ফলে তার গল্পগুলিতে আর একটা আকর্ষণ তৈরি হয়ে যায়, তা যেন ভ্রমণকাহিনীও হয়ে ওঠে একদিক থেকে। শুনেছি ফিলমে ক্যামেরার সামনে বস্তুকে সচল রাখা সিনেমা তৈরির একটা নীতি।  সত্যজিৎ রায় মনে হয় সেই নীতিকে ফেলুদার গল্পে কাজে লাগিয়েছেন, ফলে ফেলুদা তোপশে জটায়ু কাহাঁ কাহাঁ মুল্লুকে ঘুরে বেড়িয়েছে রহস্য সমাধানের কারণে। এই ভ্রমণরস ফেলুদার গল্পের অন্যতম এক আকর্ষণ তৈরি করে দেয়।
ফেলুদার গল্পের আর-এক আকর্ষণ হল একটা মধ্যবিত্ত ভাবনা ও বিশ্বাসের জগৎ যার সঙ্গে আমাদের ছেলেমেয়েরা শুধু নয়, তাদের অভিভাবকেরাও খুব সহজে নিজেদের শ্রেণীকে মিলিয়ে দেখতে পারে এবং স্বস্তি পায়। জ্যোতিষ, হস্তরেখাবিচার, অল্পবিস্তর অলৌকিকতা, চরিত্রগুলির একটা চেনা বাঙালি মধ্যবিত্ততাকে বহুদূর ছড়িয়ে যায়। মার্কিনি, জার্মান হিপি, অবাঙালি স্মাগলার মাছলিবাবা, মনেদি বড়োলোক ভবিষ্যদদ্রষ্টা বা অদৃষ্যদ্রষ্টা অলৌকিক ক্ষমতাশালী বালক, ম্যাজিশিয়ান, যাত্রার অভিনেতা, দলমালিক-কী নেই এসব গল্পে? ফেলুদা সাধারণভাবে দু-টি পদ্ধতিতে অপরাধীদের ধরেছে। এক, মনন ও যুক্তিবিচারের সাহায্যে, তথ্য ও সংবাদের সমর্থন নিয়ে শেষ মুহুর্তে সবাইকে চমকে দিয়ে অপরাধীর পরিচয় উদ্ঘাটিত করেছে গ্রিক ট্র্যাজেডির আনাগ্লোরিসিস-এর মতো, আবার অন্যদিকে অপরাধীর পরিচয় আগেই জেনে মূলত তার পশ্চাদ্ধাবন করেছে। দ্বিতীয়টার রোমাঞ্চ একরকম-অনেকটা ফিলমের চেজ্-দৃশ্যের মতো অনেকক্ষণ ধরে কী হয় কী হয় উত্তেজনা অনেকটা এইরকম। আর প্রথমটা ক্লাসিক্যাল গোয়েন্দা-কাহিনীর ধাঁচে, যদিও মার্কিন লেখকদ্বয় (ছদ্মনামী) এলেরি কুইনের একেবারে শেষ পঙ্ক্তিতে রহস্য উন্মোচনের ছাঁচটি সত্যজিৎ রায় মেনে নেননি।
শঙ্কু বা ফেলুদার গল্পে যেমন, সত্যজিৎ রায়ের ছোটোগল্পেও একটা ইচ্ছাপূর্বক পোয়েটিক জাসটিস শুধু নয়-বাঙালি মধ্যবিত্তের পক্ষে      সন্তোষবিধায়ক এক ধরনের মর‌্যালিষ্টিক উপসংহার এ গল্পগুলিকে চিত্তাকর্ষক করে তুলেছে। কল্পবিজ্ঞানের চেয়েও গোয়েন্দা গল্পে বেশি করে এই দৃষ্টিভঙ্গিটাই অন্তর্লীন থাকে যে, বিশ্ববিধানে একটা গূঢ় ন্যায়নীতি আছে, এখানে অপরাধ করে নি®কৃতি পাবার উপায় নেই। এই আদর্শবাদী ধারণা তাঁর গোয়েন্দা-গল্পের যেমন, তেমনই তাঁর সাধারণ ছোটোগল্পগুলিরও প্রাণ। ছোটোগল্পে আবার এই মধ্যবিত্তের ইচ্ছাপূরণ দু-তিন ধরনে। এক, সত্যজিৎ রায় অপরাধীদের শাস্তি দেন-তাঁর ফেলুদার গোয়েন্দাগিরির ছোটোগল্পগুলিতে সব ক্ষেত্রেই তাই ঘটে। দুই, তিনি দরিদ্র বা নিুবিত্ত মানবিক জগতের পক্ষে দাঁড়ান, এবং কোনো না কোনো ভাবে তার জয় দেখান।
সত্যজিৎ রায়ের ছোটোগল্পে ভূত, মানুষখেকো গাছ, প্রাগৈতিহাসিক পাখি, হাসিয়ে কুকুর, মানুষের সাপ হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি বিচিত্র ফ্যানটাসির উদ্ভাবন আছে, আছে তুচ্ছ ও অলক্ষ্যগোচর বাস্তবকে তীব্র মনোযোগের কেন্দ্রে এনে এক ধরনের অতিবাস্তবের অবতারণা-যেমন সদানন্দের খুদে জগৎ-এ। সুজন হরবোলা-র রূপকথা গল্পগুলিও সুখপাঠ্য, কিন্তু এগুলির গড়ন তত শক্তপোক্ত নয়, ইচ্ছাপূরক পরিণতির দিকে এগুলি বড়ো তাড়াতাড়ি এগিয়ে যায়।
হিউমার বা কৌতুকরস সত্যজিৎ রায়ের সব রচনারই একটি বড়ো উপাদান, যা তাঁর লেখার আকর্ষণের অন্যতম কারণও বটে। ফেলুদার গল্পে লালমোহন গাঙ্গুলি বা জটায়ুর আবির্ভাবে এ আকর্ষণ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। অবশ্য ফেলুদার নিজের মধ্যেও হিউমারবোধ যথেষ্ট, এবং সে ছোটোখাটো লেগপুলিং করতে দ্বিধা করে না। ফলে চরিত্রগুলির নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টাতেও কৌতুকরস বেশ খানিকটা জমে ওঠে। বাদশাহী আংটি-তে ফেলুদা গ্রিক বর্ণে ক্যালকাটা নামের বানান যা বলেছে তোপশে তা শুনে বলেছে বাসরে বাস। তিনটে বানান করতেই পিরিয়ড কাবার। এতে তোপশের বয়সের ও পটভূমিকার ছেলের মুখের ভাষাটিও চমৎকার তুলে এনেছেন সত্যজিৎ রায়।
সত্যজিৎ রায়ের রচনারীতির কথা নিশ্চয়ই একটু বলা দরকার। চিত্রকার বা চলচ্চিত্র-নির্মাতার মতো তিনি যে স্বচ্ছন্দে অনুপঙ্খ নির্মাণ করেন সেকথা আগে বলেছি। তোপশেকে ফেলুদা এইরকম নির্দেশ দিয়েছিলেন শেষ দিকে, নতুন চরিত্র যখন আসবে, তখন গোড়াতেই তার একটা মোটামুটি বর্ণনা দিয়ে দিবি। তুই না দিলে পাঠক নিজেই তার একটা চেহারা কল্পনা করে নেবে; তারপর হয়তো দেখবে যে তোর বর্ণনার সঙ্গে তার কল্পনার অনেক তফাত। সেই নির্দেশ মেনে তোপশে একজনের বর্ণনা দিচ্ছে-ঘরে যিনি ঢুকলেন তাঁর রং ফর্সা, হাইট আন্দাজ পাঁচ ফুট ন ইঞ্চি, বয়স পঞ্চাশ-টঞ্চাশ, কানের দুপাশের চুল পাকা, থুতনির মাঝখানে একা আঁচিল, পরনে ছাই রঙের সাফারি সুট। ঘরে ঢুকে যেভাবে গলা খাকরালেন তাতে একটা ইতস্তত ভাব ফুটে ওঠে, আর খাঁকরানির সময় ডান হাতটা মুখের কাছে উঠে আসাতে মনে হল ভর্দ্রলোক একটু সাহেবি ভাবাপন্ন।
কিন্তু যেটা বড়ো কথা তা হল, তাঁর বর্ণনার ভাষা নাগরিক লেখাপড়া জানা বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মুখের ভাষার বেশ কাছাকাছিই থাকে, কখনও এই শ্রেণীর কাছ থেকে ভাষারীতি বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দাবি করে না। বৈঠকি আড্ডায় গল্প বলার সহজ ভাষাকেই সত্যজিৎ রায় অবলম্বন করেছেন। আর সংলাপ তাঁর চলচ্চিত্রের সংলাপের মতোই যেন চরিত্রটির ভিতর থেকে উঠে আসে। বাঙালি মধ্যবিত্তের ইংরেজি-বাংলা মেশানো কথাবার্তা বর্ণনাও যে সহজ মৌখিকতাকে আশ্রয় করে থাকে তার দৃষ্টান্ত আমরা আগে দিয়েছি। আর একটি মনে পড়ছে, গোরস্থানে সাবধান-এই মহাদেব চৌধুরীর হঠাৎ ভয় পেয়ে শক্ত হয়ে যাওয়ার বিবরণ মখমল যেন হঠাৎ গথর হয়ে গেল। সত্যজিৎ রায়ের এই ভাষা পাঠককে তার সহজ চেনা জগতেই রেখে দেয় তার আত্নপ্রক্ষেপে খুব একটা অসুবিধা ঘটায় না। এ ভাষাও তাঁর গল্পের জনপ্রিয়তার একটা বড়ো সিঁড়ি।
খুব কম চলচ্চিত্রনির্দেশক এরকম সমান্তরাল আত্নপরিচয় গড়ে তুলতে পেরেছেন। পথের পাঁচারী, অপরাজিত, চারুলতদা-র স্রষ্টা অবশ্যই বিশ্বের এক অসামান্য প্রতিভা, কিন্তু যে-পাঠকসমাজ তাঁর বইয়ের সূত্রে তাঁকে প্রতিদিন ঘনিষ্ঠভাবে পড়বার সুযোগ পান, তাদের কাছে লেখক সত্যজিৎ রায়কেই অনেক বেশি কাছের প্রতিভা বলে মনে হওয়া স্বাভাবিক। রবীন্দ্রনাথের উপমান এই মানুষটি শুধু আমাদের সমৃদ্ধ করেননি, আমাদের প্রত্যেককে বিস্তার করেছেন। আমাদের দিনরাত্রিকে মূল্যবান করে দিয়ে গেছেন।














সর্বশেষ সংবাদ
‘কুমিল্লায় দানবীয় শাসন আর দেখতে চাই না’ কাজী দ্বীন মোহাম্মদ
আজ দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া
কুমিল্লায় রাতের অন্ধকারে আক্রমণের শিকারএনসিপি নেতা জুয়েল
কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
কুমিল্লা আদালতে দুই দফা দাবিতে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের কর্মবিরতি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
হাসনাত আব্দুল্লাহর উপর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লায় বিক্ষোভ
হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলা
যুবলীগ সভাপতিকে কারাগারে প্রেরণ
চৌদ্দগ্রামে আ’লীগ নেতার ছেলেসহ আটক ৩
আবরার হজ্ব এয়ার এভিয়েশনের দোয়া অনুষ্ঠান
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২